ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেট্রোলবোমায় দগ্ধ বাসের হেলপার বাপ্পীকেও বাঁচানো গেল না

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পেট্রোলবোমায় দগ্ধ বাসের হেলপার বাপ্পীকেও বাঁচানো গেল না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধ ও হরতালে অবরোধকারীদের পেট্রোলবোমায় রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় দগ্ধ বাস হেলপার মোঃ বাপ্পিকে (২৫) বাঁচানো গেল না। টানা দশদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে তিনি হার মানলেন। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বাপ্পী কোন রাজনীতি করত না, বুঝতও না। কেন তাকে পুড়িয়ে মরা হলো। শিশু বয়সে দুই শিশু সন্তানকে এতিম হতে হলো। ওদের ভরনপোষণ চালাবে কে? এমন প্রশ্ন নিহতের স্বজনদের। বাপ্পীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে স্বজনদের কান্নায় বার্ন ইউনিটের বাতাস ভারি হয়ে উঠে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডাঃ পার্থ শঙ্কর পাল জানান, বাপ্পির শরীরের ৭০ শতাংশ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। তার শ্বাসনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রবিবার দুপুর ১২টার সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি জানান, চলমান সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সরকারী ভাষ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে টানা ৪৬ দিন অবরোধে সারাদেশে এ পর্যন্ত পেট্রোলবোমা ও ককটেল হামলায় নিহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্যসহ ৫৮ জন। আহত হয়েছেন আরও ৫৭০ জন। নিহত বাপ্পীর বাবার নাম মোঃ দুলাল। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মোহনপুর থানার সিরামপুরে। বাপ্পির স্ত্রীর নাম রীনা বেগম। পিংকী (৪) ও দেড় বছরের মিম নামে দুই কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। এক ভাই এক বোনের মধ্যে বাপ্পী ছিলেন সবার বড়। মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের দিয়াবাড়ি বালুরমাঠ এলাকায় বসবাস করতেন তিনি। এদিকে বাপ্পীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ষাটর্ধো মা হালিমা ও তার স্ত্রী রিনা আক্তারের কান্নায় বার্ন ইউনিটের বাতাস ভারি হয়ে উঠে। বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তারা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহতের স্ত্রী রিনা আক্তার জানান, স্বামী বাপ্পী মিরপুর রুটের আলিফ পরিবহনের বাসে হেলপার হিসেবে কাজ করতেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে রামপুরা বনশ্রী এলাকায় স্বামী বাসের দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল। ওই সময়ে অবরোধকারীরা ওই বাসটি লক্ষ্য করে একটি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে স্বামীর সারাশরীর পুড়ে যায়। পরে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রবিবার দুপুরে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো। কে আমার শিশু সন্তানদের খাওয়াবে। এ সময় নিহত বাপ্পীর মা হালিমা বেগম বিলাপ ??? বলেন, আমার বাপ্পী রাজনীতির ধারে কাছেও ছিল না। তাহলে কেন তাকে পুড়িয়ে মারা হলো! তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ছেলে বাপ্পীর আয়ে সংসার চলত। এখন তাদের কি হবে? ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, পুলিশ বাপ্পীর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। বিকেলে তার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
×