ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রেনের ভেতরে চোরাগোপ্তা হামলার আতঙ্কে এবার যাত্রীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২ মার্চ ২০১৫

ট্রেনের ভেতরে চোরাগোপ্তা হামলার আতঙ্কে এবার যাত্রীরা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ট্রেন যাত্রীদের নিরাপত্তায় কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপ নিলেও ট্রেনের ভেতরে চোরাগোপ্তা হামলা বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে ট্রেনের ভেতরে হামলা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে শতভাগ। গত শনিবার রাতে হবিগঞ্জের শাহজীবাজার স্টেশন এলাকায় চট্টগ্রামমুখী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় মা-মেয়েসহ তিনজন গুরুতর দগ্ধ হয়েছে। এদিকে, জামায়াত-বিএনপিসহ ২০ দলের ক্যাডাররা দেশব্যাপী রেল রুটে নাশকতার নীলনকশা তৈরি করছে। চোরাগোপ্তা হামলাসহ রেল রুটে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়াতে এ দলগুলো উঠে পড়ে লেগেছে। পূর্বাঞ্চলীয় রেল বিভাগ ইসলামী দলের ব্যানারে থাকা এসব ক্যাডারের হাত থেকে যাত্রীদের রক্ষায় রাতের প্রত্যেকটি ট্রেনের কয়েক কিলোমিটার আগে নির্দেশনামূলক ইমার্জেন্সি শাটল ইঞ্জিন বা এডভান্স পাইলট ইঞ্জিন পরিচালনা শুরু করলেও ট্রেনে ককটেল ও বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। ট্রেনের যাত্রীরা আশঙ্কা করছেন, রেল প্রত্যেকটি ট্রেনের আগে এডভান্স ইঞ্জিন পরিচালনা, আনসার দিয়ে রেললাইন প্রহরা ও স্টেশনে কর্মরত আনসার-ভিডিপি, আরএনবি ও জিআরপি সদস্যদের মাধ্যমে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নানা পদক্ষেপ নিলেও ট্রেনের ভেতরে চোরাগোপ্তা হামলা বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে ট্রেনের ভেতরে হামলা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে শতভাগ। কারণ, প্রত্যেকটি আন্তঃনগর ট্রেনসহ লোকাল ও এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোতে কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৮টি কোচ সংযোজন করা হয়। এসব কোচে দরজার সংখ্যা সর্বনি¤œ ৫৬ থেকে ৭২টি। এর মধ্যে প্লাটফর্মমুখী দরজাগুলো খোলা থাকে। অর্থাৎ ২৮ থেকে ৩৬টি দরজা দিয়েই যাত্রীরা ট্রেনের কোচে প্রবেশ করে। এদিকে, চট্টগ্রাম স্টেশনের শুধু একটি স্থানে মেটাল ডিটেক্টরওয়ে বা গেট রয়েছে। বাকি চারদিক দিয়ে স্টেশনে যাত্রীবেশী নাশকতাকারীরা প্রবেশ করতে পারে। ফলে ট্রেনের অভ্যন্তরে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে যাত্রীরা মনে করেন, প্রত্যেকটি কোচের প্লাটফর্মমুখী দরজাগুলো খোলা রেখে অপরদিকের দরজাগুলো বন্ধ রেখে যাত্রীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। এ সময় জিআরপি কিংবা আরএনবি অথবা রেল কর্মচারীদের নির্ধারিত সিকিউরিটির মাধ্যমে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে থাকা লাগেজ এমনকি দেহ তল্লাশি করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কারণ, বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা নাশকতার উদ্দেশ্যে যাত্রীবেশে ট্রেনে প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের এসব ক্যাডারের নাশকতার নীলনকশায় আতঙ্কিত হয়ে রেল কর্তৃপক্ষ রেললাইন পাহারায় ৮ হাজার আনসার নিয়োগ করা হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি থেকে এসব আনসার প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা হিসেবে তিন শিফটে পাহারা দিচ্ছে। চলন্ত ট্রেনের দিকনির্দেশনা হিসেবে সামনের দিকে কোন ধরনের নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে কিনা বা রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে কিনা এ ধরনের তথ্য আগাম কালেকশনে রেলের পক্ষ থেকে এডভান্স পাইলট/ইমার্জেন্সি শাটল ইঞ্জিন পরিচালনা শুরু করেছে। এ ব্যাপরে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, নাশকতা এড়াতে ও যাত্রীদের যাত্রা নিশ্চিত করতে ট্রেন লাইন প্রহরায় ইমার্জেন্সি শাটল ইঞ্জিন দিকনির্দেশনা হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়াও রেললাইন প্রহরায় নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করা হয়েছে। রাতের ট্রেনগুলোতে বিশেষ করে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ট্রেনের গতিসীমা ৪০ কিলোমিটার নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে সিডিউল ঠিক থাকছে না ট্রেনের। তবুও যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছার বিষয়টি উপেক্ষা করা হচ্ছে। ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে মাত্র তিন মাসে নাশকতা চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা রেলের প্রায় ৭০ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়াও এ সময় ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে বোমা হামলায় নিরাপত্তা প্রহরী কাশেম নিহত হন ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এ ঘটনার পর টনক নড়ে রেলওয়ের।
×