ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব ক্রিকেটে ক্যারিবীয়রা কী এখনও পরাশক্তি? টনি কোজিয়ের

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১ মার্চ ২০১৫

বিশ্ব ক্রিকেটে ক্যারিবীয়রা কী এখনও পরাশক্তি? টনি কোজিয়ের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রশ্নটা এখন এসেই যাচ্ছে। ক্রিকেট পরাশক্তির তালিকায় কী বিবেচনা করা যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে? সম্প্রতি বেশ নাজুক পরিস্থিতিতে আছে দলটি। সাফল্যের ধারাবাহিকতা নেই দলটির। চলমান বিশ্বকাপেও শুরুটা বেশ বাজেভাবে হয়েছে তাদের। সহযোগী সদস্য দেশ আয়ারল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে ক্যারিবীয়রা শুরু করেছে এবারের অভিযান। যদিও এরপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দলটি। পাকিস্তান আর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে অসাধারণ দুটি জয়ে ফেবারিট তকমাটাও লাগিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু আবারও সেটা ধূলিসাত হয়েছে ক্রিকেট পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে খুব বাজেভাবে হার দিয়ে। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে একেবারেই বেহাল পরিস্থিতি ছিল দলটির। অথচ এক সময় এ দলটিতেই খেলেছেন ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, গর্ডন গ্রীনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, রিচি রিচার্ডসন, ব্রায়ান লারা ও শিবনারায়ণ চন্দরপলের মতো দুনিয়া কাঁপানো ব্যাটসম্যানরা। সেই দলটির ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক ব্যর্থতা এখন নিশ্চিতভাবেই বার্তা দিচ্ছে বোলারদের জন্য বিভীষিকাময় আগের সেই ব্যাটিং বিভাগ নেই ক্যারিবীয়দের। আর অতীত ঘেঁটে বর্তমান সময়টা ব্যাখ্যা করে বিশিষ্ট ক্রীড়া লেখক ও বিশ্লেষক টনি কোজিয়ের এমন ব্যাখ্যাই দাঁড় করিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে। সম্প্রতি ক্যারিবীয় দলের ব্যাটিংয়ে অন্যতম শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় ক্রিস গেইলকে। ৩৫ বছর বয়সী এ বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান তার দিনে যে কোন প্রতিপক্ষের যে কোন বোলিং আক্রমণের জন্য আতঙ্ক। কিন্তু গেইলেরও এখন পড়ন্ত সময়। আগের মতো নিয়মিত আর জ্বলে উঠছে না গেইলের ব্যাট। দীর্ঘ ১৯ ইনিংসে একটি ফিফটি হাঁকান এ ব্যাটসম্যান। কিন্তু জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ২১৫ রানের বিশ্বকাপ রেকর্ড ইনিংস উপহার দিয়ে রানে ফিরেছিলেন। কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে যখন তার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল দল তখন তিনি মাত্র ৩ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন। গেইল ব্যর্থ হওয়ার পরই পুরো ব্যাটিং বিভাগ ধসে পড়েছে প্রোটিয়া বোলারদের সামনে। অথচ এই ক্যারিবীয়রাই সত্তর দশকের শেষদিক এবং আশির দশকের প্রথম দিকে প্রায় অপরাজেয় দলই ছিল। সে কারণে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে যেখানেই খেলতে গেছে দলটি সেখানেই অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছে। এখন আর সেদিন নেই ক্যারিবীয়দের। অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে উইন্ডিজ দাপট। সে কারণে এবার বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে তারা যেভাবে হেরেছে সেটাকে খুব বেশি বিস্ময়করও ভাবছেন না ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও দর্শক, ভক্ত-সমর্থকরা। বিশ্বকাপের ঠিক আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও ঠিক এভাবেই নাস্তানাবুদ হয়েছিল দলটি। ২০০৯ সালের পর থেকে টেস্ট সিরিজেও আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা দলগুলোর বিরুদ্ধে জিততে পারেনি ক্যারিবীয়রা। অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যান চন্দরপল ওয়ানডে ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন, শুধু গেইলই টেস্ট ক্রিকেটে তার সঙ্গী হিসেবে আছেন। ওয়ানডেতে গেইল মানের কোন ব্যাটসম্যান নেই। ক্যারিবীয়দের ব্যাটিংয়ে এমন অসঙ্গতি শুরু হয়েছে আশির দশকের গোড়া থেকেই। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৮৩ সালে ভারতের কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এরপর আর একবারই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে পেরেছে ক্যারিবীয়রা ১৯৯৬ সালে। এরপর আর বিশ্ব ক্রিকেটে পুরনো জৌলুস, ঔজ্জ্বল্য কিছুই দেখা যায়নি তাদের ক্রিকেটে। বিশ্বব্যাপী এখনও বোলারদের সমীহ আদায় করা ব্যাটসম্যান বলতে গেইল-চন্দরপর। ১৫ বছর ধরে গেইল আর চন্দরপল ২১ বছর ধরে দলের হয়ে খেলে এখন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে। এ দু’জনের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত ভবিষ্যতের কোন ব্যাটিং কা-ারির দেখা পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যে দেশ থেকে একটা সময় সারাবিশ্বে আলোড়ন তৈরি করা কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানের ঝাঁক বেরিয়েছে তাদের এখন বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানের অভাব। আর সেটা না থাকার কারণেই ক্রমশ আরও উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে ক্যারিবীয় ক্রিকেট। ঘরোয়া ক্রিকেট আসরগুলোতেও সাড়া জাগানো কোন ব্যাটসম্যান নজর কাড়তে পারছেন না। তাই তো কোজিয়েরের প্রশ্ন-ক্রিকেট পরাশক্তি ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ কোথায়?
×