ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পলাতক জব্বারের আমৃত্যু কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পলাতক জব্বারের আমৃত্যু কারাদণ্ড

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পলাতক পিরোজপুরের রাজাকার কমান্ডার জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আসামি জব্বারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষেও আনা পাঁচটি অভিযোগের সবক’টি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। রায়ে আনা অভিযোগের মধ্যে এক, দুই, তিন এবং পাঁচে মৃত্যুদণ্ড ও চার নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। আনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগ মৃত্যুদণ্ড যোগ্য হলেও বয়সের বিবেচনায় তাকে এই দণ্ড দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। রায় উপলক্ষে ট্রাইব্যুনালের বাইরে ও ভেতরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, শান্তি কমিটির একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে শুধু পলিসি মেকিংই করেনি, তারা সরাসরি অংশগ্রহণও করেছে। বিভিন্ন জায়গায় সেই শান্তি কমিটির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে মঠবাড়িয়াতে আব্দুল জব্বার বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। জব্বার মঠবাড়িযার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। পাক সেনাদের সঙ্গে যোগসাজশে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। প্রত্যেকটি অপরাধের সঙ্গে জড়িত এবং সেটা জঘন্য অপরাধ তাতে কোন সন্দেহ নেই। একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো জব্বার যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন তাতে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- প্রাপ্য হলেও বয়স বিবেচনায় আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের ইসলামীর ‘গুরু’ গোলাম আযমকেও বয়স বিবেচনায় ৯০ বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছিল, যিনি রায় ঘোষণার এক বছরের মধ্যেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ৮২ বছর বয়সী জব্বার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন বলে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার রায়ের প্রথম অংশ পাঠ করেন বিচারপতি মোঃ আনোয়ারুল হক। পরে জব্বারের বিরুদ্ধে রায় পাঠ করেন মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম এবং শেষ করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। রায়ে ১শ’ ৪১ পৃষ্ঠা রয়েছে। সকাল ১১টা ৫ মিনিটে এজলাসে আসন গ্রহণ করেন বিচারপতিগণ। রায় পাঠ শুরু করেন ১১টা ৭ মিনিটে। রায় পাঠ শুরু করার আগে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, উপস্থিত চীফ প্রসিকিউটর, সুধীজন ও সাংবাদিক বৃন্দ আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি। আজকের এই দিনে ২০১৩ সালের আমি এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করি। বলতে পারেন এটা বছর পূর্তি। নতুন বছরও বলতে পারেন। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর পাঁচটি রায় এবং তার আগে অত্র ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি মিলিয়ে মোট ৮টি রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় প্রসিকিউশন পক্ষে চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, আব্দুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, তুরিন আফরোজ, জাহিদ ইমাম, রেজিয়া সুলতানা চমন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এ্যাডভোকেট আবুল হাসান। রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউটর জাহিদ হোসেন বলেছেন আমাদেরকে ট্রাইব্যুনালের রায় মেনে নিতেই হবে। আমরা আশা করেছিলাম তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- হবে। ৫টি অভিযোগের মধ্যে সমস্ত অভিযোগই প্রমাণ করতে পেরেছি। পূর্ণাঙ্গ রায় পেয়ে পরবর্তী সিদ্ধন্ত গ্রহণ করা হবে। প্রসিউকটর তুরিন আফরোজ জানিয়েছেন, ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাতে আমরা খুশি। কিন্তু তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়নি, এটা অপ্রত্যাশিত। এর আগে কাদের মোল্লার রায়ে আপীল বিভাগে ও ট্রাইব্যুনাল-২ বলেছিলেন শান্তি কমানোর ক্ষেত্রে বয়স গ্রাউন্ড হতে পারে না। অপরাধের ভয়বহতা, ভিকটিম পরিবারের প্রত্যাশা ও জাতির প্রত্যাশাগুলো বিবেচনা করেই আমরা আশা করেছিলাম আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। বয়স বিবেচনার ক্ষেত্রে ‘বিবেচনা’ শব্দটাই বলা হয়েছে। যদিও বয়স বিবেচনা করার কোন আবেদন আসামিপক্ষ থেকে ছিল না। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে হলে আমাদের পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এজন্য যে আসলে ট্রাইব্যুনাল কোন বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েছেন বা কী ব্যাখ্যা উল্লেখ আছে। ১০ লাখ টাকাটা ফাইন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কমপেনশেন না। এটা রাষ্ট্র-তহবিলে যাবে। আমরা আশা করেছিলাম জব্বারের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। কিন্তু বয়স বিবেচনায় তাকে আমৃত্যু করাদ- প্রদান করা হয়েছে। রাষ্ট্র নিযুক্ত আসামি পক্ষের আইনজীবী আবুল হাসান বলেছেন, জব্বার যদি ট্রাইব্যুনালে হাজির থাকত তাহলে তিনি খালাস পেতে পারতেন। আমি আশা করি তিনি দেশে ফিরে আপীল করবেন এবং ন্যায় বিচার পাবেন। ১৭তম রায় ॥ ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ১৭টি মামলার রায় হয়েছে। তার মধ্যে ১৮ জনকে দ- প্রদান করা হয়েছে। যাদের দ- দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন, জামায়াতের সাবেক রোকন বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ (মৃত্যুদ-), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা (আমৃত্যু কারাদ- (আপীলে মৃত্যুদ-, পরবর্তীতে রায় কার্যকর), জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (মৃত্যুদ-) আপীলে আমৃত্যু কারাদ-, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (মৃত্যুদ-) আপীল বিভাগেও মৃত্যুদ- বহাল। বুধবার পূর্ণাঙ্গ রায় রেরিয়েছে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম (৯০ বছরের কারাদ-) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (মৃত্যুদ-), বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (মৃত্যুদ-), বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম (আমৃত্যু করাদ-) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, বদর বাহিনীর নেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং মোঃ আশরাফুজ্জামান খান (মৃত্যুদ-), জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুদ-), জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলী (মৃত্যুদ-), বিএনপি নেতা নগরকান্দা পৌর মেয়র জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকার (মৃত্যদ-), আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোঃ মোবারক হোসেন (মৃত্যুদ-), জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার (মৃত্যুদ-), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম (মৃত্যুদ-) জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান ও জাতীয় পার্টির আব্দুল জব্বার। মামলার কার্যক্রম ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আব্দুল জব্বার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার শান্তি (পিস) কমিটির চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৯ মে তদন্ত শুরু করে তদন্ত সংস্থা। ২৮ এপ্রিল তদন্ত সংস্থার তদন্ত শেষ হয়। ২৯ এপ্রিল তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করেন তদন্ত সংস্থা। পাঁচটি অভিযোগে এ তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। ১১ মে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ জাহিদ ইমাম এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। ১২ মে ইঞ্জিনিয়ার জব্বারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনীত পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। তবে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে না পারায় নিয়মানুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। তাতেও তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় গত ৮ জুলাই তার অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চলার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে পলাতক অবস্থায় বিচার শুরু করার জন্য আসামি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের পক্ষে মোহাম্মদ আবুল হাসানকে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। ১৪ আগস্ট আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে গত ২০ জুলাই জব্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা। অপরদিকে অভিযোগ গঠনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন তার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল হাসান। ৭ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম। ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ নবেম্বর পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনসহ প্রসিকিউশনপক্ষের ২৪ জন সাক্ষী। যত অভিযোগ ॥ চার্জ-১: ইঞ্জিনিয়ার জব্বারের নেতৃত্বে রাজাকাররা মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১৬ মে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ফুলঝুড়ি গ্রামের দুই মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক বিশ্বাস ও মোতালেব শরীফকে হত্যা করে। এছাড়া গ্রামের নাথপাড়া ও কুলুপাড়ার আনুমানিক ১৬০টি বাড়িতে লুট এবং অগ্নিসংযোগ করে। চার্জ-২: মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১৭ মে ইঞ্জিনিয়ার জব্বারের নেতৃত্বে পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকাররা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ফুলঝুড়ি গ্রামে আক্রমণ করে। তারা গ্রামের শারদা কান্ত পাইককে হত্যা এবং ৩৬০টি বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। চার্জ-৩: ১৯৭১ সালের ২২ মে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের নিয়ে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার নলী গ্রামে আক্রমণ করেন। জব্বার নিজে তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন গ্রামের সাখানাথ খরাতীকে। জব্বারের নির্দেশে রাজাকাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে গ্রামের নিশিকান্ত বিশ্বাস ও তার ছেলে সুরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, জিতেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, গণেশ চন্দ্র মিস্ত্রি, উপেন্দ্র নাথ মিস্ত্রি, বসন্ত হালদার, বলরাম মিস্ত্রি, ষষ্ঠী হালদারকে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন গ্রামের মোট ১১ জন শহীদ হন। রাজাকাররা গ্রামের ৬০টি বাড়ির মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। চার্জ-৪: একাত্তর সালের ১৬ মে তুষখালী হাইস্কুল মাঠে ইঞ্জিনিয়ার জব্বার মিটিং করেন। ওই মিটিংয়ে হিন্দুদের তিনি ‘পাকিস্তানের শত্রু’ তাদের অর্থ-সম্পত্তিকে ‘গনিমতের মাল’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তার এ ঘোষণায় রাজাকাররা ফুলঝুড়ি গ্রামের সাতটি বাড়িতে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে। জব্বারের নির্দেশে রাজাকাররা গ্রামের প্রায় দুইশ’ নিরস্ত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে জোরপূর্বক কলেমা পড়িয়ে ধর্মান্তর করে এবং তাদের নাম পরিবর্তন করানো হয়। চার্জ-৫: ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার আঙ্গুলকাটা ও মঠবাড়িয়া গ্রাম থেকে ৩৭ জনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও তাদের মালামাল লুণ্ঠন করে রাজাকাররা। জব্বার ইঞ্জিনিয়ার তাদের মধ্য থেকে ৭ জনকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন। বাকি ৩০ জনকে সূর্যমনি নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে জব্বারের নির্দেশে গুলি করা হয়। এ সময় ২২ জন ঘটনাস্থলেই শহীদ হন এবং ৮ জন গুরুতর আহত হন। কে এই জব্বার ॥ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের শ্বশুর ছিলেন স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতা। আব্দুল জব্বার ১৯৭১ সালের আগে মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার নেতৃত্বে মঠবাড়িয়া থানায় রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। জব্বার ছিলেন থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। আত্মীয় ইস্কান্দার মৃধাকে তিনি রাজাকার কমান্ডার করেন। ১৯৮৮ ও ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার জব্বার। ৮০ বছর বয়সী জব্বার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ছেলে-মেয়ের কাছে পালিয়ে আছেন বলে প্রসিকিউশন ধারণা করছেন।
×