ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

নানা আয়োজনে বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

নানা আয়োজনে বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইতিহাস-ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে গড়া বাঙালীর রাষ্ট্র বাংলাদেশ। সংগ্রাম ও আন্দোলনের ইতিহাসে দারুণভাবে সমৃদ্ধ এই দেশ। শনিবার ছিল এ রাষ্ট্রের কৃষ্টিলালিত সংগ্রামী ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। বাংলা বর্ণমালার জন্য প্রাণ বিসর্জনকারী বাংলা মায়ের দামাল ছেলের রক্ত ঋণে স্নাত অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। একইসঙ্গে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর ভাষার জন্য বুকের রক্ত ঝরানো দিনটিতে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়েছে ভাষাশহীদদের। নানা আয়োজনে স্নিগ্ধ রূপ বিরাজ করেছে রাজধানী সংস্কৃতি অঙ্গনজুড়ে। রকমারি পরিবেশনায় ভালবাসা জানানো হয়েছে বর্ণমালার সেই শহীদদের। প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায়ও ছিল নানা আয়োজন। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে, নৃত্যের প্রকাশে কিংবা বক্তা কথায় অথবা নৃত্যশিল্পীর নাচের মুদ্রায় ছিল ভাষাসৈনিকদের বন্দনা। এসব পরিবেশনায় উঠে এসেছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা। রবীন্দ্র সরোবরে সাংস্কৃতিক জোটের পরিবেশনা ॥ বুকের খুনে যুদ্ধ জারি অমর একুশে ফেব্রুয়ারি সেøাগানে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের একুশের অনুষ্ঠানমালা। শহীদ মিনারে শুরু হওয়া ১৪ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালা শেষ হলো ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে। শনিবার বিকেল থেকে রাত অবধি নাচ-গান এবং কবিতা ও পথনাটকে নিবেদিত হয়েছে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। বৃক্ষরাজি আর জল-হাওয়ায় আবৃত মঞ্চের চারপাশ জুড়ে ছিল হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতা। বৈচিত্র্যময় নানা পরিবেশনায় একুশের দীপ্ত চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়েছে শ্রোতা কিংবা দর্শনার্থীবৃন্দ। আবিদা রহমান সেতুর কণ্ঠসঙ্গীত দিয়ে সমাপনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সুরের আশ্রয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিবেশন করেন প্রভাতফেরি থেকে ভেসে আসে একুশের গান। একভাবেই ঝর্ণা ম-লও পরিবেশন করেন বর্ণমালার শহীদদের নিবেদিত সঙ্গীত। গেয়ে শোনান ভাষার জন্য যারা দিয়ে গেছে প্রাণ ভুলিনি আমরা। এছাড়াও তিনি গেয়ে শোনান সেই রেললাইনের ধারে মেঠো পথটার পাশে দাঁড়িয়ে/মধ্যবয়সী নারী এখনো রয়েছে হাত বাড়িয়ে। একক কণ্ঠে আরো গান শোনান রাজিয়া মুন্নী ও স্মরণ বড়ুয়া। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা ও বিশ্ববীণা। ধল প্রহরের আগে শীর্ষক আবৃত্তি প্রযোজনা উপস্থাপন করেন স্বনন। এছাড়াও দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনায় অংশ নেয় স্বরচিত্র। একক কণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন বেলায়েত হোসেন ও অনন্যা লাবণী। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির প্রকাশে নৃত্য পরিবেশন করে বহ্নিশিখার শিল্পীরা। শিশু সংগঠনের পরিবেশনায় নৃত্য উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের খুদে শিল্পীবৃন্দ। সব শেষে ছিল পথনাটকের উপস্থাপনা। পরিবেশনায় অংশ নেয় সুবচন নাট্য সংসদ ও দ্যাশবাংলা থিয়েটার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঝর্ণা আলমগীর। আর ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল। ভাষাশহীদ দিবসে ছায়ানটের নিবেদন ॥ শনিবার একুশের সন্ধ্যায় ভাষাশহীদদের নিবেদিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। সঙ্গীত পরিবেশনা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর দিয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠান। সম্মেলক কণ্ঠের সঙ্গীত পরিবেশনা দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনেক কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায় মিলিত প্রাণের কলরবে ও রক্ত শিমুল তপ্ত পলাশ। মোদের গরব মোদের আশা শিরোনামের সঙ্গীত পরিবেশন করেন এটিএম জাহাঙ্গীর। জাদুঘরে ভাষার বিনিময় মেলা ॥ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শনী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারুশিল্প মেলা ও ভাষা বিনিময় মেলা। শনিবার একুশের সকালে উদ্বোধন করা হয় ভাষার বিনিময় মেলা। এ আয়োজনের অংশ হিসেবে জাদুঘরের নতুন সংগ্রহ ১০৭ বছরের পুরাতন ট্রেডেল প্রিন্টিং মেশিন দর্শকদের প্রদর্শনীর জন্য উন্মোচন করা হয়। শিল্পকলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠান ॥ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যায় একুশের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। নানা পরিবেশনায় বসন্ত সন্ধ্যায় মুখরিত হয়ে ওঠে একাডেমির নন্দন মঞ্চ। জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর সমবেত কণ্ঠে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানের সুরে পরিবেশিত হয় নৃত্য। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিদেশী দূূতাবাসের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সঙ্গীত পরিবেশনা ও কবিতা পাঠ। ভাওয়াইয়া গান পরিবেশন করে একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের শিল্পীবৃন্দ। মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক উৎসব ॥ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে চলছে মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব। শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও পথনাটক পরিষদ।
×