ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে গত দু’মাসে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে গত দু’মাসে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় গত দুই মাসে আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। সহিংসতায় অর্থ যোগান বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি আরোপ করার পর এই প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এতে গত দু’মাসে তিন শতাধিক সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি সন্দেহজনক লেনদেন ধরা পড়েছে। সন্দেহজনক এসব লেনদেনে মানিলন্ডারিং বা সন্ত্রাসে অর্থায়ন হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে মুদ্রাপাচার, চোরাচালান ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান সভায় সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, অর্থ, বাণিজ্য ও আইন মন্ত্রণালয় এবং পুলিশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত তিন বছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২১৪টি। গত অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬১৯টিতে দাঁড়িয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ হার বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৪০ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরে বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা সন্ত্রাসে অর্থায়ন, অর্থপাচার, জালিয়াতিসহ ৭১টি অপরাধ বিষয়ক তথ্য জমা দিয়েছে। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেনের প্রতিবেদন করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এগুলো বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারইে হচ্ছে কি-না? তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো নিয়মিতভাবেই সন্দেহজনক লেনদেনের প্রতিবেদন পাঠিয়ে থাকে। সেই প্রতিবেদন পাঠানোর পরিমাণ এই মুহূর্তে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে অনেক গ্রাহক ব্যাংকের বিরুদ্ধেও হয়রানির অভিযোগ করেছেন। তাদের মতে, ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক খারাপ হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে আজগুবি রিপোর্ট করা হচ্ছে। এতে ওই গ্রাহক তার হিসাব থেকে টাকা তুলতে পারছেন না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, সন্দেহজনক লেনদেনের প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়। এই সময়ে কেউ টাকা উত্তোলন করতে পারেন না। কিন্তু তদন্তে সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রমাণিত না হলে অভিযুক্ত হিসাব উš§ুক্ত করে দেয়া হয়। প্রসঙ্গত, দেশের আর্থিক খাতে গত অর্থবছরের পুরো সময়ে সন্দেহজনক লেনদেনের ঘটনা ঘটেছিল ৬১৯টি। যা ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ৪২০টি। তার আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ১৭৫টি। সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে গত মাসে প্রকাশিক বিএফআইইউ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে মুক্তিপণ আদায়, ঘুষ লেনদেন, অর্থ আত্মসাত ও বিদেশে পাচারের ঘটনা রয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্ট মুক্তিপণ লেনদেনে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনুসন্ধানে ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে, যেগুলোর মাধ্যমে মুক্তিপণের লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। এসব এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২১ লাখ ৫২ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
×