ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কানসাট পল্লী বিদ্যুত কেন্দ্র পোড়ানোর ভয়াল দিন আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কানসাট পল্লী বিদ্যুত কেন্দ্র পোড়ানোর ভয়াল দিন আজ

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ আজ শনিবার ২৮ ফেব্রুয়ারি, সেই ভয়াল দিন। দুই বছর আগে এই দিনে একাত্তরের অন্যতম যুদ্ধাপরাধী ঘাতক দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ে ক্ষুব্ধ জামায়াত-শিবির যে সন্ত্রাসী তা-ব চালিয়েছিল তার জের আজও অব্যাহত রয়েছে। সন্ত্রাসের মূলহোতারা সেদিন মূল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খুবই ঠা-ামাথায় নজিরবিহীন তা-ব চালিয়ে গানপাউডার ব্যবহার করে। মুহূর্তের মধ্যে কানসাট পল্লী বিদ্যুতের প্রধান কার্যালয়সহ বিদ্যুত সরবরাহের পুরো অবকাঠামোসহ পুরো এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় কয়েক শ’ কোটি টাকা। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ৪৫ বছরে দেশের এটাই সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী পাকিদের দোসররা। জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা সেদিনের সকাল হতেই বাড়িঘর ছেড়ে সন্ত্রাস চালাতে প্রথমেই জেলা শহরের সঙ্গে পুরো শিবগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে। পুরো উপজেলার নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় নিয়ে সোনামসজিদ বন্দর কানসাট-রানীহাটি সড়কের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন বনজ ফলজ বৃক্ষ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। সৃষ্টি করে বড় বড় গর্তের পাকা রাস্তার বিভিন্ন অংশে; তারপরই তারা তা-বে নামে। প্রথমেই কানসাট পল্লী বিদ্যুতের বিশাল চত্বরের বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে নানান টাইপের সেট করা সরঞ্জামে আগুন ধরিয়ে দেয়। ব্যবহার করে শক্তিশালী বিস্ফোরকের অন্যতম উপাদান গানপাউডার। এরপর চত্বরের অর্ধশতাধিক স্টাফ কোয়ার্টার ও কর্মকর্তাদের বাসভবনে ঢুকে একাত্তর স্টাইলে লুটতরাজ চালিয়ে মূল্যবান গৃহসামগ্রী লুটে নিয়ে যায়। বাদ পড়েনি সোনা-দানা, অলঙ্কারও। পরে এসব কোয়ার্টারের সবই আগুন ধরিয়ে ভস্ম করে। তবে প্রধান অফিসের সব কক্ষে আগুন দিলেও জিএম কক্ষ অক্ষত রাখে। এ রহস্যের মূল কারণ আজও অজানা রয়ে গেছে সবার কাছে। তবে ঘটনার সময়ের কয়েক দিন আগে থেকেই জিএম সাহেব অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে জামায়াত কানেকশন থাকার কারণেই এমনটি হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। কারণ ২০১৩ সালে পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসন এবং একই জেলার ডিসি এসপি এ ধরনের তা-বের দিন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিল। তাই শিবগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই জেলা ও উপজেলা থেকে প্রত্যাহার করলেও এ নিয়ে কোন ধরনের শিকড় পর্যায়ের তদন্ত করা হয়নি। সেই সঙ্গে প্রত্যাহার করা হয়েছিল কানসাট পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার জিএমকে। পল্লী বিদ্যুত পোড়ানোর পর পরই সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীরা আক্রমণ চলিয়েছিল সোনামসজিদ সংলগ্ন মটেল ভবনে। মটেলটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিল। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মটেল ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে ভস্ম করার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের (পর্যটন) একজন তরুণ প্রকৌশলীকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করে। সেই মামলাও ঝুলে আছে। আজও বিচার শেষ হয়নি। একই সময়ে ১০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে সৃষ্ট সন্ত্রাসে পুড়ে যায় একাধিক ফায়ার ব্রিগেড বাহিনীর গাড়ি। সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীরা একই সময়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল ব্যক্তিদের বাড়িঘর ও মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দেয়। বহু দোকানপাট লুট করে। তাদের এ সন্ত্রাসে কোন প্রতিরোধ দিতে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ার কারণেই পুরো শিবগঞ্জ উপজেলাজুড়ে চলে তা-ব। এক কথায় উপজেলার পৌরসভাসহ প্রতিটি এলাকায় প্রগতিশীল গোষ্ঠী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর দোকানপাটসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট নতুবা লুটপাট করে। এর পর থেকেই পুরো শিবগঞ্জ পরিণত হয় সন্ত্রাসের জনপদে। এ ঘটনার পর পরই প্রশাসন বিশেষ অভিযান গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করলেও গ্রামেগঞ্জে চলতে থাকে চোরাগোপ্তা হামলা এবং হাত-পায়ের রগ কেটে পঙ্গু করা। নতুবা পুড়িয়ে বা বোমা মেরে কিংবা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে হত্যা করা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়। ২০১৫ সাল এলেও সেই তা-ব থামাতে পারেনি প্রশাসন তেমনভাবে। যদিও এ বছরের জানুয়ারিতে প্রশাসন যৌথবাহিনী নামিয়ে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। আর তাই ২০ দলের ডাকা হরতাল-অবরোধের কোন প্রভাব নেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ বন্দর সড়কের কোথাও। কারণ জামায়াত-শিবির ও বিএনপির সন্ত্রাসীরা যৌথবাহিনীর অভিযানে এলাকা ছাড়াতে উপজেলার কোথাও অবরোধ-হরতালের ছাপ নেই। তবে চোরাগোপ্তা হামলা, হত্যা, খুন ও পা-হাতের রগকাটা বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ ২০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় শিবগঞ্জ উপজেলার তিন পুকুরিয়া এলাকায় আবুল কালাম আজাদ (৪০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত আবুল কালাম উপজেলার পরদিলালপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে।
×