ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় ২৮ হাজার হেক্টর জমি

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

তিস্তা সেচ  প্রকল্পের আওতায় ২৮ হাজার হেক্টর জমি

স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী ॥ বোরো ধানের ক্ষেতে যেখানে ৬ ইঞ্চি পানি থাকার কথা, সেখানে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার বোরো ক্ষেতগুলো এখন শুকনো খটখটে, ধুলোময়। মেশিন কিংবা ডিপটিউবওয়েলের মাধ্যমে সেচের বিষয়ে কৃষকরা জানালেন, তিস্তায় পানি কমে যাওয়ার কারণে মাটির নিচের পানির স্তরও ৩০-৪০ ফুট নেমে গেছে। তাছাড়া তিস্তা প্রকল্পের তুলনায় ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে সেচের খরচ প্রায় ১০ গুণ বেশি। তিস্তা প্রকল্পের খালের মাধ্যমে এক মৌসুমে প্রতি বিঘা বোরো চাষে যেখানে ২-৩শ’ টাকা খরচ হতো, সেখানে মাটির নিচ থেকে পা¤েপর মাধ্যমে পানি তুলে সেচ দিতে বিঘাপ্রতি ৩ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ১ ঘণ্টার সমপরিমাণ পানি তুলতে এখন ৩-৪ ঘণ্টা পা¤প করতে হয়। আবার একবার পানি দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জমি শুকনো খটখটে হয়ে যায়। ফলে ভুট্টা ক্ষেতে আগে যেখানে সর্বসাকল্যে দুবার সেচ দিলেই হতো সেখানে ৮-১০ বার সেচ দিতে হচ্ছে। কাজেই ভারত গজলডোবা ব্যারেজ নির্মাণ করে তিস্তার পানি প্রায় পুরোটাই সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকার এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার উজানের নদী প্রমত্তা তিস্তা আর তিস্তায় ছিল না। পানি কমতে কমতে একশ’ কিউসেকে নেমেছে। উজানের প্রবাহ থমকে গেছে। চুয়ানো পানির সরু নালায় পরিণত হয়েছে তিস্তা। ফলে যতদূর চোখ যায় শুধু ধু-ধু বালুচর। সেচনির্ভর বোরো আবাদে কৃষকরা পড়েছে বিপাকে। সেচের দাবিতে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া ডিভিশনের পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে কৃষকরা ছুটছেন দলে দলে। কিন্তু নদীর দিকে তাকিয়ে তারা নিশ্চুপ হয়ে ফিরে আসছেন। এর পাশাপাশি চরম দুঃসময় চলছে তিস্তা অববাহিকার ২০ হাজার মৎস্যজীবী পরিবারের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানালেন বৃহস্পতিবার তারা পানি পেয়েছে মাত্র একশ’ কিউসেক। যে পানি দিয়ে সেচ প্রকল্পের একশ’ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব নয়। ফাল্গুনের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টি নেমে এলেও বৃহস্পতিবার উজান থেকে কোন পানি প্রবাহ পাওয়া যায়নি। যেটুকু পানি এসেছে তা ব্যারাজের ৪৪ কপাট বন্ধ করে আটকিয়ে সেই পানি সেচখালে নেয়া হয়। এদিন সেচ দেয়া হয় মাত্র ১৬৩ হেক্টর জমিতে। অথচ চলতি মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় ২৮ হাজার ৫শ’ হেক্টরে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল। গত বছর এই সময় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও নদীর পানিপ্রাপ্ততার ওপর সেচ প্রদান করা হয়েছিল ২৫ হাজার হেক্টরে। এবার উজানের পানিপ্রাপ্ততা একেবারেই না থাকায় সেচ প্রদান এক প্রকার থমকে গেছে। মানুষজনের অভিযোগ, উজানে ভারতের গজলডোবায় একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তা আজ পানিশূন্য। তিস্তার পানি চুক্তি জরুরী হয়ে পড়েছে।
×