ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দমকা হাওয়া ॥ ঘরবাড়ি, আমের মুকুলের ক্ষতি, রবিশস্যের উপকার

ফাল্গুনের শুরুতেই হঠাৎ বৃষ্টি

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ফাল্গুনের শুরুতেই হঠাৎ বৃষ্টি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ খনার বচনে আছে, যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পূর্ণ দেশ। এবার মাঘের শেষে ফাল্গুনের শুরুতেই তেমনটি ঘটলো। আকস্মিক বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ও ফসলের পাশাপাশি ও আমের মুকুলের জন্য ক্ষতি হয়েছে। দেশজুড়ে সহিংসতায় দহন জ্বালায় বৃষ্টি নিয়ে আসে স্বস্তির ছাপ। খবর স্টাফ রিপোর্টার নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের- মুন্সীগঞ্জ ॥ জেলার সর্বত্রই বৃষ্টি হচ্ছে। মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৬ উপজেলায় ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গড় বৃষ্টি ৭ মিলিলিটার। টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১৫ মিলিলিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে সিরাজদিখান উপজেলায় ৩ মিলিলিটার। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুল আজিজ এ তথ্য দিয়ে বলেন, এই বৃষ্টি এখানকার ফসলের জন্য রহমত। বিশেষ করে আলু এবং বোরো ধানের জন্য মহাউপকার হয়েছে। তিনি জানান, বৃষ্টি নিয়ে খনার বচনÑ ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পূর্ণ দেশ’। মাঘ শেষে ফাল্গুনের শুরুতে সেরকমই হলো। এতে আলুর জমির রোগ-বালাই ধুয়ে গেল। রাজশাহী ॥ রাতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হলেও বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৯টার পর শুরু হয় ভারি বৃষ্টিপাত। এতে মুহূর্তেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে নগরীর নি¤œাঞ্চল। বিশেষ করে নগরীর উপশহর, কাজলা ও কোর্ট এলাকায় সড়কে ড্রেন উপচে হাঁটুপানি জমে যায়। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে ১৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গাইবান্ধা ॥ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় হঠাৎ করে দমকা হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা, কাটাবাড়ি, কামদিয়া, শাখাহার, রাজাহার ও গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বুধবার রাতে হঠাৎ করে দমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। টানা দেড় ঘণ্টা ধরে চলে এ শিলাবৃষ্টি। এতে করে ঘরবাড়ি, গাছ-পালা, আম লিচুর বাগান ও রবিশস্য কলাবাগান, মরিচ, আলুসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাদারীপুর ॥ মাদারীপুরে বুধবার রাত থেকে হালকা বৃষ্টি ও দমকা বাতাস বইতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালেও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়। অসময়ে বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের কারণে জনজীবনে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়াই কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। অসময়ে বর্ষণের কারণে দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ পড়েছে দুর্ভোগে। কাজ না থাকায় তাদের ঘরে বসে অলস সময় পার করতে হচ্ছে। তবে বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে রবিশস্যের অনেক উপকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। বিশেষ করে মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর, দুধখালী, বাহাদুরপুর, ছিলারচর ও মস্তফাপুর এলাকার মৌসুমের শুরুতে চাষাবাদকৃত ডাল জাতীয় ফসলের অনেক উপকার হয়েছে। ঝিনাইদহ ॥ মহেশপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে বুধবার রাতে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি শিলার ওজন ৫শ’ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত। বৃষ্টির পর রাস্তাঘাট সাদা হয়ে যায়। শিলাবৃষ্টিতে আম-কাঁঠালের মুকুলসহ, উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ল-ভ- হয়ে গেছে অনেক বসতবাড়ি। রাত ৩টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শিলাবৃষ্টি হয়। এতে মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর, নাটিমা, নেপা, শ্যামকুড়, স্বরুপপুর, ফতেপুর ইউনিয়নের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান জানান, বৃষ্টির সঙ্গে পড়তে থাকে বড়বড় শীল। এতে আমার ইউনিয়নে ১০টি গ্রামের মসুরি, গম, তামাক, আমের মুকুলসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝালকাঠি ॥ জেলায় বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। বগুড়া ॥ বুধবার রাতে বগুড়ায় ঝড় ও ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে তিনটি উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রবি ও বোরোসহ আমের মুকল রয়েছে। এছাড়া ঝড়ে গাছপালা ভেঙ্গে যাওয়াসহ কিছু বাড়িঘরের টিনের চাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া অফিস জানায়, রাত সোয়া ১২টার দিকে উত্তরপূর্ব দিক থেকে বয়ে যাওয়া ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি ছিল। কৃষিবিভাগ জানায়, ফসলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শিলাবৃষ্টির কারণে। এতে জেলার সোনাতলা, গাবতলী ও সারিয়াকান্দী উপজেলার প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে- গম, ভুট্টা ও শাক-সবজি আবাদের। এছাড়া বোরো আবাদ আমের মুকুল, কলা, আলু চাষেরও ক্ষতি হয়েছে। নাটোর ॥ নাটোরে বসন্তের প্রথম সপ্তাহেই দেখা দিল বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি। ফাল্গুনের দুপুরে হঠাৎ করেই আকাশজুড়ে ঘনিয়ে আসে ঘনকালো মেঘ, আর কিছুক্ষণ বাদেই বাংলার মাটিতে নেমে আসে অঝোর ধারায় শিলাবৃষ্টি। জনজীবনে নেমে আসে স্বস্তির ছাপ। অপ্রত্যাশিত এ বৃষ্টি হয়ত হরতাল অবরোধের তীব্র দহন জ্বালাকে অনেকটাই প্রশমিত করতে পেরেছে। আপাতত বর্ষাকাল না হলেও ফাল্গুনের আকস্মিক বৃষ্টিতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সর্বস্তরের মানুষ।
×