ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

নাশকতা ও হত্যা বন্ধ না করলে আইনী ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

নাশকতা ও হত্যা বন্ধ না করলে আইনী ব্যবস্থা

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে হত্যাকা-, সন্ত্রাস ও নাশকতা বন্ধ করার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি পুনর্বার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে ক্ষমতায় আরোহণের চেষ্টা কোন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ হতে পারে না। শুধুমাত্র নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থেই বিএনপি নেত্রী (খালেদা জিয়া) হরতাল দিচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াত পরস্পরের দোসর। তাদের নাশকতার একটাই উদ্দেশ্য- যুদ্ধাপরাধী রক্ষা এবং দুর্নীতির মামলায় সাজা থেকে খালেদা জিয়াকে রক্ষা করা। জনসম্পৃক্ততাবিহীন এই কার্যক্রমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই নাশকতা চালানো হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের হরতালের নামে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবসা-বাণিজ্য, রফতানি ও অন্যান্যভাবে দেশের ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ১০১ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ সকল কার্যক্রম দেশের প্রচলিত আইনে মৃত্যুদ- পাওয়ার উপযোগী অপরাধ। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারী দলের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, গত ৫ জানুয়ারি হতে টানা ৫২ দিন ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট হরতাল অবরোধের নামে দেশে এক চরম নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার লিপ্সায় অন্ধ হয়ে তারা দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ, দেশের নিরপরাধ সাধারণ নারী-পুরুষ এমনকি নিষ্পাপ শিশুদেরকেও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে। শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম প্রক্রিয়া হলো আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা। আর সেই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা আরোহণের চেষ্টা কোন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ হতে পারে না। পেটের তাগিদে কাজ করতে বেরিয়ে বিগত ৫২ দিনে ১০১ জন মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে যার অধিকাংশ আগুনে পুড়ে মারা গেছে। পেট্রোলবোমাসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কাজে সহস্রাধিক ব্যক্তি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। এক হাজার ১৭৩টি যানবাহন আগুনে পুড়ে গেছে ও ভাংচুর করা হয়েছে। ছয়টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, ২৫ দফায় ট্রেনে নাশকতা করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন বিএনপি-জামায়াত জোট এই নাশকতা করছে? তারা জানে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ৫ বছর। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন এই নাশকতা? কেউ কেউ এই কার্যক্রমকে রাজনৈতিক কার্যক্রম বলতে চায়। কিন্তু আসল কারণটা অন্য। দেশবাসীর সামনে বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতার মূল কারণ তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি-জামায়াত পরস্পরের দোসর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যুদ-, ২ জনকে আমৃত্যু কারাবাস, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি সম্পূর্ণ অনুসরণ করে এই বিচার সম্পন্ন হয়েছে। মৃত্যুদ- প্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র একজনের রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাদবাকিদের রায় আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কার্যকর করা হবে। এই রায়গুলোর বাস্তবায়ন বন্ধ করা বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্রের দুর্নীতির নয়টি মামলা আদালতে বিচারাধীন। শুধুমাত্র জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা আত্মসাতের বিচার চলছে। এই মামলা বিলম্বিত করার জন্য নানারকম কারণ দেখিয়ে মামলার বার বার সময় নেয়া হয়েছে। এই মামলা সাজা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট নাশকতার কাজ করছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতির অর্থ আত্মসাতের বিষয়ক আরও অনেক মামলা বিএনপি জোটের নেতাদের রয়েছে। এই মামলাগুলো থেকে বাঁচার জন্য তারা পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ মারছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী সম্প্রতি আন্দোলনে ৭ দফা দাবি দিয়েছে। এর মধ্যে জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য কোন দাবি নেই, সব দাবি ব্যক্তি স্বার্থের দাবি। আর এ কারণেই জনগণ তাঁর সঙ্গে নেই। তিনি বলেন, বিএনপি ৫২ দিন ধরে অবরোধ দিয়েছে। প্রায় সকল কার্যদিবসে হরতাল দিয়েছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে দেশব্যাপী যানবাহন চলছে, ঢাকা শহরে হরতাল-অবরোধেও যানজট হচ্ছে, শুধুমাত্র দূরপাল্লার যানবাহন কম চলছে। জনসম্পৃক্ততাবিহীন এই কার্যক্রমে তাই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জামায়াত-শিবিরের কর্মী, বিএনপির বিপথগামী কিছু লোক এবং সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই নাশকতা চালানো হচ্ছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষ অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তাঁরা আপনার ব্যক্তি স্বার্থের আন্দোলনে নেই। আপনার নেতাকর্মীরা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। যদি নাশকতা এবং হত্যা বন্ধ না হয় সরকার সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তাই আমার অনুরোধ বন্ধ করুন এই হত্যাকা-, বন্ধ করুন এই সন্ত্রাস। তিনি বলেন, দেশের বিকাশমান অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এ আন্দোলন কার স্বার্থে করা হচ্ছে- এটি আজ সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসা। দেশের প্রায় ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর ভাগ্য নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। নিজের নাতি-নাতনি সন্তানের শিক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সাধারণ নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এ প্রক্রিয়া আর চলতে দেয়া যায় না।এ জন্য জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য এ ধরনের কর্মকা-ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী, অর্থায়নকারী বা পরিকল্পনাকারীদের কর্মকা- সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ গ্রেফতার করছে। তাদের এ ধরনের মৃত্যুদ- পাওয়ার উপযোগী। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধাগ্রস্ত করবে ॥ জাতীয় পার্টির এম এ হান্নানের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সরকারকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধাগ্রস্ত করবে। তদুপরি চলমান পরিকল্পনার আলোকে উন্নয়নের অন্তরায়সমূহ দূরীভূত করে উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও চাঙ্গা করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি জানান, অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কার্যক্রম বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয়সমূহে নীতি- কৌশল গ্রহণ করা হবে। সারাবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে ॥ সরকারি দলের মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর প্রতি বৈরিতা নয়, সকল বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানই হবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র। আমাদের দৃঢ় ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে অর্জিত সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও দুর্নীতির তকমা ঘুচিয়ে আমরা বাংলাদেশকে একটি শান্তিপ্রিয়, উন্নয়নকামী ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। ২০২১ সালে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে বিদ্যুত ॥ সরকারী দলের আবদুর রহমান বদির প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। ২০০৬ সালে দেশের ৪৩ ভাগ লোক বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করত যা বর্তমানে ৭০ ভাগে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের এ পর্যন্ত ৬৭টি বিদ্যুতকেন্দ্র হতে মোট ৫ হাজার ২৫১ মেগাওয়াট এবং ভারত হতে আমদানির মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতসহ সর্বমোট ৫ হাজার ৭৫১ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যুতের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াট।
×