ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তারানকোকে আনতে জোর লবিং বিএনপির, তবে আসা অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

তারানকোকে আনতে জোর লবিং বিএনপির, তবে আসা অনিশ্চিত

তৌহিদুর রহমান ॥ সরকারবিরোধী আন্দোলনের ‘শেষ ভরসা’ হিসেবে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবি করছে বিএনপি জোট। আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণের লক্ষ্যে জাতিসংঘ থেকে সংলাপের আহ্বান জানানো হলেও সহকারী মহাসচিব তারানকোকে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকার এখনও কোন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পায়নি। এ কারণে তারানকোর বাংলাদেশ সফর এখনও অনিশ্চিত। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে সংলাপে বসার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছেন। আর সরকার ও বিরোধীপক্ষের সঙ্গে সংলাপের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তারানকোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তারানকোকে বাংলাদেশে আসতে হবে। তবে তারানকোর আসার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়নি জাতিসংঘ। মার্কিন কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি জোট ইতিমধ্যেই চলমান আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে শেষ ভরসা হিসেবে তারানকোকে বাংলাদেশে আনার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রে লবিং অব্যাহত রেখেছে। বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির এক সদস্য নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কের কূটনীতিক মহলে সরকারবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বিএনপির একাধিক নেতাও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তারা চাইছেন যেভাবেই হোক তারানকোকে বাংলাদেশে এনে সংলাপের আয়োজন করতে হবে। আন্দোলনের শেষ ভরসা হিসেবে বিএনপি তারানকোকে দেশে এনে এতে সংলাপ করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক মহলে বেগম জিয়াকে তিনবেলা ঠিকমতো খাবার খেতে দেয়া হচ্ছে না বলেও অপপ্রচার চালাচ্ছেন। রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে সরকার এখনই সংলাপে আগ্রহী নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারের একাধিক মন্ত্রীও জানিয়েছেন, সংলাপে বসতে হলে আগে পেট্রোলবোমা হামলা, জ্বালাও পোড়াও, সন্ত্রাস ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া অনেকেই বিএনপিকে সন্ত্রাসী ও খুনী রাজনৈতিক দল হিসেবেও অবহিত করেছেন। তাই বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে আগ্রহী নয় সরকার। বতর্মান সরকারের এই অবস্থান ইতোমধ্যেই বিদেশীদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, জাতিসংঘের মুখপাত্র জানিয়েছেন, অদূর ভবিষ্যতে তারানকোর বাংলাদেশে আসার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে প্রয়োজন হলে যে কোন এক সময়ে তিনি বাংলাদেশ সফর করতে পারেন। সংলাপের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহ্আলম বলেন, সংলাপের কোন সম্ভাবনা দেখছি না। খুনীদের সঙ্গে কোন সংলাপ করতে চাই না। তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস নির্মূল চাই। বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে চাই। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে ২০১৩ সালে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখেন। একই আহ্বান জানাতে তিনি দুই নেত্রীকে টেলিফোনও করেন। বান কি মুনের দূতিয়ালিতে সে সময় দুই দফা ঢাকা সফর করেন অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। ঢাকায় এসে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে এই সহকারী মহাসচিব সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার তাগাদা দিয়ে যান। বান কি মুনের দূতিয়ালির পরও সে সময় সংলাপ ব্যর্থ হয় এবং বিএনপির বর্জনে সহিংসতার মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর প্রায় এক বছর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নতুন আন্দোলনে আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সারাদেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন, নতুন করে ফিরে আসে আগুন-বোমার নাশকতা। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই অবরোধের সঙ্গে হরতাল করছে ২০ দলীয় জোট। হরতাল-অবরোধের এই দেড় মাসে পেট্রোল বোমা ও ককটেল হামলায় সারাদেশে নিহত হয়েছেন ১০০, আহত হয়েছেন ৫৬০। নাশকতার কয়েকটি ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলাও হয়েছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সব পক্ষকেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ সদর দফতরে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানিতে সংস্থার পক্ষ থেকে উদ্বেগের কথা জানান। ওই সময় তিনি জানান, মহাসচিব বান কি মুন সাবেক সহকারী মহাসচিব (রাজনীতিবিষয়ক) অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে তারানকোর বিষয়ে সরকার এখনও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পায়নি বলে জানা গেছে। এদিকে শুক্রবার সরকারের কাছে পাঠানো চিঠি সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বস্তুনিষ্ঠ পথ অবলম্বন এবং দেশের উন্নয়নের স্বার্থে বিরোধীদের সঙ্গে গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে সরকারকে তাগাদা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি চিঠিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বস্তুনিষ্ঠ পথ অবলম্বন করতে হবে। সে লক্ষ্যেই দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও ভালোর স্বার্থে বিরোধীদের সঙ্গে গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে সরকারকে তাগাদা দেয়া হয়েছে। ডুজারিক আরও জানান, বাংলাদেশে বিরোধীপক্ষ মানে সরকারের বাইরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরই বোঝানো হয়েছে। এ নিয়ে কোন ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই।
×