ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী সন্দেহে আটক ৫ জনের জামিন পাওয়া নিয়ে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জঙ্গী সন্দেহে আটক ৫ জনের জামিন পাওয়া নিয়ে তোলপাড়

বিডিনিউজ ॥ জঙ্গী সন্দেহে আটক এক পাকিস্তানীসহ পাঁচজন সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে জামিন নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা। জামিনপ্রাপ্তরা হলেন মোহাম্মদ আলম (৪৪), আব্দুল মজিদ (৩১), আমিন (৫০), শফিউল্লাহ (৩৮) ও সালামত উল্লাহ (৪০)। এদের মধ্যে আলম পাকিস্তানী নাগরিক এবং তিনি ‘গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টার’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচালক। আর শফিউল্লাহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা। জঙ্গী রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরএসওর সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে শফিউল্লাহ ও সালামত উল্লাহর বিরুদ্ধে। ঢাকার ভারপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ গত ২৭ জানুয়ারি তাদের জামিন দেন। বিষয়টি জানাজানি হয় বৃহস্পতিবার। জঙ্গী সন্দেহে গত ২৩ নবেম্বর চট্টগ্রামের একটি হোটেল থেকে ওই পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের ঢাকার লালবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। লালবাগ থানার ওই মামলার এজাহারে তাদের নাম নেই উল্লেখ করে জামিন আবেদন করেছিলেন আসামিদের আইনজীবীরা। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের জামিন দেন বিচারক। কিন্তু মামলা ও জামিননামার অনুলিপি হাতে আসার পর দেখা যায়, মামলার এজাহারে নাশকতা ও জঙ্গী তৎপরতায় অর্থের যোগানদাতা হিসেবে ওই পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছরের ১ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার পূর্ব পাশে ‘ব্যাচেলার ব্যারাকের’ পশ্চিমপাশের সীমানা সংলগ্ন দেয়ালের ফুটপাথ থেকে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ নূর হোসেন ওরফে রফিকুল ইসলামসহ (২৬), ইয়াসির আরাফাত (২২) ও ওমর নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নূর হোসেন মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার আরাকান থানার দানেসপাড়ার বাসিন্দা। সে সময় তিনজন পালিয়ে যায় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়। এ ঘটনায় লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক এস এম রাইসুল ইসলাম। এজাহারে বলা হয়, আটক নূর হোসেনের ডান হাতে থাকা শপিংব্যাগের ভেতরে খবরের কাগজে মোড়ানো পাঁচটি ডেটোনেটর, জেল জাতীয় বিস্ফোরক পদার্থ এবং আরাফাতের ডান হাতে থাকা প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর থেকে সাদা পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় বিস্ফোরক পদার্থ পাওয়া যায়। ‘জিজ্ঞাসাবাদে নূর হোসেন ও আরাফাত জানায়, মোহাম্মদ আলম, আব্দুল মজিদ, সালামত উল্লাহ, মোহাম্মদ কবির ওরফে আমিন, শফিউল্লাহ, খালেদ, সাদিক হোসেন সিয়াম ও আমজাদ তাদের অর্থের যোগানদাতা। অর্থের এই যোগানদাতাদের ঠিকানা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বলে বিস্ফোরকসহ হাতেনাতে আটক আসামিরা জানায়। ‘তারা সবাই আন্তর্জাতিক ইসলামী উগ্রপন্থী সংগঠনের সহায়তায় বাংলাদেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে বলে জানিয়েছে। তারা আরএসও, জিআরসি, এআরইউ ও ইসলামী জঙ্গী সংগঠনের সদস্য।’ ভারতের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এই আসামিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও মামলা বলা হয়। জামিনপ্রাপ্ত পাঁচজনকে গত বছরের ২ ডিসেম্বর এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল কাদের মিয়া। মহানগর হাকিম আদালত তাদের রিমান্ডের আবেদন নাকচ করে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয়। তাদের জামিনের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকার আইনজীবী দুলাল মিত্র বলেন, অনেক সময় যৌক্তিক কারণ থাকা সত্ত্বেও সাধারণ অপরাধীদের জামিন দেন না নিম্ন আদালতের অনেক বিচারক। সেখানে ডেটোনেটর ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতারদের অর্থের যোগানদাতাদের জামিন হওয়া খুব অস্বাভাবিক।
×