ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশে

সংস্কৃতি ও রাজনীতি একই জীবনের দু’রকম উৎসারণ। তাই দেখা যায়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূত্রপাত রাজনৈতিক আন্দোলনকে তরঙ্গায়িত করে তুলেছিল এই বাংলাদেশে। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি পাশাপাশি হাত ধরে এগিয়েছে। মানুষকে সংগঠিত করার কাজটি রাজনীতি করলেও জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কাজটি সংস্কৃতি সাধন করেছে। যে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে আজও সঙ্কটকালে সংস্কৃতির ধারাটি সামনে এগিয়ে আসে। তার তরঙ্গে রাজনৈতিক জাগরণ ঘটে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সাংস্কৃতিক আন্দোলন যাঁরা করে এসেছেন, তাঁদের সৃজনশীলতা, একাগ্রতা, শ্রমনিষ্ঠতা, সাধনা ও স্বদেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। সমাজের সর্বস্তরে গণজাগরণে তাঁরাই সামনে এগিয়ে এসেছেন। এসেছেন নিজস্ব বিবেকের তাড়নায়, স্বদেশ মুক্তির অন্বেষায়। কিন্তু আজকে মুক্ত স্বাধীন দেশে সমাজের নানা ক্ষেত্রে প্রতিভাবানদের সংখ্যা বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কারণে নানা বিষয়ে মানুষের আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি শিল্প-সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন প্রবহমান। কিন্তু সৃজনশীল প্রতিভাবানরা যদি যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা না পায়, কিংবা তাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা না হয়, তবে ক্রমশ তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে। যা দেশ ও জাতি কারও কাম্য নয়। যেমন কাম্য নয় অপসংস্কৃতি, যা মানুষকে স্বাভাবিকতার বাইরে নিয়ে যায়। বোধকে বিকৃত করে। ফলে কলুষতা বাড়ে। বাংলা চলচ্চিত্র তার উদাহরণ। সৃজনশীল প্রতিভার যথাযথ বিকাশে সহযোগিতা না করায় গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় শাখাটি গণবিচ্ছিন্ন। শিল্প-সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, চারুকলাসহ নানা বিষয়ে রাষ্ট্র সহায়তা করে থাকলেও যথার্থ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সৃজনশীল প্রতিভা বিকশিত হতে হতে কেন যেন হারিয়ে যায়। কিংবা যারা বিকশিত হয়, তারাও বেশিদূর যেতে পারে না। দেখা যায়, একটা পর্যায়ে স্থবির বা গণবিরোধীতে পরিণত হতে। প্রগতিশীল কবিকে মৌলবাদের কাছে মাথানত হতে দেখা যায়। আবার এদেশের শিল্পীদের আর্থিক সাচ্ছল্য না থাকায় ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়। সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হলে দেশে সংস্কৃতি চর্চার উদার পরিবেশ থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনার আস্ফালনÑ সব মিলিয়ে এক অস্থির সময় এখন। এই গণশত্রুরা এ দেশের শিক্ষা, শিল্প সংস্কৃতির বিকাশকে রুদ্ধ করতে চায়। তাই দেশজুড়ে এই মহান একুশের মাসেও অবরোধ-হরতাল ডেকে পেট্রোলবোমায় মানুষ মারছে। বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত বহু সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল প্রতিভা। যারা সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে শত অভাব-অনটনেও তা ধরে রেখেছেন। এদের পৃষ্ঠপোষকতা দানে রাষ্ট্র বা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসেন না। এদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও চারুকলার ঐতিহ্য বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত। কিন্তু সেসবের সম্প্রসারণে শিল্পী ও কুশলী তৈরি করা হয়নি। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অজস্র সৃজনশীল মানুষ সামান্য পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে পারে। দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের একুশে পদক এবং শিল্পকলা পদক প্রদানের পৃথক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে সৃজনশীল প্রতিভাদের পৃষ্ঠপোষকতা দান ও বিকাশে সহায়তার বিষয়টি। মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ও গণশত্রুমুক্ত দেশের জন্য প্রতিভাবান মানুষের প্রয়োজন অত্যধিক। তাহলে রাজনীতি ও সংস্কৃতির অঙ্গন হতে দুরাত্মারা বিতাড়িত হবে। উন্নত সমাজ সৃজনে তাই প্রতিভার সন্ধান ও পৃষ্ঠপোষকতার সুপরিকল্পনা গ্রহণ করা সঙ্গত হয়ে পড়েছে।
×