ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বনানী সামরিক কবরস্থানে নানান আনুষ্ঠানিকতা

বিনম্র শ্রদ্ধায় পিলখানা হত্যাযজ্ঞের শহীদদের স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিনম্র শ্রদ্ধায় পিলখানা হত্যাযজ্ঞের শহীদদের স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলখানা হত্যাযজ্ঞে শহীদদের স্মরণ করছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রতিনিধি ছাড়াও তিন বাহিনী ও বিজিবি প্রধানগণ বনানী সামরিক কবরস্থানে সেনাকর্মকর্তা ফুল দিয়ে শহীদের শ্রদ্ধা জানান। তাঁরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করেন। এছাড়াও শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় নানা অনুষ্ঠান হয়। শহীদ সেনাকর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বুধবার সকাল নয়টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রতিনিধি মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোঃ জয়নুল আবেদীন, বীরবিক্রম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপির পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোজাম্মেল হক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী (যৌথভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ (যৌথভাবে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ শহীদের প্রতি স্যালুট প্রদান করেন। পরে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর পরই শহীদ পরিবারের সদস্যরা শহীদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। সকল সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে পবিত্র কোরআন খতম ব্যবস্থা এবং শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহফিলে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিজিবি সদর দফতর পিলখানায় শহীদ ব্যক্তিবর্গের স্মরণে বুধবার শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হয়েছে। শহীদদের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশে পিলখানাসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সকল রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন এবং বিজিবির সকল মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আজ সকাল দশটায় পিলখানার বিজিবি মহাপরিচালকের সচিবালয়ে শাহাদত বরণকারী তৎকালীন বিডিআরের কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর মোঃ নুরুল ইসলামের পরিবারকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার বার্ষিক অনুদানের চেক হস্তান্তর করবেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। বিকেল সাড়ে চারটায় পিলখানার বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদ ব্যক্তিবর্গের নিকটাত্মীয়গণ, পিলখানায় কর্মরত সকল অফিসার, জেসিও, অন্যান্য পদবীর সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করবেন। এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) রুহুল আলম চৌধুরী ও নিরাপত্তা প্রধান মেজর জেনারেল (অব) ফজলে এলাহী আকবর ও বিএনপি নেতা মেজর (অব) মোহাম্মদ মিজান প্রমুখ। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে পিলখানা বিডিআর সদর দফতরে স্মরণকালের জঘণ্যতম সেনা হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে। বিডিআর বিদ্রোহীরা ৫৭ মেধাবী ও চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সময় অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিদ্রোহীদের কৌশলে দমন করে রীতিমতো বিশ্বের কাছে নজির স্থাপন করেন। বিডিআর হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। বিদ্রোহীদের বিডিআর আইনে বিচার হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোন দিন যাতে কোন বাহিনীতে এমন বিদ্রোহের ঘটনা না ঘটে, এজন্য সরকার নানা উদ্যোগ নেয়। বিডিআর বিদ্রোহের পর বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে ফেলা হয়। নাম রাখা হয় বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)। নতুন আইনে বিদ্রোহের শাস্তি সবোর্চ্চ ৭ বছরের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড করা হয়।
×