ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২ মার্চ ২০১৫

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ও কক্সবাজার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে শুধু ব্যাহত করে না, অখণ্ডতা ও শান্তিশৃঙ্খলার জন্যও চরম হুমকি সৃষ্টি করে। দেশের সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষার্থে সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যকে যে কোন হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। রবিবার সকালে কক্সবাজারের রামুতে নবপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ম পদাতিক ডিভিশনের যাত্রা শুরুর মুহূর্তে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। তিনি বলেন, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের সহঅবস্থান নিশ্চিতকরণসহ সকলের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর একটি ডিভিশন, দুটি পদাতিক ইউনিট, একটি পদাতিক ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারি ইউনিটসহ পূর্ণাঙ্গ স্থায়ী সেনানিবাস উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, নিকট অতীতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে এ অঞ্চলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির ইতিহাস রয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সেনাবাহিনীর এই নতুন পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে এর মাধ্যমে দেশের সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হলো। তিনি উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ডিজিটাল উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক করে গড়ে তোলা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। দশম পদাতিক ডিভিশনের প্রতিষ্ঠা সশস্ত বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে বর্তমান সরকারে এটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এর আগে প্রধানমন্ত্রী রামুতে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান ইকবাল করিম ভুঁইয়া, নবপ্রতিষ্ঠিত ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আতাউল হালিম সরওয়ার হাসান তাঁকে স্বাগত জানান। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নতুন এ ডিভিশনের সেনা সদস্যদের অভিবাদন ও সালাম গ্রহণ করেন। কুচকাওয়াজের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সালাম জানান সেনাবাহিনীর প্যারেড কমান্ডার মেজর জয়নুল আবেদিন চিশতী। অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচএম এরশাদ, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল শফি উল্লাহ, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোঃ এনামুল বারী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, একুশে পদকপ্রাপ্ত শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথেরো, লে. কর্নেল মাজহারুল আল কবির, এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, আবদুর রহমান বদি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম ও রামু বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের পরিচালক শ্রীমৎ করুণাশ্রী ভিক্ষু এবং সরকারী-বেসরকারী পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রামের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু’ উদ্বোধন ॥ রবিবার দুুপুরে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল ‘রেডিসন ব্লু চিটাগং বে ভিউ’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নগরীর প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় প্রায় চার দশমিক আঠার একর জমির ওপর ২২ তলার এ হোটেলটি নির্মিত হয়েছে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত আন্তর্জাতিক মানের এ হোটেলটি সেনা হোটেল ডেভেলপমেন্টসের মালিকানার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হোটেল ও রিসর্ট ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান রেডিসন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় হোটেলটি পরিচালিত হবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কার্লসন এবং ডেনমার্কের রেজিডর নামের প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট ভেঞ্চারে বিশ্বজুড়ে রেডিসন হোটেল নামে এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। রামুতে সেনাবাহিনীর ১০ ডিভিশনের যাত্রার উদ্বোধন শেষে হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম এসে দুপুর প্রায় আড়াইটা নাগাদ এ হোটেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে তিনি কোন বক্তব্য রাখেননি। শিশুদের একটি দল নৃত্যের তালে তালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর পর তিনি এর উদ্বোধন করেন। পরে তিনি হোটেলটির বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে দেখা করেন। উল্লেখ্য, এ হোটেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বের ৭৩টি দেশে এ নামে হোটেল প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। রেডিসন হোটেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানানো হয়, এ গ্রুপের আরও ৫০টিরও বেশি হোটেল নির্মিত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ঢাকায় ২০০৭ সাল থেকে সেনা হোটেল ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে রেডিসন ব্যবসা করে আসছে। রেডিসন ব্লু চিটাগং বে ভিউ হোটেলটিতে নির্মাণ করা হয়েছে ২৪১টি সুসজ্জিত রুম। এর মধ্যে ২২২টি সুপিরিয়র রুম রয়েছে। জুনিয়র স্যুট রয়েছে ১৩টি, ৪টি এক্সিকিউটিভ স্যুট, হোটেলটির ছাদে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি সুইমিং পুল। এছাড়া একটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং একটি রয়েল স্যুটের জন্য রয়েছে আলাদা দুটি সুইপিং পুল। আরও রয়েছে শপিং জোন, বার, জিম, পার্লার সেলুনসহ বিভিন্ন সুবিধাদি। প্রায় দেড় হাজার লোকের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চমানের অনুষ্ঠানের জন্য দুটি হলও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হোটেলটিতে রয়েছে ফরাসি, ইন্ডিয়ান, ইতালিয়ান ও বাংলাদেশী খাবারের ব্যবস্থা। ২০১১ সালের ১৭ জুলাই এ হোটেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর সময়ে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে হোটেলটির বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হবে বলে কর্তৃপক্ষীয় সূত্রে জানানো হয়। আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাত প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামে এ হোটেলটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তবে তিনি আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য রাখেননি। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, এমপি জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, এমপি এমএ লতিফ, সাবেক মন্ত্রী ও এমপি ড. হাছান মাহমুদ, এমপি শামসুল হক চৌধুরী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া, নৌবাহিনী প্রধান এম ফরিদ হাবিব, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব লে. জেনারেল জয়নুল আবেদিন, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল শফিকুর রহমান, জিওসি আরডক লে. জেনারেল সাব্বির আহমেদ, জিএসও-২ (সাইঅপস) মেজর মেজর মোঃ নুরুল আবসার, সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, এমপি ডাঃ আফসারুল আমীন, চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডি প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ, আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিন, মফিজুর রহমান এবং সরকারী-বেসরকারী ও সামরিক বাহিনীর বিশিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ ও চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা।
×