ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুতের বিলাসী ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের চিন্তাভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২ মার্চ ২০১৫

বিদ্যুতের বিলাসী ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের চিন্তাভাবনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিলাসী বিদ্যুত ব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণের চিন্তা করছে সরকার। বিলাসী যন্ত্রাংশে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তি ব্যবহার করা গেলে তা বাধ্যতামূলক করা হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায় সত্বরই এ ধরনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা চিন্তা করছি গিজার ব্যবহারকারীদের বিদ্যুত দেয়া হবে না। তারা বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তি ব্যবহার করে গিজার চালাতে পারেন। বিভিন্ন দেশে এখন সৌরশক্তি ব্যবহার করে রান্না করা হয়। আমাদের দেশেও এটা চালু হতে পারে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। কিন্তু এখন বাজারে সস্তায় শীতে পানি গরম করতে গিজার পাওয়া যায়, ঘর গরম করতে রুম হিটার, রান্নার জন্য ইন্ডাকশন ওভেন ব্যবহার হচ্ছে। বাজারে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের দাম মাত্র তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে। প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশেই তুলনামূলকভাবে বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কম দক্ষতার এসব যন্ত্রাংশ আমদানি করা হলেও সরকার এক্ষেত্রে একেবারে নীরব রয়েছে। সরকারের বিদ্যুত সাশ্রয় ইউনিট দেশে ব্যবহৃত সকল পণ্যের স্টার লেবেলিং-এর মাধ্যমে বিদ্যুত ব্যবহার এবং কর্মদক্ষতা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে দীর্ঘদিনেও কার্যকর কিছু হয়নি। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভবিষ্যতে গিজারের জন্য বিদ্যুত সংযোগে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। গিজার ব্যবহারকারীদের সৌরশক্তি ব্যবহার করে পানি গরম করতে হবে। দেশের সকল ছাদেই উদ্যোগ নিলে সোলার প্যানেল ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে কেউ এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করলে সরকার তাদের প্রণোদনা দেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে শুধু বাসাবাড়িতে নয় হাসপাতাল, এপার্টমেন্ট, হোটেল, শিল্পের ক্ষেত্রে ট্যানারি, টেক্সটাইল, নিটিং, ডায়িং, হ্যান্ডলুম, ডেইরি শিল্প এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের ক্ষেত্রে বিদ্যুত বা গ্যাস ব্যবহার না করে সোলারের মাধ্যমে ৬০ থেকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি গরম করা সম্ভব। ট্যানারিতে সোলারের মাধ্যমে পানির গরম করা হলে প্রায় ৪৯ ভাগ গ্যাস সাশ্রয় করা যাবে। একইভাবে ৪৫ ভাগ গ্যাস সাশ্রয় সম্ভব টেক্সটাইলে। সাভারে ১৫৫ ট্যানারি স্থাপনের ফলে প্রায় ২১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় হবে বলে এক গবেষণায় দেখা গেছে । এতে জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাতাসের কার্বন নির্গমণের মাত্রা কমে আসবে। দেশের ট্যানারি শিল্পে তিন ভাগের দু’ভাগ গ্যাসই ব্যবহার হয় পানি গরম করতে। এক্ষেত্রে এক হাজার লিটার পানি গরম করতে সক্ষম সোলার হিটারে খরচ পড়বে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা। চামড়ার প্রতি বর্গফুটে ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা খরচ কমে আসবে। যা চামড়া শিল্পের জন্য খুবই জরুরী। সোলার ওয়াটার হিটিংয়ের ক্ষেত্রে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন তা তিন থেকে চার বছরের মধ্যে মুনাফার মাধ্যমে অর্জন সম্ভব বলে সেমিনারে জানানো হয়। অর্থাৎ শিল্পেও সহায়ক হতে পারে সোলার। সোলার বিদ্যুতের বিকাশে গ্রাহকের উদ্যোগকে কাজে লাগাতে ২০১১ তে সংযোগ চালু করলেও সংযোগ প্রত্যাশীদের সৌরপ্যানেল স্থাপনের শর্ত যোগ করে দেয়। সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুত সঙ্কটের কারণে শিল্প-আবাসিক সব খাতে দীর্ঘ সময় বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ রাখে। ওই সময় বিদ্যুত বিভাগ এক আদেশে বলে, নতুন বিদ্যুত সংযোগের ক্ষেত্রে লোডের পরিমাণ দুই কিলোওয়াটের বেশি হলে আবাসিকে সর্বনিম্ন তিন শতাংশ, বাণিজ্যিকে সাত ও শিল্প-কারখানায় ১০ শতাংশ সৌরবিদ্যুত ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়। যদিও গত বছর মে মাসে বিদ্যুত মন্ত্রণালয় নতুন বিদ্যুত সংযোগের ক্ষেত্রে সোলার স্থাপনের বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়। সংযোগের ক্ষেত্রে লোড বেশি হলে কিছু নগদ অর্থ জমা দেয়ার বিধান রাখার কথা ওই সময় আলোচনা হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিদ্যুত বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে প্রথম দুই কিলোওয়াটের পর প্রতি কিলোওয়াটের জন্য দুই হাজার টাকা করে সরকারের নবায়নযোগ্য তহবিলে জমা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে। বিতরণ কোম্পানির মাধ্যমে প্রতিমাসে এই অর্থ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলে জমা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে সূর্য প্রতি ঘণ্টায় পৃথিবীতে যে পরিমাণ শক্তি দেয়, তা থেকে সারা বিশ্বের সব মানুষের সারা বছরের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব। বর্তমানে বিদ্যুতের বড় দুই কাঁচামাল জ্বালানি তেল আর কয়লার যোগান অফুরন্ত নয়, একদিন শেষ হয়ে যাবে সেগুলো। বিজ্ঞানীদের হিসাব, বিদ্যুতের চাহিদা যে হারে বাড়ছে, তাতে বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা না হলে তেল দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব হবে আর মাত্র ৩৫ বছর, ২০৪৫ সাল পর্যন্ত। আর কয়লার মজুদ শেষ হয়ে যাবে ২১৫৯ সালের মধ্যে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে এখন থেকেই বিকল্প জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে উন্নতদেশ। আমাদেরও এখন থেকে এসব উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
×