ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গণহত্যার বিচার না হলে আইনের শাসন সম্ভব নয়

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

গণহত্যার বিচার না হলে আইনের শাসন সম্ভব নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতার স্বার্থেই বাংলাদেশের গণহত্যার বিচার হতে হবে। কোন দেশে গণহত্যার বিচার না হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এছাড়া বাংলাদেশে স্বচ্ছতার সঙ্গে গণহত্যার বিচার হচ্ছে। এ বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে। শুক্রবার ‘বাংলাদেশে গণহত্যা ও ন্যয়বিচার’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বিদেশী বিশেষজ্ঞরা এ সব কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তিন দিনব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করে। তিন দিনব্যাপী এ সেমিনারে বিভিন্ন দেশের গণহত্যা বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেছেন। সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এছাড়া সেমিনারে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জান নূরও উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বর্তমান সরকার অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে ১৯৭১ সালের গণহত্যায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার এ বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে এ বিচার প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়, তখন থেকেই এখানে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বিশেষ করে সরকারবিরোধী পক্ষ বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানা উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি-জামায়াত এখন সারাদেশে সহিংসতা শুরু করেছে। তবে সরকার সকল বাধা উপেক্ষা করেই বিচার শেষ করবে বলেও তিনি জানান। ইন্টারন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারের সভাপতি ডেনিয়েল ফেইরিস্টেন বলেন, গণহত্যা একটি সমাপ্ত অপরাধ। তবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গণহত্যার বিচার বিভিন্ন দেশে হয়েছে। এখনও বিভিন্ন দেশে গণহত্যার বিচার চলছে। মানবতার স্বার্থেই গণহত্যার বিচার হতে হবে। কোন দেশে গণহত্যার বিচার না হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কোথাও কোথাও গণহত্যার বিচার দীর্ঘমেয়াদে হয়েছে। আবার কোথাও খুব দ্রুতগতিতে হয়েছে। তবে যেভাবেই বিচার হোক না কেন, বিচারটি স্বচ্ছতার সঙ্গে হতে হবে। তা না হলে বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তবে বাংলাদেশে যে গণহত্যার বিচার হচ্ছে, সেটি স্বচ্ছতার সঙ্গেই হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ডেনিয়েল বলেন, যে কোন দেশে গণহত্যার বিচার করতে গেলে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হয়। জনসমর্থন ও জনসম্পৃক্ততা ছাড়া কোন সরকারই গণহত্যার বিচারে সফল হতে পারে না বলে তিনি জানান। সেমিনারে ভিডিও বক্তব্যে জাতিসংঘের গণহত্যা প্রতিরোধ বিভাগের বিশেষ উপদেষ্টা আদামা দেইং বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান সরকার গণহত্যা বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশে গণহত্যার বিচার শেষ করা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি অবশ্যই আশা করব এ বিচার প্রক্রিয়া হবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের সাফল্যও তিনি কামনা করেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বের যে কোন দেশে অপরাধের বিচার হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কনসাইন্সের নির্বাহী পরিচালক এলিজাবেথ সিøক্স বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশের গণহত্যা নিয়ে কাজ করছি। বিশ্বের দেশে দেশে গণহত্যার দলিল সংরক্ষণ করছি। শান্তির জন্যই আমরা এসব করছি। এশিয়া অঞ্চলে ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতাও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। গণহত্যার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করছি। সাইটস অব কনসাইন্স বিশ্বের ৫৫টি দেশে প্রায় দুই শ’ সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে বলেও তিনি জানান। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের গণহত্যা বিশ্বের সকলেই জানেন। সেই গণহত্যার বিচারের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরে বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন তৈরি করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে ’৭৫-এর পট পরিবর্তনের ফলে গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া থেমে যায়। এখন ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। সে প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সেমিনারে বক্তব্য রাখেনÑ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারোয়ার আলী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ডেনিয়েল হোরাসিও, এ্যামি ফ্যাগেন প্রমুখ।
×