ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুটি ইঞ্জিনে একটি সম্পূর্ণ বিকল, অন্যটিও বেহাল

বরগুনায় লক্কড় ঝক্কড় ফেরি ॥ ঘটতে পারে দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বরগুনায় লক্কড় ঝক্কড় ফেরি ॥ ঘটতে পারে দুর্ঘটনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, বরগুনা, ২২ ফেব্রুয়ারি ॥ জেলার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম পায়রা নদীর বরগুনা পুরাকাটা-আমতলী ফেরী। এ ফেরির অবস্থা খুবই নাজুক। ফেরির দুটি ইঞ্জিনের একটি ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বিকল আরেকটিও চলে না চলার মতোই। এতে প্রমত্তা পায়রার স্রোতে ফেরিটি প্রায়ই অন্যত্র ভেসে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীতে আটকা পড়ে যাত্রীরা। এ সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরগুনা সফরে এসে বরগুনা-আমতলী ফেরির দুরবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি নতুন ফেরি দেয়ার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তাদের। মন্ত্রীর নির্দেশ দেয়ার পরও নতুন ফেরি দেয়া হয়নি পুরাকাটা-আমতলী নদীর ফেরিঘাটে। ফেরির ইজারাদার রোকনুজ্জামান ফিরোজ আকন ও কবির ফকির জানান, প্রথমে এ পুরাকাটা-আমতলী নৌপথে দুটি সচল ফেরি চলাচল করলেও চার বছর আগে একটি ফেরি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়। সেটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ঘাটে পড়েছিল। অন্য ফেরি দিয়ে কোন মতে পারাপারের কাজ চলছিল। ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের সময় তলা ফুটো হয়ে দুটি ফেরিই ডুবে যায়। ওই সময় জরুরী ভিত্তিতে পটুয়াখালীর লেবুখালী থেকে পরিত্যক্ত একটি ফেরি এনে পুরাকাটা-আমতলী নৌপথে পারাপারের জন্য সংযোজন করা হয়। সে থেকেই চলছে লক্কর-ঝক্কর এ ফেরিটি। বর্তমানে এ ফেরিটির দুটি ইঞ্জিনের একটি ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বিকল ও অন্য ইঞ্জিনটিও চলে না চলার মতো। কিন্তু ফেরির যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় দৈনিক ১শ’ লিটার তৈল এবং ১২ লিটার মবিলের ঘাটতি হয়। এতে ফেরি ইজারাদাররা নিত্যদিন প্রায় ৮Ñ১০ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে পারাপার করছেন এসব যানবাহন ও যাত্রীদের। জেলা সড়ক ও জনপথ (সওজ) কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ফেরি ইজারাদারদের ১ বছরে সরকারী ইজারায় তাদের ২০ লাখ টাকা জমা দিতে হয় সরকারী কোষাগারে। কিন্তু গত ৯ জুন থেকে ৭ নবেম্বর ২০১৪ তারিখ পর্যন্ত ৫ মাসে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করেছে এ ফেরিটি। তাতে তাদের সরকারী কোষাগারে জমা পড়েছে মোট ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ২শ’ ৬ টাকা। কিন্তু ব্যায় দেখানো হয়েছে ২৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এতে (সওজ) কর্তৃপক্ষের লোকসান হয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৬শ’ ৯৪ টাকা। বরগুনা সওজ-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাসেল বলেন, সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষর মাধ্যমে আমি গত ৫ মাস ধরে ফেরিঘাট পরিচালনা করে আসছি। এতে সরকারী কোষাগারের ৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। ফেরিটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ফেরিটির ২টি মেশিনের একটি সম্পূর্ণ বিকল ও অন্যটিও নষ্ট হওয়ার পথে। আমাদের পটুয়াখালীর টুকটাক সমস্যা সচল ফেরি ডিভিশন এ ফেরিটি অনেক বার সার্ভিসিং করেছে কিন্তু এতেও ফেরিটি ভাল হয়নি। এখানে নতুন ফেরি হলে ভাল হয়। স্থানীয় ফেরি ইজারাদারদের দাবি সরকারী কোষাগারে তাদের ইজারার ডাকের সম্পূর্ণ টাকা দিলেও (সওজ) কর্তৃপক্ষরা তাদেরকে ফেরির ইজারা না দিয়ে সম্পূর্ণভাবে তাদেরকে উঠিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তারা আরও বলেন, তাদেরকে যদি ইজারা বঞ্চিত করা যায় তাহলে সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা সরকারী কোষাগারে কোন টাকা না দিয়ে লুটপাট করে খেতে পারবে। এজন্যই তাদেরকে ইজারা থেকে বাদ দিতে চাচ্ছে। তাদের ইজারাকৃত অচল ফেরিটি বাদ দিয়ে নতুন ফেরি দেয়া হোক। এর সঙ্গে তাদের ইজারায় ডাক নেয়ার পর থেকেই ত্রুটিপূর্ণ ফেরির দরুন লোকসানের পরিমাণ চিন্তা করে সরকার তাদের আর্থিক দিক বিবেচনা করে তাদের কিছু টাকা মওকুফ করুক। সড়ক ও জনপথ নির্বাহী প্রকৌশলী মুহম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, বর্তমানে ইজারাদাররা ফেরি পরিচালনা করছে। তবে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে ফেরিটি বিকল। তাই নতুন ফেরির জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে নতুন ফেরির ব্যবস্থা করা হবে।
×