ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ভারতে সোয়াইন ফ্লুর বিস্তার বাংলাদেশে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ভারতে সোয়াইন ফ্লুর বিস্তার বাংলাদেশে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে

নিখিল মানখিন ॥ ভারতে সংক্রমিত সোয়াইন ফ্লু বাংলাদেশের জন্যও হুমকি। স্থল ও বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। অথচ প্রতিদিন বৈধ ও অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে শত শত মানুষের আগমন ঘটে। সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসে ভারতে মৃতের সংখ্যা ৭শ’ ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজারে। তবে সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপসহ জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। কার্যকর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গড়ে তোলা না হলে বাংলাদেশেও সোয়াইন ফ্লু বিস্তার সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনিতেই সামনে রয়েছে সোয়াইন ফ্লুর মৌসুম। বাংলাদেশে প্রতিবছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে সোয়াইন ফ্লুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের অনেক রাজ্যে দ্রুত বিস্তার লাভ করছে মরণঘাতী সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস। চলতি বছরের মাত্র ৪৭ দিনে সেখানে ৭০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, সোয়াইন ফ্লু আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি। গত কয়েকদিনে পশ্চিমবঙ্গে এ রোগে আক্রান্ত প্রায় ৪৭ জনের মধ্যে সরকারীভাবে ৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশটিতে এ ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় সরকার এটি মোকাবেলায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের অধিকাংশই রাজ্যস্থান, গুজরাট, তেলেঙ্গানা কর্ণাটক ও দেশটির রাজধানী দিল্লীর অধিবাসী বলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। এ সব এলাকায় মেডিক্যাল টিমকে পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও মোকাবেলায় সতর্ক ও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আক্রান্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজ্যস্থান, গুজরাট, তেলেঙ্গানা, কর্নাটক, দিল্লী, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও পশ্চিমবঙ্গ। এদিকে, সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপসহ জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ভারতের সোয়াইন ফ্লু বিস্তারের প্রভাবে বাংলাদেশে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় গত বুধবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে এক জরুরী সভায় সভাপতিত্বকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ সব সময় সফল হয়েছে। সম্প্রতি আফ্রিকার ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও দেশে যে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয় তাও সফলভাবে কার্যকর হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী এ সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহ মজুদ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেন, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালসহ দেশের ৬৪ জেলা হাসপাতালে এ জন্য বিশেষ ইউনিট পৃথকভাবে খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। কোন ব্যক্তি সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ওই ইউনিটে প্রেরণ করে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি ঢাকা বিমান বন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে স্থাপিত সাতটি থার্মাল স্ক্যানার দ্রুত বিদেশ থেকে বিশেষ করে ভারত থেকে আগত যাত্রীদের জ্বর পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেন, সব বন্দরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। সেখানে কর্তব্যরত মেডিক্যাল টিমকে সতর্ক থেকে এ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্যদিকে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ প্রতিরোধ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভারতের কয়েকটি রাজ্যে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনায় ঝুঁকিতে পড়বে না বাংলাদেশে। এদেশে আপাতত সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। এমন কথা বলেছেন আইইডিসিআর এর বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, অনেক বছর ধরেই সোয়াইন ফ্লুর বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে সরকার। দেশে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মৌসুমী ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। শূকর থেকে উদ্ভূত হলেও এখন এটি মানুষেরই রোগ। কাশি ও হাঁচিতে এর বিস্তার ঘটে। বায়ুবাহিত ভাইরাস হওয়ায় আক্রান্তদের সংখ্যাও দ্রুত বেড়ে যায়। তবে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংবাদ বাংলাদেশের জন্য কিছুটা চিন্তার বিষয় বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআর বিজ্ঞানীরা। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডাঃ মাহমুদুর রহমান জানান, সোয়াইন ফ্লুতে বেশি মাত্রায় আক্রান্ত ভারতের রাজ্যগুলো বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে।
×