ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি বিএনপির সাবেক ১৭৯ এমপির

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি বিএনপির সাবেক ১৭৯ এমপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি দলীয় ১৭৯ জন সাবেক সাংসদ। রবিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যলয়ে তার প্রেসউইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান সাংবাদিকদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক স্বাক্ষরিত ১৭৯ জন সাবেক সাংসদের লিখিত বিবৃতি বিতরণ করেন। এদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদের নামে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র উল্লেখ করে চলমান গণআন্দোলনে সরকারী বাহিনীর হাতে যাদের প্রাণ বিসর্জিত হচ্ছে তাদের ‘জাতীয় বীর’-এর মর্যাদা প্রদান করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। বিবৃতিদাতারা চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের জন্য ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী’ শেখ হাসিনার পদত্যাগই একমাত্র পথ। অনতিবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আপনার নিরাপদ প্রস্থানের পথ বেছে নিন। জাতিকে মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করুন। যে ১৭৯ জন সাবেক সাংসদের নামে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, শাহজাহান সিরাজ, সেলিমা রহমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রমুখ। বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, আমরা বিরাজমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সরকার ২০ দলীয় জোটকে দমন-পীড়ন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে নিশ্চিহ্ন করণের যে সুস্পষ্ট অপচেষ্টা চালাচ্ছে তা শুধু স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারকে ক্ষুণœ করেনি, বরং আইনের শাসনের অপমৃত্যু ঘটিয়ে মুক্ত রাজনীতির পথও রুদ্ধ করেছে। ৩ জানুয়ারি থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ‘অবরুদ্ধ’ করা, ট্রাক দিয়ে তার কার্যালয়ের সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, বিদ্যুত, কেবল লাইনসহ নাগরিক সেবা বন্ধ, খাবার প্রবেশে বাধা দেয়াসহ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে অন্যায় আচরণ বেআইনি, অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানের ৩৭, ৩৮, ৩৯ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সরকারের এহেন আচরণ সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী, অনৈতিক ও মৌলিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সরকারকে আমরা এ ধরনের মানবতাবিরোধী কর্মকা- থেকে বিরত থাকার দাবি জানাই। দেশব্যাপী নাশকতার জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে বিবৃতিতে সাবেক সাংসদরা বলেন, সারাদেশে সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে হতাহত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্নস্থানে নাশকতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পুলিশ গ্রেফতার করছে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, ‘গণহত্যা বন্ধ করুন’, বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন। এদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের নামে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয় সরকার স্বীকৃতি ও সহানুভূতি আদায়ের প্রত্যাশা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে নির্মম পতনের প্রহর গুনছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রত্যাখ্যাত সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সালাউদ্দিন বলেন, গত শুক্রবার বরিশালের আগৈলঝারা উপজেলার ছাত্রদল নেতা টিপু হাওলাদার ও জাসাস নেতা কবির হোসেনকে ঢাকা থেকে বিনা কারণে গ্রেফতার করে আগৈলঝারায় নিয়ে ঠা-া মাথায় খুন করে ক্রসফায়ারের আষাঢ়ে গল্প সাজিয়েছে পেটোয়া পুলিশ বাহিনী। আমরা বলতে চাই, সময়ের পট পরিবর্তন হলে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ উপযুক্ত আদালতে বিচারের আওতায় আনা হবে। আজ আমরা ঘোষণা করছি-চলমান গণআন্দোলনে সরকারী বাহিনীর হাতে যাদের প্রাণ বিসর্জিত হচ্ছে তাদের ‘জাতীয় বীর’-এর মর্যাদা প্রদান করা হবে। তাদের পরিবার ও সন্তানদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করা হবে। আন্দোলনে বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হয়ে যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের জাতীয় সম্মানসহ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করা হবে। তাদের সকলকেই এ প্রজন্মের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।
×