ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মানবিক প্রগতি ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মানবিক প্রগতি ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মানবিক প্রগতি ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ভারত অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে থাকলেও তারা বাংলাদেশ থেকে মানবিক দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো বিষয়গুলোতে ১৯৯০ সালে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে এগিয়ে আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সামাজিক খাতগুলোতে অনেক উন্নতি করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। আগের সময়ের চেয়ে শিশু মৃত্যুহার অনেক কমেছে। একই সঙ্গে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার সংখ্যাও ভারতের চেয়ে বেশি। সোমবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে ‘অর্থনৈতিক প্রগতি ও মানবিক প্রগতি’ শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রথম আলো ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন বলেন, গণতন্ত্রে আলোচনা না করলে কোন কিছু বদলানো সম্ভব নয়; কিন্তু দিন দিন আলোচনার জায়গাটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডি চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহান। একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, অর্থনৈতিক প্রগতির সঙ্গে মানবিক প্রগতি অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। মানবিক প্রগতি না হলে অর্থনৈতিক প্রগতি বা উন্নতি স্থায়ী হয় না। ভারত অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে থাকলেও তারা বাংলাদেশ থেকে মানবিক দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, ভারতের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত সূচকগুলো অত্যন্ত খারাপ। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে কার্যকর সরকারী পদক্ষেপের অভাবে ভারতের স্বাস্থ্য সমস্যাকে জটিল করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এটি হয়নি। বাংলাদেশ গত এক দশকে স্বাস্থ্যখাতে ভাল উন্নতি করেছে। আগের চেয়ে বর্তমানে শিশু মৃত্যুহার অনেক কমেছে। ভারতের মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশের দ্বিগুণ, কিন্তু বাংলাদেশের গড় আয়ু ভারতের চেয়ে বেশি। বক্তৃতায় অমর্ত্য সেন অর্থনৈতিক প্রগতি ও মানবিক প্রগতির পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয় তুলে ধরে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও মানবিক প্রগতি স্থির হয়ে থাকতে পারে। মানবিক প্রগতির জন্য দেশের সব নাগরিকের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানব উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিশ্চিত করা দরকার। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে অবশ্যই সরকারকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হয়। ভারতের উদাহরণ টেনে অমর্ত্য সেন বলেন, ভারত ১৯৪৭ সালের পর থেকে ক্রমান্বয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারলেও মানবিক প্রগতি সুনিশ্চিত করতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো বিষয়গুলোতে ১৯৯০ সালে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে এগিয়ে আছে। অমর্ত্য সেন বলেন, মানবিক প্রগতি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। মানবিক প্রগতি ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন বঞ্চনার সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেন তিনি। অমর্ত্য সেন বলেন, ১৭৭৬ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত গোটা ভারতবর্ষে অর্থনৈতিক উন্নতির কিছুই হয়নি। এই সময়ে গড় মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র ০.০১ শতাংশ। নিজেকে বামপন্থী উল্লেখ করে অমর্ত্য সেন বলেন, যারা ইউনিয়ন করেন তাদের নজর সদস্যদের নিয়ে। কিন্তু তারা কখনই সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন না। অ্যাডাম স্মিথের দ্য ওয়েলথ অব নেশনস বইয়ের উদাহরণ টেনে অমর্ত্য সেন বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে একদিকে যেমন মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হয়, তেমনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মানবিক প্রগতির জন্য কাজ করতে সরকার টাকা পায়। তিনি বলেন, নাগরিকদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুব্যবস্থার দায়িত্ব সরকারের নেয়া উচিত; বেসরকারীভাবে তা সবার জন্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বক্তৃতায় ভারতের কেরালা রাজ্যের উন্নয়নের উদাহরণ টেনে অমর্ত্য সেন বলেন, ভারতের ২৪ প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে ধনী প্রদেশ কেরালা। শুধু কেরালাকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের সব সূচক থেকে এটি এগিয়ে। তবে গোটা ভারতের বিবেচনায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশ এগিয়ে। তিনি বলেন, ভারতের এখন যে উন্নয়ন ঘটেছে তা হলো-তথ্য প্রযুক্তি, ওষুধ ও অটো মোবাইল খাতের রফতানি বাড়ার কারণে। অনুষ্ঠানে নিজের লেখা বইয়ের অনূদিত সংস্করণ ‘ভারত: উন্নয়ন ও বঞ্চনার’ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন।
×