ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ড গড়ে জিম্বাবুইয়েকে হারাল ক্যারিবীয়রা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

রেকর্ড গড়ে জিম্বাবুইয়েকে হারাল ক্যারিবীয়রা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলের বিস্ফোরক এক ইনিংসে যত বড় সংগ্রহ গড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ তা আগেভাগেই কোণঠাসা করে ফেলেছিল জিম্বাবুইয়েকে। মানুকা ওভালে মঙ্গলবার ক্যারিবীয় ইনিংসেই অনেকগুলো রেকর্ড দেখলো ক্যানবেরাবাসী। সে কারণেই ইনিংসের শুরুতে সম্ভবত ক্যানবেরার আকাশটা কাঁদল জিম্বাবুইয়ের আসন্ন দুঃখে। বৃষ্টির কারণে দুই ওভার কমিয়ে দেয়া হলো জিম্বাবুইয়ের। ক্যারিবীয়রা প্রথম ব্যাট করে বিশ্বকাপে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো গেইলের ২১৫ ও মারলন স্যামুয়েলসের অপরাজিত ১৩৩ রানের সুবাদে ২ উইকেটে ৩৭২ রান তুলেছিল। দ্বিতীয় উইকেটে এ দু’জন ৩৭২ রানের যে জুটি গড়েন ওয়ানডে ইতিহাসে সেটি ছিল যে কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপের বিশ্বরেকর্ড। ৪৮ ওভারে পরিবর্তিত লক্ষ্য ৩৬৩ রান তাড়া করতে গিয়ে ৪৪.৩ ওভারে জিম্বাবুইয়ে ইনিংস গুটিয়ে যায় ২৮৯ রানে। ফলে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ৭৩ রানের জয় তুলে নেয় ক্যারিবীয়রা। এটি চলতি বিশ্বকাপে তাদের তিন ম্যাচে দ্বিতীয় জয় আর জিম্বাবুইয়ের সমান ম্যাচে দ্বিতীয় হার। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচটায় গেইলের দিকে ছিল সবার নজর। কারণ চলমান বিশ্বকাপে আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন গেইল এবং দেড় বছর আর ১৯ ইনিংস পেরিয়ে গেছে তার কাছ থেকে কোন সেঞ্চুরির দেখা মেলেনি। এই ১৯ ইনিংসে তিনি একটি অর্ধশতক হাঁকাতে পেরেছিলেন। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টস জিতে ক্যারিবীয় ব্যাটিংয়ে আসলে গেইল ছিলেন নির্লিপ্ত। স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ভঙ্গী বাদ দিয়ে তিনি ধীরেসুস্থে শুরু করেন। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সঙ্গী ডোয়াইন স্মিথকে (০) হারিয়ে বসেন তিনি। তাকে সরাসরি বোল্ড করে দেন জিম্বাবুইয়ে পেসার টিনাশে পানিয়াঙ্গারা। তবে জিম্বাবুইয়ের সাফল্য সেই একটিই। তখনও বোঝা যায়নি কি হতে চলেছে এবং ইনিংসের শেষ বলেই আরেকটি অকেজো সাফল্য পাবেন জিম্বাবুইয়ে বোলাররা। গেইল ও মারলন স্যামুয়েলস জুটি ভাঙ্গতে ৭ বোলার প্রচেষ্টা চালালেন। কিন্তু সেটা সফল হয়নি। গেইলের ক্যারিয়ারের ২২তম শতক হওয়া পর্যন্তও টের পাওয়া যায়নি অনেক বড় একটি সংগ্রহ দাঁড় করাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বাধিক ব্যক্তিগত সেঞ্চুরির মালিক গেইল এদিন কুমার সাঙ্গাকারা ও হার্শেল গিবসকে (২১ শতক উভয়ের) ছাড়িয়ে স্পর্শ করেছেন বিরাট কোহলি ও সৌরভ গাঙ্গুলীকে (২২ সেঞ্চুরি উভয়ের)। ৫১ বলে অর্ধশতক আদায় করেন গেইল মাত্র ৪ চার ও ১ ছক্কায়। এরপর আরও ধীর হয়ে যান তিনি। আরও ৫৪ বল খেলে তিনি শতরান পূর্ণ করেন। তবে আরও ১টি চার ও ৪ ছক্কা হাঁকান। ১০৫ বলে ১০০। তখনও থামার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। অপরদিকে, গেইলের ছক্কা হাঁকানো শুরু হতেই স্যামুয়েলস মূলত মনোযোগ দিয়েছেন তাকে স্ট্রাইক দিতে। এরপরই ঝড় শুরু করেন গেইল। তবে ব্যক্তিগত ১২১ রানের মাথায় টানা দুই বলে ক্যাচ দিলেও আউট হননি তিনি। কারণ পানিয়াঙ্গারার বল দুটিই ‘নো’ হয়েছিল। সুযোগ ওই দুটিই দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস পেয়ে যান তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার গ্যারি কার্স্টেন অপরাজিত ১৮৮ রান করেছিলেন আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে। সেটা ছাড়িয়ে বিশ্বকাপের নতুন রেকর্ড গড়েন গেইল ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। মাত্র ১৩৮ বলে ৯ চার ও ১৬ ছক্কায় ২০০ রান করেন তিনি। এটি ছিল ওয়ানডের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি। এর আগে শেবাগ ১৪০ বলে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। এটি ছিল ওয়ানডে ইতিহাসে পঞ্চম ডাবল সেঞ্চুরি। ঠিক এই দিনেই ২০১০ সালে শচীন টেন্ডুলকর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি (২০০*) হাঁকিয়েছিলেন গোয়ালিয়রে। এরপর অপর দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যান বীরেন্দর শেবাগ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২১৯ করেছিলেন ২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর ইন্দোরে এবং রোহিত শর্মা ২০১৩ সালের ২ নবেম্বর ব্যাঙ্গালোরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০৯ এবং গত বছর কলকাতায় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিনিই সর্বোচ্চ ২৬৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ১৩ নবেম্বর। এই প্রথম বিশ্বকাপে এবং ভারতের বাইরে কোন ভারতীয় ব্যাটসম্যান ছাড়া কোন ক্রিকেটার ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকালেন। ইনিংসের শেষ বলে গেইলকে আউট করেন টানা দুই ‘বিমার’ ছুড়ে বাতিল বোলার টেন্ডাই চাতারা স্থলে বোলিং করতে আসা হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ততক্ষণে গেইলের রান ১৪৭ বলে ১০ চার ও ১৬ ছক্কায় ২১৫! এক ইনিংসে সর্বাধিক ছক্কা মারার যৌথ রেকর্ডে তিনি সঙ্গী হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ভারতের রোহিতের। তবে স্যামুয়েলস অপরাজিত থাকেন ক্যারিয়ারের অষ্টম শতক হাঁকিয়ে ১৫৬ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় ক্যারিয়ারসেরা ১৩৩ রান করে। জুটিতে ওঠে ৩৭২ রান। যে কোন উইকেটে ওয়ানডের ইতিহাসে সর্বাধিক রানের জুটি ছিল এটি। এর আগে ভারতের গাঙ্গুলী ও রাহুল দ্রাবিড় ৩৩১ রানের জুটি গড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালে। সেটিকে ছাড়িয়ে যান এ দু’জন। শেষ ১০ ওভারে ১৫২ রান ওঠে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২ উইকেটে ৩৭২ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় ক্যারিবীয়রা। এটি ছিল ওয়ানডেতে তাদের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে গত বছর ৮ জানুয়ারি হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪ উইকেটে ৩৬৩ রান তুলেছিল ক্যারিবীয়রা। বিশাল সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে শুরুতেই রেগিস চাকাবভার (২) উইকেট হারায় জিম্বাবুইয়ে। এরপরই বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হলে পরবর্তীতে ৪৮ ওভারে ৩৬৩ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয় জিম্বাবুইয়েকে। মাত্র ৪৬ রানে ৩ উইকেট হারালেও পরে শন উইলিয়ামসের ৬১ বলে ৯ চারে ৭৬ ও ক্রেইগ আরভিনের ৪১ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫২ রানের দুটি লড়াকু ইনিংসের সুবাদে ৪৪.৩ ওভারে ২৮৯ রান তুলে শেষ হয় জিম্বাবুইয়ের ইনিংস।
×