ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এসএমই খাতে ঋণ- গ্রামের চেয়ে শহরে বেশি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২ মার্চ ২০১৫

এসএমই খাতে ঋণ- গ্রামের চেয়ে শহরে বেশি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আশানুরূপ বিনিয়োগের অভাবে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে থাকা সত্ত্বেও গত বছর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯১০ কোটি ১৫৫ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে এসএমই খাতে ৮৫ হাজার ৩২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ এই বছর ঋণ বিতরণ ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত বছরে মাত্র ২৫ শতাংশ ঋণ পেয়েছেন গ্রামের উদ্যোক্তারা। আর বাকি ৭৫ শতাংশ ঋণ পেয়েছেন শহরের উদ্যোক্তারা। তাছাড়া মোট ঋণের মাত্র ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তরা। রবিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৪ সালে এসএমই খাতে ৮৯ হাজার ৩০ কোটি ৯৪ লাখ টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। বছর শেষের হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার ১১৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা এর আগের বছরে লক্ষ্যমাত্রার ১১৬ শতাংশ ঋণ বিতরণ হয়েছিল। গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি- সেপ্টেম্বর) শেষে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৭১ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করে। সে হিসাবে বছরের শেষ প্রান্তিকে ২৮ হাজার ৯৬০ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে মোট ৫ লাখ ৪১ হাজার ৬৫৬টি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব উদ্যোক্তাদের মাঝে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৯৮ হাজার ৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিতরণ করেছে ২ হাজার ৮৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরে শিল্প খাতে ৩০ হাজার ২৪৬ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা ২০১৩ সালের বিতরণকৃত ঋণের চেয়ে ৬ হাজার ২২৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বেশি। এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ২০১৪ সালে সেবা খাতে ৭ হাজার ৮৯৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে, যা ২০১৩ সালের তুলনায় ৩ হাজার ২৯৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ খাতে ঋণ বেড়েছে ২৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর ব্যবসা খাতে ৬২ হাজার ৭৬৭ কোটি ১৮ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে, যা বিগত ২০১৩ সালের বিতরণকৃত ঋণের চেয়ে ৬ হাজার ৬৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেশি। ব্যবসা খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬২ দশমিক ২০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, এর মধ্যে মাত্র ৪২ হাজার ৭৩০টি নারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ঋণ পেয়েছে ৩ হাজার ৯৩৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের তুলনায় ৫৯২ কোটি ২০ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। এছাড়া ৮৪ হাজার ২৯০ নতুন উদ্যোক্তার মাঝে ১৭ হাজার ৬৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে, যা ২০১৩ সালের চেয়ে ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই এ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, আশানুরূপ বিনিয়োগের অভাবে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে থাকা সত্ত্বেও গত বছর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে। এর আগের বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও এসএমই ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। চলতি বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে ঋণ বিতরণ কমার আশঙ্কা করছেন এই কর্মকর্র্তা। তিনি বলেন, ঋণের অধিকাংশ ব্যবসা খাতে বিতরণ হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ও ব্যাংকগুলোর আন্তরিকতার ফলে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ ও ঋণের গুণগত মান বেড়েছে বলে তিনি জানান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর শেষে ব্যাংকগুলোতে ২ লাখ ২৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার তারল্য স্থিতি রয়েছে। এ সময়ে তারল্য সংরক্ষণের দরকার ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকিং চানেলে ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমেছে। জানুয়ারিতে পুরো ব্যাংক খাতের আমানত স্থিতি ৭ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বরে যা ছিল ৭ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। এতে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোতে আমানত কমেছে ৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। আগের মাসে যা ছিল ৫ লাখ ২৮ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। স্বপন কুমার রায় বলেন, প্রকৃত উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এখন নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসএমই বিভাগ থেকে মাঠপর্যায়ে গিয়ে ঋণের মান ও উদ্যোক্তা যাচাই করা হচ্ছে। সময়ে সময়ে ব্যাংকগুলোকে নিয়ে বৈঠক করা হচ্ছে। এছাড়া মাঠপর্যায়ের ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
×