ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বেচ্ছাশ্রম

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

স্বেচ্ছাশ্রম

স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে জনকল্যাণে নানা মহতী উদ্যোগের কথা এখনও শোনা যায়। কোথাও চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি সংস্কার করছেন স্থানীয় গ্রামবাসী। কোথাও বা বাঁধ-সাঁকো তৈরির কাজ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সরকার বা জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়ে মানুষ নিজ উদ্যোগে এসব কাজ করছে। তেমনি এক উদ্যোগের কথা উঠে এসেছে মঙ্গলবারের জনকণ্ঠে। সোমবার সাতক্ষীরার শ্যামনগরে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দেয়। ভাঙ্গন থেকে এলাকাকে বাঁচাতে সরকারী সহায়তার কথা না ভেবে পাঁচ শতাধিক গ্রামবাসী সেখানে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ শুরু করে। দ্রুত এ বাঁধটি সংস্কার করা না হলে পরবর্তী জোয়ারে উপজেলার গোটা গাবুরা ইউনিয়নই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এতে ক্ষতি হতো জনপদের হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের, ধানক্ষেত ও জনবসতি। পানিতে তলিয়ে যেত ইউনিয়নের ১১টি গ্রাম। জনকল্যাণে এই ধরনের মহতী কাজের দৃষ্টান্ত অনেক দেয়া যাবে। তবে দশের কাজ দশে মিলে করা উচিত এই শিক্ষাই পাওয়া গেল এ ঘটনায়। এই প্রচেষ্টা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে গ্রামীণ সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। গ্রামীণ জীবনেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। গ্রামবাংলার মেঠোপথের চিত্র ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। উন্নয়ন ঘটছে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের। যেসব স্থানে রাস্তা ছিল না সেখানে রাস্তা হচ্ছে। কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ হচ্ছে, প্রশস্তও হচ্ছে। কোথাও কোথাও এক লেন থেকে চার লেন রাস্তা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই অগ্রযাত্রায় গ্রামীণ মানুষের তৈরি বা উৎপাদিত জিনিস বা দ্রব্যাদি সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমনকি দেশ গড়িয়ে বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছে ওইসব জিনিস বা উৎপাদিত পণ্য। গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের ফলে এলাকার বেকার যুবকরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। শুধু যুবকরাই নন, এ কাজের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে ওইসব অঞ্চলের দুস্থ ও অতিদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের। এত উন্নয়ন এবং সম্ভাবনার পরও দেশের বহু গ্রামে এখনও সরকারী সহায়তা বা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তাই এসব অঞ্চলের কোথাও কোথাও নিজ উদ্যোগেই এসব মহতী কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। ‘দশের লাঠি একের বোঝা’-এ প্রবাদটি আমাদের শিক্ষা। উল্টো করে ভাবলে একের বোঝা দশ জনের জন্য অতি সহজ। এক সময় এই ধরনের প্রবাদের ব্যাপক প্রচলন ছিল সমাজের মহতী কাজের ক্ষেত্রে। তখন দেখা যেত স্বেচ্ছাশ্রম দেয়ার জন্য পাড়ায় মহল্লায় নানা সংগঠন কাজ করত। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-জনপ্রতিনিধিসহ নানা পেশার মানুষ, বিশেষ করে তরুণেরা এই সব সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকত। সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে সমস্যা বিশেষ করে ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার, আগাছা পরিষ্কার, সাঁকো তৈরি, ভাঙ্গা রাস্তা মেরামত, মাঠসহ নানা সেবামূলক কাজ স্বেচ্ছাশ্রমে সম্পন্ন হতো। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যমী ছাত্ররা এই ধরনের স্বেচ্ছাশ্রম দিত। এখন আর ব্যাপকভাবে সেরকম দেখা যায় না। সেটা করা যে কঠিন তাও নয়, এর জন্য দরকার সকলের আন্তরিকতা, সদিচ্ছা। তারপরও বলবো শ্যামনগরের মতো দু-একটি দৃষ্টান্ত আশা জাগায়, প্রেরণা যোগায়।
×