ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইইউ চায় বিজনেস কাউন্সিল

বালি প্যাকেজ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে ইইউ

প্রকাশিত: ০৮:১০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বালি প্যাকেজ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে ইইউ

এম শাহজাহান ॥ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ঘোষিত বালি প্যাকেজ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিনিময়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন একটি বিজনেস কাউন্সিল করতে চায়। এছাড়া ইইউ রফতানিতে এলডিসি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে আরও অগ্রগতি চায় ইইউ। পোশাকের পাশাপাশি পণ্য রফতানি বহুমুখীকরণেরও তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ইইউ বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইইউ-বাংলাদেশ জয়েন্ট কমিশন সাবগ্রুপ মিটিং সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত শিল্প ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশই এদেশ থেকে পোশাক না নেয়ার হুমকি দেয়। জিএসপি স্থগিতসহ বিভিন্ন কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি হ্রাস পায়। কিন্তু বিশ্বমন্দায় পড়ার পরও ইইউ’তে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে। এ কারণে রফতানি বাণিজ্যে ইইউ দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। পোশাক রফতানির পাশাপাশি চামড়া, চিংড়ি, সবজি, প্লাস্টিক, ফার্মাসিউটিক্যালস ও পাটপণ্য রফতানি হতে পারে ইউরোপের বাজারে। এজন্য ইইউ পণ্য রফতানি বহুমুখীকরণের তাগিদ দিয়েছে। শুক্রবার ইইউ-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্পর্কিত সাব-গ্রুপের ৬ষ্ঠ সভায় জোটভুক্ত দেশসমূহের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন, বাণিজ্য বাধা চিহ্নিতকরণ ও তা দূরীকরণে করণীয় নির্ধারণে সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ সভা হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মনোজ কুমার রায় এবং ইইউ দলের নেতৃত্ব দেন ইইউর দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্র্ব এশিয়া ইউনিটের উপপ্রধান ডায়ানা এ্যাকনসিয়া। উভয় দলের ৮ করে মোট ১৬ জন প্রতিনিধি সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। এই সভায় ইইউ-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে মনোজ কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, ইইউ’র সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বালি প্যাকেজ বাস্তবায়নে ইইউ’র সহযোগিতা ও সমর্থন চাওয়া হয়েছে। ইইউ আমাদের সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তিনি বলেন, তেমনি তারাও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিজনেস কাউন্সিল করতে চায়। ইতোমধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। এছাড়া এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে পোশাক রফতানিতে জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখবে ইইউ। তবে শ্রম আইন যেটি করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে বিধিমালা প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে ইইউ। জানা গেছে, তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের আরও কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ করতে চায় ইইউ। বিদেশী বিনিয়োগে সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে তা আর বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ট্রিপস চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং চুক্তির ফলে বাংলাদেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, গত ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউ’র মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় শতকরা ১৭ দশমিক ৫২ ভাগ বেশি। ইইউভুক্ত দেশসমূহে গত অর্থবছরের মোট রফতানির পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমদানি ২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। জিএসপি সুবিধা এবং সহজ রুলস অব অরিজিনের কারণে ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
×