ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জয়াসুরিয়ার আরও কাছে সাঙ্গাকারা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২ মার্চ ২০১৫

জয়াসুরিয়ার আরও কাছে সাঙ্গাকারা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং স্তম্ভ কুমার সাঙ্গাকারা। সে কারণেই হয়ত আরও বেশি জ্বলে উঠেছেন তিনি। চলমান একাদশ বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় শতক হাঁকিয়েছেন সাঙ্গাকারা। দুটি ম্যাচেই কোন বোলার তাকে সাজঘরে ফেরাতে পারেননি। থেকেছেন অপরাজিত। রবিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্যারিয়ারের ২৩তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সাঙ্গাকারা এখন এককভাবে ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বাধিক সেঞ্চুরির তালিকায় চার নম্বরে উঠে এসেছেন। তার ওপরে শ্রীলঙ্কার সাবেক ওপেনার সনাথ জয়াসুরিয়া। তিনি ২৮ শতক হাঁকিয়েছেন। আর বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বাধিক রানের দিক থেকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ৩৪ ম্যাচে ১২২৫ রান করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারাকে। সাঙ্গাকারার বিশ্বকাপ রান সমান ম্যাচে এখন ১২৫৯। তবে তার ওপর আছেন অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং (১৭৪৩) ও ভারতের শচীন টেন্ডুলকর (২২৭৮)। সাঙ্গাকারার অর্জনের এ ম্যাচে স্বদেশীয় লাহিরু থিরিমান্নে শ্রীলঙ্কার পক্ষে এবং জো রুট ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানের রেকর্ড গড়েছেন। মাত্র ২৪ বছর ৬১ দিন বয়সে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে বিশ্বকাপে এখন সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান রুট। তিনি রবিবার ওয়েলিংটনের ওয়েস্টপ্যাক স্টেডিয়ামে চার নম্বরে নেমে ১০৮ বলে ১৪ চার ও ২ ছক্কায় ১২১ রান করেন। তার আগে ইংল্যান্ডের পক্ষে বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন ডেভিড গাওয়ার। তিনি ২৬ বছর ৭১ দিন বয়সে ১৯৮৩ বিশ্বকাপে লঙ্কানদের বিরুদ্ধেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। চার নম্বরে নেমে তিনি চারটি শতক হাঁকালেন এখন পর্যন্ত। এ পজিশনে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে ইতিহাসে এখন সর্বাধিক শতকের মালিক রুট। এর আগে এ পজিশনে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বাধিক তিন সেঞ্চুরি ছিল এ্যালান ল্যাম্বের। রুট শতক হাঁকানোর পথে বিশ্বকাপে পঞ্চম উইকেটে ইংল্যান্ডের সেরা জুটির রেকর্ড গড়েন ৯৮ রান যোগ করে। এর আগে ছিল ৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। ১৯৭৫ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে সে জুটি গড়েছিলেন মাইক ডেনেস ও ক্রিস ওল্ড। ইংলিশদের ব্যাটিং শেষ হওয়ার পর থিরিমান্নেও জবাব দেন লঙ্কানদের পক্ষে সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে শতক হাঁকিয়ে। তিনি ২৫ বছর ১৭১ দিন বয়সে শতক হাঁকালেন। এর আগে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বকাপ সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন উপুল থারাঙ্গা। তিনি ২৬ বছর ৩৬ দিন বয়সে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে গত বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। থিরিমান্নে ২১২ রানের জুটি গড়েন দ্বিতীয় উইকেটে সাঙ্গাকারার সঙ্গে। বিশ্বকাপে লঙ্কানদের পক্ষে যে কোন উইকেটে তৃতীয় সেরা জুটির রেকর্ড এটি। থিরিমান্নে ১৪৩ বলে ১৩ চার ও ২ ছক্কায় ১৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন। থিরিমান্নের এমন এক অর্জনের দিনেও আলো হয়ে থাকলেন অভিজ্ঞ সাঙ্গাকারা। ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে আসা এ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে এসে যেন আরও দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছেন। তিনিও শতক হাঁকান। বিশ্বকাপে এটি ছিল তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। আগে খেলা বিশ্বকাপগুলোয় একটি শতক ছিল তার। এবার টানা দুই ম্যাচেই শতক হাঁকালেন। বুড়ো হাড়ে ভেল্কিটা অন্যরকমই দেখালেন এদিন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ওয়ানডেতে নিজের হাঁকানো ২৩ শতকের মধ্যে এটিই ছিল দ্রুততম। এদিন তিনি মাত্র ৭০ বলেই শতক ছুঁয়ে ফেলেন। আগের ম্যাচেই ৭৩ বলে শতক হাঁকিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৯ রানের ইনিংস খেলে সাঙ্গাকারা ওয়ানডের সর্বাধিক রানের তালিকায় পন্টিংকে ছাড়িয়ে উঠে গিয়েছিলেন দুই নম্বরে। সেটাকে যেন আরও বাড়িয়ে নিচ্ছেন তিনি। এবার সেঞ্চুরির রেকর্ড ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন দ্রুতগতিতে। ক্যারিয়ারের ২৩তম শতক হাঁকিয়ে তিনি এখন এককভাবে চার নম্বরে। তার ওপরে আছেন শচীন (৪৯), পন্টিং (৩০) এবং স্বদেশী জয়াসুরিয়া (২৮)। এদিন মাত্র ৮৬ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১৭ রানে অপরাজিত থাকেন সাঙ্গাকারা। চলতি বিশ্বকাপে তার সঙ্গে সর্বাধিক সেঞ্চুরির প্রতিযোগিতা চলছে স্বদেশী তিলকারতেœ দিলশান, ভারতের বিরাট কোহলি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলের মধ্যে। দিলশান অবশ্য ২১ শতক হাঁকিয়ে অনেকখানি পিছিয়ে গেলেন। তবে কোহলি আর গেইল উভয়ের ওয়ানডে সেঞ্চুরি সংখ্যা ২২টি করে। এবার এ দু’জনকেই ছাড়িয়ে গেছেন সাঙ্গাকারা। বিশ্বকাপে সর্বাধিক শতক ৬ হাঁকিয়েছেন শচীন, ৫টি আছে পন্টিংয়ের। আর চারটি করে হাঁকিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলী, মাহেলা জয়াবর্ধনে, মার্ক ওয়াহ ও এবি ডি ভিলিয়ার্স। তিন শতকের মালিক সাঙ্গাকারা এখন সবাইকে ছোঁয়ার অপেক্ষায়। যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তাতে করে এ বিশ্বকাপেই সেটা করে ফেলতে পারেন তিনি।
×