ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএসএমএমইউ সমাবর্তন

দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ নজর দিন ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২ মার্চ ২০১৫

দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ নজর দিন ॥ রাষ্ট্রপতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসাসেবার প্রতি বিশেষ নজর রাখতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, অর্থের অভাবে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসাবঞ্চিত করা যাবে না। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের আচরণে যাতে রোগীরা মনে কষ্ট না পান সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাসে আয়োজিত এই সমাবর্তনে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতের লক্ষেèৗ এর কিং জর্জ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য় অধ্যাপক ডাঃ রাভি ক্যান্ট। সমাবর্তনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমিন মিয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত। চিকিৎসকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রদানে আমাদের অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। অর্থের অভাবে তারা যাতে চিকিৎসাবঞ্চিত না হন বা অবহেলার শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে। রোগীরা হাসপাতালের অতিথি। ফলে আপনাদের কোন আচরণে তারা যেন মনে কষ্ট না পান সে দিকে বিশেষ নজর দিবেন। আবদুল হামিদ বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রদান। দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা কম। তাই বিপুল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রদানে ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। সমাজের প্রতি চিকিৎসকদের দায়বদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনাদের এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে সমাজ ও রাষ্ট্রের রয়েছে অপরিসীম অবদান। তাই সমাজের কাছে আপনাদের দায়বদ্ধতা সাধারণ জনগণের চেয়ে বেশি। আমার বিশ্বাস আপনারা আপনাদের মেধা, মনন, চিকিৎসা ও মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে দেশের জনগণের আরও সেবা দিবেন, তাদের ভালবাসা ও দোয়ায় সিক্ত হবেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলতে সাধারণ মানুষ বোঝেন বড় ডাক্তার, যাদের কাছে প্রত্যাশাও থাকে অনেক বড়। আমি চাই আপনারা বড় মন নিয়ে সাধারণের মাঝে বড় ডাক্তারের পাশাপাশি বড় মানুষ হিসেবেও বিবেচিত হোন। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, পৃথিবীতে জীবন ও জীবিকার জন্য নানা পেশা থাকলেও বোধ করি চিকিৎসা সর্বশ্রেষ্ঠ মহৎ পেশা, যা মানুষের সুস্থতা ও জীবন রক্ষার সঙ্গে জড়িত। মানুষ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং তাঁদের চিকিৎসা ও উপদেশ রোগীকে গভীরভাবে আশান্বিত করে। তাই কেবল পেশা হিসেবে নয়, সেবার মনোভাব নিয়ে আপনারা চিকিৎসা প্রদান করবেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার ওপর জোর দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে রোগের প্রকার, ধরন ও প্রকৃতি পরিবর্তন হতে পারে। তা বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। উন্নত দেশসমূহে কি ধরনের গবেষণা হচ্ছে তা আমাদের চিকিৎসকদের জানতে হবে এবং তাতে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে। বিএসএমএমইউ আচার্য আবদুল হামিদ চিকিৎসদের উদ্দেশে আরও বলেন, খাদ্য, পুষ্টি, পরিমিত আহার, নিয়মিত ব্যায়ামসহ স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন প্রণালী বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত ও সচেতন করে তুলতে হবে। তা হলে নিরাময়যোগ্য রোগ বহুলাংশে কমে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির ফলে বয়স্ক লোকের সংখ্যা দেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তাই বার্ধক্যজনিত রোগের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় নিতে হবে নতুন উদ্যোগ। সমাবর্তনে সাতজন বিশিষ্ট চিকিৎসককে সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রী ‘অনারিস কজা’ দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতির নিকট থেকে সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রী গ্রহণ করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল কাশেম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব) আব্দুল মালিক, অধ্যাপক এম নুরুল আমিন, অধ্যাপক ডাঃ রবিউল হোসেন, অধ্যাপক টি এ চৌধুরী, অধ্যাপক রশিদউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক এন আলম।
×