ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গেরো কাটলেন শিখর

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

গেরো কাটলেন শিখর

জিএম মোস্তফা ॥ ১৯৯২, ১৯৯৯ এবং ২০১১ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয় ভারত। কিন্তু দুর্ভাগ্য। তার তিনটির সবকটিতেই ভারতের লজ্জাজনক পরাজয়। অবশেষে সেই গেরো কাটল তাদের। দীর্ঘ? ২৩ বছর পর সেই গেরো কাটার নায়ক শিখর ধাওয়ান। রবিবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস উপহার দেন ২৭ বছর বয়সী ধাওয়ান। আর তাঁর সেঞ্চুরির সৌজন্যেই বড় স্কোর গড়ে ভারত। এরপর নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেই ১৩০ রানের বিশাল জয় পায় মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় ভারত। সেই ম্যাচেই সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছিলেন শিখর ধাওয়ান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ৭৩ রানে তাকে থামিয়ে দেন পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন ধাওয়ান। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম শতক তাঁর। কিন্তু ক্যারিয়ারের সপ্তম। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড শিখর ধাওয়ানের খুব চেনা। স্ত্রী আয়েশা মুখার্জির সঙ্গে এই মাঠেই যে প্রথম দেখা হয়েছিল তাঁর। তার পর তো বিয়ে-শাদি করে এ শহরকে শ্বশুরবাড়িই বানিয়ে ফেলেন তিনি। সেই মাঠেই যেন পুনর্জন্ম হলো তাঁর। প্রকৃতপক্ষে এমসিজিতে রবিবার ছিল শুধুই ধাওয়ানের। যদিও বা ম্যাচের আগে মনে হয়েছিল প্রোটিয়াদের চার পেসার আর এক স্পিনার ভারতীয়দের খুব ভোগাবে। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। দলের ৯ রানের সময় দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে এবি ডি ভিলিয়ার্সের থ্রোতে রোহিত শর্মা আউট হলেও শুরুর ধাক্কা সামলিয়ে নেয় ভারত। রোহিতের দ্রুত বিদায়ের পর জুটি বাঁধেন শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলি। প্রোটিয়া বোলারদের দেখে-শুনে সাবধানেই ব্যাট চালিয়েছেন তাঁরা। বলকে পুরোনো হতে দিয়েছেন। সুযোগ-সুবিধা মতো আক্রমণ শানিয়েছেন দলের সেরা দুই তারকা ব্যাটসম্যান। তবে কোহলির চেয়ে ধাওয়ানের ব্যাটই চলেছে বেশি। ফিফটি করেছেন, জুটি পাকা করেছেন। দলও পায় শক্তিশালী ভিত। এরপর ১৩৬ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন। ৪৬ রান করে কোহলি সাজঘরে ফিরে গেলেও একপাশ আগলে রাখেন ধাওয়ান। তাঁর সঙ্গে জুটি বাঁধে আজিঙ্কা রাহানে। তবে ওয়েন পার্নেলের ৪৩ ওভারের চতুর্থ বলে আউট হওয়ার আগেই ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ধাওয়ান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অসাধারণ এই ইনিংসটি সাজাতে ১৪৬ বল খেলেন ধাওয়ান। যেখানে ১৬টি চার ও ২টি ছক্কার মার ছিল। তবে শিখর ধাওয়ান আউট হওয়ার পর ভারতও খুব বেশি এগোতে পারেনি। মাত্র ৩০৭ রানেই থেমে যায় তাদের ইনিংস। তবে জয় পেতে মোটেও সমস্যা হয়নি বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। সৌরভ-দ্রাবিড় আর কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকর এখন অতীত ইতিহাস। দলে নেই এক সময় ঝড় তোলা শেবাগ-গম্ভীর-যুবরাজের মতো ক্রিকেটাররাও। তবে তাদের সেই অভাব মোটেও বুঝতে দিচ্ছেন না কোহলি-ধাওয়ানরা। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচের নায়কও যে এই দুই তারকা। গত কয়েক বছর ধরেই পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন তাঁরা। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে ধাওয়ানের ব্যাট থেকে আসে ৭৩ রান। আর বিরাটের ব্যাট থেকে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় ম্যাচে ধাওয়ানের শতক আর কোহলির ৪৬। একদিনের ম্যাচে ১৩৭ রান ধাওয়ানের ইনিংস সর্বোচ্চ। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে যে কোন দেশের ব্যাটসম্যানের জন্যই সর্বোচ্চ। তার আগে বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৩৪ রান ছিল স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের। এই ইনিংসের সৌজন্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটাও নিজের করে নেন শিখর ধাওয়ান। ধাওয়ানের পারফরমেন্সে দারুণ সন্তুষ্ট অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। জানালেন, কঠোর অনুশীলনের পরই আজকের এই শিখর ধাওয়ান, ‘শিখর ধাওয়ান কঠোর অনুশীলন করেন। অন্য যে কারও চেয়ে বেশি পরিশ্রমী ক্রিকেটার সে। পারফরমেন্সেই আমরা তার প্রমাণ দেখছি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁর স্বাভাবিক খেলাটাই খেলেছে ধাওয়ান। শট খেলতে কোন ধরনের ভয় ছিল না তার মাঝে। একইভাবে স্ট্রাইকিং রেটও দারুণ সচল রেখেছে সে। ক্রিজে ৪৪ ওভার পর্যন্ত অবস্থান করেছে ধাওয়ান। আর এটা অন্য ব্যাটসম্যানদের জন্যও সহজ হয়েছে।’ বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচেই জয়। দুই প্রতিপক্ষও বেশ শক্তিশালী। তাই ধোনিও বেশ রোমাঞ্চিত। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলেই ব্যাক টু ব্যাক জয় পাওয়াটা সন্তোষজনক। বিশেষ করে দুই ম্যাচেই আমরা যেভাবে জিতেছি। আমাদের জন্য পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা দুটি ম্যাচই গুরুত্বপুর্ণ ছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে আমাদের পরিপূর্ণ ব্যাটিং পারফরমেন্স ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ঠিত তা।’ বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ধাওয়ানের এমন ইনিংসের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীও, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসই মূলত ধাওয়ানকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল।’
×