ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় লাখে ২৮০ জন কলেরা জীবাণুতে আক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ঢাকায় লাখে ২৮০ জন কলেরা জীবাণুতে আক্রান্ত

নিখিল মানখিন ॥ ডায়রিয়া রোগীর অনেকেই কলেরায় আক্রান্ত। তা শনাক্ত করতে যত দেরি হয় ততই রোগীর জীবনে নেমে আসে মৃত্যুসহ অপ্রত্যাশিত নানা পরিণতি। শুধু ডায়রিয়ার চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক কলেরা রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে। প্রতিটি হাসপাতালে কলেরা রোগের পৃথক চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকে না। এতে কলেরার জীবাণু শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। কলেরা রোগীকে ডায়রিয়ার চিকিৎসা দিলে তার কার্যকারিতা থাকে না। আইসিডিডিআর’বি’র ঢাকা হাসপাতালের আওতাভুক্ত এলাকার প্রতি একলাখ জনসংখ্যায় ২৮০ এবং মিরপুর চিকিৎসা কেন্দ্রের আওতাভুক্ত এলাকায় প্রতি একলাখ জনসংখ্যায় ৪৭৪ জন ভিব্রিও কলেরিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ঢাকা হাসপাতালের আওতাভুক্ত এলাকার কলেরার আনুমানিক হার ঢাকা শহরের কলেরার হার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আইসিডিডিআর’বি-এর সর্বশেষ গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়েছে। বাংলাদেশকে কলেরা রোগীমুক্ত ভাবতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সরকার। কিন্তু আইসিডিডিআর’বি-এর এমন প্রতিবেদনে দেশে কলেরায় আক্রান্ত অনেক রোগী শনাক্ত হয়েছে। আইসিডিডিআর’বি-এর বিজ্ঞানীরা জানান, কলেরা সাধারণত মল দ্বারা দূষিত পানি অথবা খাবারের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়্ । কলেরার জন্য দায়ী জীবাণুর নাম ‘ভিব্রিও কলেরি’ এবং এই জীবাণু দ্বারা বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ৩০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ কলেরাজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এক লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায় প্রতিবছর। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের দেশসমূহে, যেখানে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অস্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ খাবার পানির সরবরাহ অপ্রতুল। বাংলাদেশে কলেরা একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। কলেরা যদিও টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য একটি, তবু এ রোগের প্রকোপ নির্ধারণ ছাড়া টিকা সাশ্রয়ী টিকাদান কর্মসূচীর মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। আইসিডিডিআর’বি-এর ঢাকা হাসপাতাল এবং মিরপুর চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রতিবছর দেড় লাখেরও বেশি ডায়রিয়া রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়। হাসপাতালভিত্তিক ডায়রিয়া রোগের সার্ভিলেন্স কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এই হাসপাতাল দু’টিতে ভর্তি হওয়া রোগীর একটি নির্দিষ্ট অংশকে ভিব্রিও কলেরি এবং অন্যান্য আন্ত্রিক রোগ পরীক্ষার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর উপাত্ত এবং জনসংখ্যাভিত্তিক কলেরা রোগের তথ্য অপ্রতুল। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আইসিডিডিআর’বি-এর ঢাকা হাসপাতাল এবং মিরপুর চিকিৎসা কেন্দ্রের আওতাভুক্ত এলাকা হতে যথাক্রমে ১ হাজার ৯০৩ এবং ১ হাজার ১৯৪ রোগী ডায়রিয়া সার্ভিলেন্সের আওতায় ভর্তি করা হয়। তাদের ভিব্রিও কলেরির পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে ঢাকা হাসপাতালে ৩৩৯ এবং মিরপুর চিকিৎসা কেন্দ্রে ১৬৪ জনকে ভিব্রিও কলেরিতে আক্রান্ত দেখা গেছে। যেহেতু সার্ভিলেন্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মাত্র একটি ছোট্ট অংশকে ভিব্রিও কলেরি পরীক্ষা করা হয়, সেহেতু সার্ভিলেন্স হাসপাতালের আওতাভুক্ত এলাকা হতে ভর্তি হওয়া সকল রোগীর মধ্যে ঢাকা হাসপাতালে ১৬ হাজার ৯৫০ এবং মিরপুর চিকিৎসা কেন্দ্রে ১ হাজার ৬৪০ ভিব্রি কলেরিতে আক্রান্ত ছিল বলে মনে করেন আইসিডিডিআর’বি-এর বিজ্ঞানীরা। এভাবে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আইসিডিডিআর’বি-এর ঢাকা হাসপাতালের আওতাভুক্ত এলাকার প্রতি একলাখ জনসংখ্যায় ২৮০ এবং মিরপুর চিকিৎসা কেন্দ্রের আওতাভুক্ত এলাকায় প্রতি একলাখ জনসংখ্যায় ৪৭৪ জন ভিব্রিও কলেরিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ঢাকা হাসপাতালের আওতাভুক্ত এলাকার কলেরার আনুমানিক হার ঢাকা শহরের কলেরার হার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই গবেষণায় যেসব ডায়রিয়া রোগীকে হিসাব করা হয়েছে, যারা কোন চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিল অথবা নিজ নিজ বাড়িতে শিরায় শরীরের পানিশূন্যতা পূরণকারী স্যালাইন নিয়েছিল। তবে এর বাইরে কলেরায় আক্রান্ত কিছু রোগী হয়ত ছিল, যারা মারাত্মক ডায়রিয়ায় ভুগেছে এবং বাড়িতে বসে শুধু খাওয়ার স্যালাইন অথবা অন্য কোন চিকিৎসা নিয়েছে। এই গবেষণায় তাদের গণনা করা হয়নি এবং সেজন্য এটি হাসপাতালের আওতাভুক্ত এলাকায় কলেরায় আক্রান্তের একটি রক্ষণশীল হার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। গবেষণা এলাকায় কলেরার প্রকোপ অনেক বেশি। মানুষের আচরণ পরিবর্তন সংক্রান্ত ইন্টারভেনশন, হাত-ধোয়ার ব্যাপ্তি বাড়ানো এবং পানি ব্যবহারের স্থানে তা পরিশোধন করাসহ অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কলেরার প্রকোপ কমিয়ে আনা যেতে পারে। তাছাড়া কম মূল্যে এখন কলেরার যে টিকা পাওয়া যায় তা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহে ব্যবহার হতে পারে।
×