ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

বান্দরবানে প্রভাবশালীদের লালসার কবলে ঝিরি-ঝর্ণা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বান্দরবানে প্রভাবশালীদের লালসার কবলে ঝিরি-ঝর্ণা

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ২৪ ফেব্রুয়ারি ॥ বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন পাহাড়ি ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে অবাধে পাথর উত্তোলন করছে ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদরের টংকাবতী, রোয়াংছড়ির নোয়াপতং, রুমা, থানচি, আলীকদম ও লামা উপজেলার লাইনঝিরি, কাঁকড়াঝিরি, হরিণঝিরি, শীলের তোয়া, কাঁঠালছড়া, নন্দির বিল, ফাঁসিয়াখালী এলাকার বিভিন্ন ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে বারুদের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর উত্তোলন করছে পাচারকারী চক্র। দীর্ঘদিন ধরে অবাধে পাথর উত্তোলন করার ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে জেলার পাহাড়ি-ঝিরি ও ঝর্ণা। অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা সদরের টংকাবতী ইউনিয়নে মকবুল উকিল, রোয়াংছড়ি উপজেলায় আবুল বশর ড্রাইভার, ফিরোজ, বাঘমারার সোনাইঝিরি থেকে মোজাম্মেল হক বাহাদুর ও লেস কামাল, রুমা উপজেলায় কামাল ড্রাইভার, থানচি উপজেলায় থানছি আওয়ামী লীগের সভাপতি মং থোয়াই ম্যা রনি, লামা উপজেলায় লামা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, আলীকদম উপজেলায় মোঃ আবুল কালামসহ আরও অনেকে অবৈধভাবে অবাধে পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান জানান, কয়েক বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বিভিন্ন ঝিরি থেকে ভাসমান পাথর সংগ্রহের কথা বলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পাথর উত্তোলন করছে। ফলে পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের পানির উৎস হিসেবে খ্যাত ঝিরিগুলো মরা ঝিরিতে পরিণত হচ্ছে। আরও জানা গেছে, অনুমোদন ছাড়া পাথর আহরণ নিষিদ্ধ হলেও একশ্রেণীর ঠিকাদার জেলা প্রশাসন থেকে কোন মতে একটি ঝিরি পাথর উত্তোলনের অনুমতি নিয়ে এলাকার যত ঝিরি আছে সব ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করছে। থানচি সড়ক নির্মাণ কাজে অবৈধ পন্থায় পাথর আহরণ বন্ধ চেয়ে পৃথক দুইটি অভিযোগ গত বছরের ২০ অক্টোবর ও ১৮ নবেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জেলা প্রশাসক বরাবর দায়ের করা হয়। অভিযোগে দাবি করা হয়, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে অবৈধ উপায়ে আহরিত পাথর দিয়ে আলীকদমÑথানচি সড়ক নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। আলীকদম উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান কাইনথপ ম্র্রো জানান, আলীকদম-থানচি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে পাথর আহরণ বন্ধে দেরি করা হলে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণ কাজে মাংগু ও তৈনফা মৌজার পাহাড়ি ঝিরি ও ছড়া থেকে অবৈধভাবে পাথর আহরণ ও পামিয়া পাড়ার আশপাশের ঝিরি ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে পানির উৎসস্থল নষ্ট হওয়ার কারণে খাবার উপযোগী পানি সংগ্রহ করতে পারছে না, এমন অভিযোগ স্থানীয় ম্রো আদিবাসীদের। পামিয়া পাড়ার বাসিন্দা রেং ইয়ং ম্রো বলেন, সরকারীভাবে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা ছিল না এখানে, ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করে স্থানীয়রা ব্যবহার করলেও এখন পাথর উত্তোলনের ফলে পানি নেই, যা আছে তা ঘোলা, পান করার অযোগ্য।
×