ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একুশের চেতনার রঙে উদ্ভাসিত মেলা ২৮৯০ নতুন বই

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

একুশের চেতনার রঙে উদ্ভাসিত মেলা ২৮৯০ নতুন বই

মোরসালিন মিজান ॥ ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে শুরু হয় বটে। মূলত অপেক্ষা অমর একুশের। শনিবার ছিল সেই কাক্সিক্ষত দিন। অমর একুশে গ্রন্থমেলা এদিন সেজেছিল চেতনার রঙে। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারির আবেগ ভাবগাম্ভীর্য আর গৌরব এদিন আয়োজনটির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সকাল ৮টায় খুলে দেয়া হয় মেলার প্রবেশদ্বার। তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় বইপ্রেমীদের আনাগোনা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মানুষের ঢল নামে বাংলা একাডেমি ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে। শোকের কালো রং পোশাকে মেখে এসেছিলেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। সাদা কালো রঙে ছেয়ে গিয়েছিল গোটা এলাকা। ভাই হারানোর ব্যথা যেমন প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি ছিল মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার গৌরব। একুশের চেতনা বুকে ধারণ করে মেলায় আসা পাঠক এদিন স্টল ঘুরে বেড়িয়েছেন। বই কিনেছেন। অন্য যে কোন দিনের চেয়ে এদিন বিক্রি ছিল বেশি। বইয়ের যোগানও ছিল উল্লেখ করার মতো। ২১তম দিনে নতুন বই আসে ২৪০টি। নজরুল মঞ্চে ১১টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, একুশতম দিন পর্যন্ত মেলায় মোট নতুন বই এসেছে ২ হাজার ৮৯০টি। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ সকালে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে আয়োজন করা হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে সভাপতিত্ব করেন কবি অসীম সাহা। বিকেলে মূল মঞ্চে ছিল অমর একুশের বক্তৃতা। এতে ‘ভদ্রলোক-রাজনীতি ও শ্রেণীচেতনার আলোকে ভাষা-আন্দোলন’ শীর্ষক একুশে বক্তৃতা প্রদান করেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। একুশে বক্তৃতায় আহমদ রফিক বলেন, অবিভক্ত ভারতে বিশেষভাবে বঙ্গে ভদ্রলোক শ্রেণী সর্বজনীন জাতীয় আন্দোলনগুলোর সুফল পুরোপুরি ভোগ করেছে শাসনক্ষমতা হাতে পেয়ে। সে ধারাবাহিকতায় ওই একই শ্রেণী এদেশেও ভাষা-আন্দোলনসহ সব গণআন্দোলন ও একাত্তরের লড়াইয়ের সর্বমাত্রিক সুবিধাভোগী। ভাষা-আন্দোলনের সুফল, ইতিবাচক উত্তরপ্রভাব মূলত গণআন্দোলনের ব্যাপকতায়। কিন্তু ‘গণ’ এর সুফল ভোগ করতে পারেনি; পারেনি উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে শিক্ষায়, সরকারী কাজকর্মে ও উন্নত তথ্যপ্রযুক্তিতে এবং জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে ভাষা ব্যবহারের কথা। কিন্তু এ জাতীয় আহ্বান আমাদের শিক্ষিত শ্রেণীর প্রাণে সাড়া জাগায় না। এর বড় কারণ এই শ্রেণীর মিশ্র চেতনা ও শক্তিমান শ্রেণীস্বার্থ। পরিস্থিতির সার্বিক বিচারে একমাত্র বিপ্লবী শ্রেণীসংগ্রামই বিরাজমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে শ্রেণীবৈষম্য দূর করতে পারে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ভাষা আন্দোলন-উদ্ভূত জাতীয়তাবাদী চেতনা ছিল ধর্মনিরপেক্ষ তাই স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানেও রাষ্ট্র ও সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় কিন্তু সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান সংবিধানকে ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে যেমন দূরে সরিয়ে দিয়েছে তেমনি দেশের সব মানুষের সার্বিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণ কবে ঘটবে তা বলা কঠিন তবে শেষ পর্যন্ত বাঙালী ও বাংলাদেশ শুভচেতনার দিকে যাত্রা করবে বলে আশা করা যায়। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফকির আলমগীর, রফিকুল আলম, আবদুল হালিম খান, শিবু রায় এবং সঞ্জয় কুমার দাস। গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ২০১৫ ঘোষণা ॥ বাংলা একাডেমির গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ২০১৫ শনিবার ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৪ সালে সর্বাধিক সংখ্যক মানসম্পন্ন গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ লাভ করে মাওলা ব্রাদার্স। মুর্তজা বশীরের ‘আমার জীবন ও অন্যান্য’ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্স লিমিটেড ও রবীন্দ্রসমগ্র খ--২৩ প্রকাশের জন্য পাঠক সমাবেশ লাভ করে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’। ২০১৪ সালে সর্বাধিক সংখ্যক মানসম্পন্ন শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য সময় প্রকাশনকে ‘রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরিতে দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডকে, স্টল ক্যাটাগরিতে প্রথমা প্রকাশনকে ও জ্যার্নিম্যান বুকস্কে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। মেলার সমাপনী দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি এসব পুরস্কার প্রদান করা হবে। আজকের আয়োজন ॥ আজ রবিবার বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘রবীন্দ্রনাথ : মহাজীবনের অঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান এবং অধ্যাপক ফকরুল আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সন্জীদা খাতুন।
×