ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন আইকাও প্রেসিডেন্টের নাকচ ॥ প্রবাসীরা সমস্যায় পড়বেন

এমআরপি ছাড়া চলবে না ২৪ নবেম্বরের পর, সঙ্কটের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এমআরপি ছাড়া চলবে না ২৪ নবেম্বরের পর, সঙ্কটের আশঙ্কা

ফিরোজ মান্না ॥ চলতি বছরের নবেম্বরে শেষ হচ্ছে এমআরপি দেয়ার সময়সীমা। এই সময়ের মধ্যে এমআরপি হাতে না পেলে লাখ লাখ প্রবাসীকে দেশে ফিরতে হবে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে এমআরপি দেয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইকাও প্রেসিডেন্টের কাছে সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু আইকাও প্রেসিডেন্ট অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে সাফ জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আইকাওয়ের আর কিছু করার নেই। সূত্র জানায়, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ব্যবহারের বাধ্যবাধকতার সময়সীমা ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর বাংলাদেশের প্রস্তাব নাকচ করেছে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও)। এ বছরের ২৪ নবেম্বরের পর আর হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ কিংবা বিদেশে অবস্থান করা যাবে না। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী কর্মীরা। সরকারী হিসেব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ প্রবাসীর হাতে এমআরপি নেই। মাত্র ২৫ ভাগ প্রবাসীকে গত পাঁচ বছরে এমআরপি দেয়া সম্ভব হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এমআরপি নিয়ে ’১৫ সালে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। এ সম্পর্কে আরও দুই বছর আগেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সময়মতো বিষয়টি নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ না নেয়ায় প্রবাসীদের জন্য বড় ধরনের সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। মন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র ও বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়কে মোবাইল টিম গঠন করে প্রবাসীদের হাতে এমআরপি দেয়ার জন্য। এই দুটি মন্ত্রণালয় ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে কাজটি শেষ করতে পারত। এখন যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা সহজেই এড়ানো সম্ভব হতো। সূত্র মতে, গত ১৪ জানুয়ারি কানাডায় নিযুক্ত হাইকমিশনার কামরুল আহসান বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ট্রিয়লে আইকাও প্রেসিডেন্ট ওলুমইয়া ব্রান্ড অলিউরের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতে তিনি বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর চলতি বছরের ২৪ নবেম্বরের আগে এমআরপি পাসপোর্ট দেয়ার বিষয়ে সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। হাইকমিশনার বলেন, গত মাস পর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ প্রবাসীকে এমআরপি পাসপোর্ট দেয়া সম্ভব হয়েছে। এ অবস্থায় আরও ৭৫ শতাংশ প্রবাসীকে পাসপোর্ট দিতে প্রায় তিন বছর সময় লেগে যেতে পারে। এ জন্য তিনি এমআরপি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতার সময়সীমা এ বছরের ২৪ নবেম্বর থেকে বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ২৪ নবেম্বর করার অনুরোধ জানান। হাইকমিশনারের এই অনুরোধ আইকাও প্রেসিডেন্ট নাকচ করে দিয়েছেন। আইকাও প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে বলেন, আইকাওয়ের কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হলে আইকাও কাউন্সিলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামত প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু আইকাওয়ের আগামী গ্রীষ্মকালীন কাউন্সিল অধিবেশনের আলোচ্যসূচীতে এ ধরনের কোন এজেন্ডা নেই। এ জন্য চলতি বছরের ২৪ নবেম্বরের মধ্যে হাতে লেখা পাসপোর্ট ব্যবহার করা যাবে। এরপর আর হাতে লেখা পাসপোর্ট ব্যবহার করা যাবে না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরও দুই বছর আগে থেকে উদ্যোগ নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র ও বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েও বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ করা হয়। এর বেশি কিছু করার সাধ্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেই। মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে মোবাইল টিম গঠন করে এমআরপি প্রদানের কথা বলা হয়। প্রয়োজনে এমআরপির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার টাকা ও লোকবল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেবে তাও বলা হয়েছে। ঢাকা থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৪০ হাজার এমআরপি প্রিন্ট করার ক্ষমতা রয়েছে। সদিচ্ছা থাকলে জরুরী ভিত্তিতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিয়ে চলতি বছরের নবেম্বরের মধ্যেই ৯০ শতাংশ প্রবাসীকে এমআরপি দেয়া সম্ভব। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, এমআরপির সমস্যা এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের কর্মী যেখানে রয়েছে সেখানেই এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
×