ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চীনের কাছে ১০১ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১ মার্চ ২০১৫

চীনের কাছে ১০১ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ চীনের কাছে দুই প্রকল্পে ১০১ কোটি ডলারের ঋণ পেতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চীনের কাছে নতুন ঋণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে। নতুন ঋণ প্রস্তাবের আওতায় ১০১ কোটি ডলার পাওয়ার জন্য ইআরডির কাছে প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) পাঠায়। দ্রুত প্রকল্পগুলোর ঋণ পাওয়ার জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে নানা ধরনের তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে কনস্ট্রাকশন অব ডাবল লাইন (ডুয়েল গেজ) বিটুইন জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশন প্রকল্পে ৭৫ কোটি ২৭ লাখ ডলার; কনস্ট্রাকশন অব এডিজি ট্রাক প্যারালাল টু দি এক্সিসটিং এমজি লাইন ইন জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সেকশন প্রকল্পে ২৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার চীনের রাষ্ট্রদূত এম মিংকুয়াংয়ের কাছে লেখা রেলওয়ের দুই প্রকল্পে ঋণ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ১৭৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৯ কোটি ডলার ব্যয় নির্বাহ করা হবে। বাকি ৭৫ কোটি ডলার প্রকল্প সাহায্য হিসেবে চীনের অর্থায়ন চাওয়া হয়েছে। এদিকে চীনের কাছে পাঠানো আরও একটি প্রস্তাবে জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ সেকশনে ৯০ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে ৩২ কোটি ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ কোটি ডলার চীনের কাছ থেকে পাওয়ার আশা করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৬ কোটি ডলার সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন জোগাড় করতে ইআরডিকে অনুরোধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ দেখানোয় তা যাচাই-বাছাই করতেও ইআরডিকে অনুরোধ করা হয়েছে। সরকারের কঠিন শর্তের ঋণ নীতিমালার সীমার মধ্যে থাকলে প্রকল্পগুলো চীনের অর্থে বাস্তবায়ন করা হবে। অন্যথায় বিকল্প উৎস খুঁজতে ইআরডিকে অনুরোধ করা হয়েছে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ছক অনুযায়ী ইআরডি চীনের ঋণের গ্রান্ট এলিমেন্ট হিসাব করেছে। এ হিসাবে চীনের অর্থায়নে প্রস্তাবিত প্রকল্পের গ্র্যান্ট এলিমেন্ট মাত্র ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বর্তমানে চলমান প্রকল্পগুলোর গ্রেস পিরিয়ড সাত বছর, সুদের হার ১ দমশিক ৫০ শতাংশ। চীনের এক্সিম ব্যাংকের নতুন ঋণে সুদের হার ২ শতাংশ। ঋণগুলো ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরে আরও রয়েছে দশমিক ২ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি ও ম্যানেজমেন্ট ফি দশমিক ২ শতাংশ। অন্যান্য ফি মিলে প্রায় ৫ শতাংশের ওপরে সুদ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পণ্য চীনের কাছ থেকে কেনার শর্ত রয়েছে। ফলে সব বিবেচনায় চীনের ঋণ হবে অতি চড়া সুদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে ব্যয় বহুল ঋণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এমন চড়া সুদে বায়ার্স ক্রেডিট নিলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশি। কারণ যেসব প্রকল্প নেয়া হচ্ছে সেগুলোর ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ দেয়া হবে। ফলে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন যেমন রয়েছে, একই সঙ্গে ব্যয় নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। এর পরও চীনের কাছ থেকে একের পর এক ঋণ নেয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বর্তমান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরাস্তু খান চীন থেকে ঋন নেয়া বিষয়ে এর আগে জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, সরকার এদেশকে মধ্য আয়ের অর্থনীতিতে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সুতরাং ওই স্থানে পৌঁছাতে হলে ব্যাপক বৈদেশিক বিনিয়োগ দরকার। এক্ষেত্রে শুধু নমনীয় সুদের ঋণের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদেরকে অনমনীয় ঋণের দিকেই যেতে হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এ ঋণ যেন সঠিক ব্যবহার হয়। অর্থাৎ বিদ্যুত ও অবকাঠামোসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে যেন ব্যবহার করা হয়। তাহলেই লক্ষ্য পূরণ হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশকে ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) উচ্চ সুদের বায়ার্স ক্রেডিট ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চীন। ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে ১১টি প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই প্রস্তাবে দেশটির এক্সিম ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষাপটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইআরডি দ্রুত চুক্তিসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
×