ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কথোপকথনের অপর ব্যক্তির সন্ধান চলছে

সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেয়ার মামলা ॥ মান্না দশ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেয়ার মামলা ॥ মান্না দশ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্ষমতাসীন নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেয়ার মামলায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালত। কথোপকথনের অপর ব্যক্তির সন্ধান চলছে। ওই ব্যক্তি প্রবাসে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। তাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রবাসী আসামি ওয়ান ইলেভেনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে মাহমুদুর রহমানকে গুলশান থানায় দায়েরকৃত একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করা হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক আবদুল বারিক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের করা জামিন আবেদন বাতিল করেন বিচারক। প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে এবং সামরিক হস্তক্ষেপে ক্ষমতাসীন নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্নার দুইটি কথোপকথন গত রবিবার প্রকাশ পায়। এরপর থেকেই সারাদেশে হইচই শুরু হয়। নানা শ্রেণী পেশার মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফ থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেফতারের দাবি ওঠে। এমন দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহমুদুর রহমানের সনদ বাতিলের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাহমুদুর রহমান মান্না কোন সনদ অর্জন করতে ব্যর্থ হন। এজন্য এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় দুইটির বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি দেখামাত্র গণধোলাইয়ের হুমকি দেয়। এমন পরিস্থিতিতে মাহমুদুর রহমান মান্না আত্মগোপনে চলে যান। গত সোমবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে ডিবি পরিচয়ে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে তার ভাতিজি সোহানারা শারমিনের বনানীর ই ব্লকের ১৭/এ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়। এ ব্যাপারে মাহমুদুর রহমান মান্নার ভাবি সুলতানা বেগম বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। বরাবরই মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ডিবি কর্তৃক গ্রেফতারের বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করে আসছে ডিবি পুলিশ। এদিকে মাহমুদুর রহমানের কথোপকথনের বিষয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় ১৪৫৯ নম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি করে পুলিশ। সাধারণ ডায়েরির অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন সাধারণ ডায়েরি দায়েরকারী গুলশান থানার উপপরিদর্শক শেখ সোহেল রানা। মামলা নম্বর ৩২। মামলার অভিযোগে যা আছে ॥ মাহমুদুর রহমান মান্না গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাত এগারোটায় গুলশান-২ নম্বরের ১০৬ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাড়ির এ/১ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে অজ্ঞাত এক প্রবাসীর সঙ্গে টেলিফোন ভাইবারে কথা বলেন। কথোপকথনে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাত করতে সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেয়ার কথা বলা হয়। কথোপকথনে সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিপথগামী করার চেষ্টার কথাও হয়। সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমানে কর্মরত পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহের কথা প্রকাশ পায়। কথোপকথনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান সহিংস আন্দোলন, জানমালের ক্ষতিসাধন ও সরকার পতন সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা হয়। জিওসি (একটি সেনানিবাসের প্রধান) পর্যায়ে কথাবার্তা বলার আলোচনাও হয়। মান্নার সঙ্গে কথোপকথনকারী প্রবাসী আসামি ওয়ান ইলেভেনের ঘটনার সরাসরি সম্পৃক্ত বলে আলাপচারিতায় প্রকাশ পায়। প্রবাসী আসামি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে লে. জেনারেল এমনকি বর্তমান সেনাপ্রধানের সঙ্গেও আলাপ করিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন। প্রবাসী আসামি সেনাবাহিনীর ১৯ জন সিনিয়র কর্মকর্তার মধ্যে ১২ জনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন বলে মাহমুদুর রহমানকে জানান। মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথোপকথন স্বীকার করেছেন বলেও মামলার অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৩১ ধারায় দায়েরকৃত মামলায় মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন সরকারকে সেনাবাহিনীকে উস্কানি দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ধারায় সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ- অথবা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদ- ও অর্থদ-ের বিধান রয়েছে। গুলশান থানায় দায়েরকৃত এই মামলার প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাত এগারোটার দিকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে রাজধানীর ধানম-িতে অবস্থিত স্টার কাবাব নামের খাবার হোটেল থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। রাত সাড়ে বারোটার দিকে র‌্যাব মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেফতার করার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এমনকি ওই রাতেই গুলশান থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। রাতেই গুলশান থানা পুলিশ মাহমুদুর রহমানকে নিরাপত্তার কারণে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে মান্নাকে কড়া নিরাপত্তায় পুলিশের একটি ছোট প্রিজনভ্যানযোগে গুলশান থানায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করে দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। বিএনপির বিবৃতি ॥ মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটকের খবরে বুধবার বিএনপির প্যাডে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে মান্নাকে তার পরিবারের কাছে ফেরত দিতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ঢাবিতে জুতা মিছিল ॥ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লাশ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী’ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে জুতা মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। পরে তার কুশপুতুল দাহ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দ্বিতীয় দফায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। কুশপুতুলে মাহমুদুর রহমানকে ‘কালসাপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনের সামনে থেকে ‘বহুরূপী ও তথাকথিত সুশীল মান্নাকে ঘৃণা প্রদর্শন ও অবাঞ্ছিতকরণ’ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। এরপর ‘মান্না চোরার দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’ সেøাগানে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান ঘুরে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর ডাকসু ভবনের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
×