ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘তারা তো খুনের দায়ে অভিযুক্ত’

বিএনপি জামায়াত দেশে গণহত্যা চালাচ্ছে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপি জামায়াত দেশে গণহত্যা চালাচ্ছে ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তথাকথিত আন্দোলনের নামে গাড়িতে পেট্রোলবোমা ও আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে গণহত্যা চালাচ্ছে। হরতাল-অবরোধ কার্যকর না হওয়ায় নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মেরে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করাটা কোন রাজনীতি নয়, সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদী কর্মকাণ্ড। কারও পক্ষেই তাদের এ ধরনের নির্মম ও নৃশংসতা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তারা তো খুনের দায়ে অভিযুক্ত। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারিবিষয়ক চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। দ্য সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জনস বাংলাদেশ (এসপিএসবি) চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, এসপিএসবির সভাপতি ডা. সামন্ত লাল সেন, মহাসচিব মোঃ আবুল কালাম, সহসভাপতি ও সম্মেলন আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অঞ্জন কুমার দেব। বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নিরীহ, সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষের গায়ে আগুন দিচ্ছে। ট্রেনলাইনের ফিসপ্লেট খুলে ট্রেন ফেলে এ্যাকসিডেন্ট ঘটিয়ে মানুষকে হত্যা করছে। সিএনজি-রিক্সা কোনকিছুই বাদ যাচ্ছে না। এমনকি লঞ্চেও আগুন দিচ্ছে। সম্প্রতি মুরগির বাচ্চাবোঝাই একটি ট্রাকে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে পোড়ানো হচ্ছে। এটা সহ্য করা যায় না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মাধ্যমে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাইছে, যা খুবই দুঃখের, খুব কষ্টের। এটা কোন ধরনের বীভৎসতা ও জুলুম? একটা মানুষ কিভাবে অন্য মানুষকে পুড়িয়ে মারছে? এ ধরনের কাজ কখনও কোন মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল। তবে সেটা ছিল মানুষের জন্য রাজনীতি। মানুষের একটু সুন্দর জীবন দেয়া, মানুষের ভাল করা, মানুষকে উন্নত জীবন দান করা, জনগণের সমস্যাগুলো দূর করা, এই তো রাজনীতির উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য কীভাবে হাসিল হবে যদি দেখি সেই সাধারণ মানুষকেই হত্যা করা হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখছি বিএনপি-জামায়াত জোট অবরোধের সঙ্গে হরতাল ডেকেছে। আর যখন তাদের এই কর্মসূচীতে জনগণ সাড়া দিচ্ছে না তখন তারা ভীতি সৃষ্টির জন্য মানুষের গায়ে পেট্রোলবোমা মারছে। জনগণ তাদের এই ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, যারা আজ মানুষ পুড়িয়ে মারছে অন্তত আল্লাহ তাদের সুমতি দিকÑ এ কামনা করি। গত ৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সময়ে মানুষের মধ্যে একটা শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এসেছে। মানুষ উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে। তাহলে এই তা-ব হঠাৎ করে কিসের জন্য? কার স্বার্থে? জনগণের স্বার্থে নিশ্চয়ই না। এটা ব্যক্তি স্বার্থে। আর কারও ব্যক্তি স্বার্থের জন্য সাধারণ মানুষ কেন কষ্ট ভোগ করবে? কেউ যদি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে তাহলে সেই ভুলের মাসুল কি দেশের সাধারণ মানুষ দেবে? জনগণ কেন দেবে? হরতালের জন্য বারবার এসএসসি পরীক্ষা পেছানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের কারণে ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা নষ্ট হচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের জীবনটাকে ধ্বংস করে দিয়ে এটা কোন ধরনের আন্দোলন? শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যদি দেশ চালাতে ব্যর্থ হতাম তাহলে বুঝতাম তারা এ জন্য সরকার উৎখাতের আন্দোলন করছে। কিন্তু বাংলাদেশের কোথাও ব্যর্থতার কোন চিহ্ন নেই। বিশ্বব্যাপী মন্দা মোকাবেলা করে আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বে যে কয়টি দেশ উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ১৯০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রিজার্ভ ২২ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী আগুন লাগলে কী করণীয় এ বিষয়ে মানুষকে আরও সচেতন করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিকমানের বার্ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, এত বেশিসংখ্যক মানুষ প্রতিবছর পুড়ে যায় আমাদেরÑ এ জন্য আরও ডাক্তার প্রয়োজন, নার্স প্রয়োজন। এ জন্য আমাদের একটা ইনস্টিটিউট করতে হবে। তিনি বলেন, আগামীতে প্রত্যেক জেলায় বার্ন ইউনিট করা হবে। ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় বার্ন ইউনিট করে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক জেলায় আমরা বার্ন ইউনিট করে দেব। উপজেলা পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা কার্যক্রম সম্প্রসারণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকার পরও অগ্নিদগ্ধদের আন্তরিকতার সঙ্গে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হরতাল-অবরোধের সহিংসতায় অগ্নিদগ্ধ ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি মালিকদের ধারাবাহিকভাবে আর্থিক সহায়তা প্রধান করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করতে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
×