ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোয়েন্দা রিপোর্ট

শাপলা চত্বরের সেই কৌশলে মাঠে নামতে চায় বিএনপি জোট

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শাপলা চত্বরের সেই কৌশলে মাঠে নামতে চায় বিএনপি জোট

শংকর কুমার দে ॥ ‘সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল রাজপথে অবস্থান করার হেফাজতের সেই পরিকল্পনা’ নিয়ে রাজধানীতে সভা-সমাবেশের নামে শোডাউন করার পরিকল্পনা নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এই পরিকল্পনাতে নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার আপত্তির কারণে অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতা বন্ধ না করলে তাদের আপাতত বড় ধরনের কোন সভা-সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃপক্ষ। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃপক্ষ দেশব্যাপী পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার দুর্বৃত্ত চক্রকে নির্মূল না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম মতিঝিল শাপলা চত্বরে সন্ধ্যা পর্যন্ত সভা-সমাবেশের অনুমতি নিয়ে সরকারের পতন না ঘটা পর্যন্ত অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে মতিঝিলসহ রাজধানীজুড়ে গাছ উপড়ে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে, সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালায়। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাতের আঁধারে কমান্ডো স্টাইলে অভিযান চালিয়ে হেফাজতের সভা-সমাবেশ উচ্ছেদ করে রাজধানীর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনে। হেফাজতের সমাবেশ রাতের আঁধারে ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনা নিয়ে তখন কল্পিত হতাহতের চিত্র দেশ-বিদেশে প্রচার করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এখন আবার বিএনপি-জামায়াত জোটও অনুরূপ কৌশলের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। এ ধরনের পরিকল্পনায় নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করে গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দিয়েছে। সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ’১৩ সালের হেফাজতের পরিকল্পনাটি ছিল আসলে বিএনপি-জামায়াত জোটেরই। হেফাজতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে অর্থবল, জনবল, খাওয়া-দাওয়া, অবস্থানকালীন নাশকতাসহ সবকিছুর সংস্থান ও যোগান দিয়েছে। হেফাজতের সমাবেশ থেকে সেদিন বায়তুল মোকাররমের সামনের দোকানে পবিত্র কোরআন শরীফের দোকানে আগুন দিয়ে শত শত কোরআন শরীফ পুড়িয়ে, ভবনে আগুন দিয়ে, গাছ উপড়ে, ভাংচুর করে নাশকতার মাধ্যমে সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালায়। হেফাজতের সে সময়ের পরিকল্পনাটি যে আসলেই বিএনপি-জামায়াত জোটের পরিকল্পনা ছিল গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের উত্তরে দেয়া জবানবন্দীতে পরিষ্কার করেছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। পুলিশের কাছে বাবুনগরীর দেয়া জবানবন্দীতে জানা যায়, তখনকার ১৮ দলীয় জোটের নেতৃত্বে ছিল বিএনপি-জামায়াত। এখন আবার সেই পরিকল্পনাটি নিয়েই এগোনোর চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সূত্র জানায়, টেস্ট কেস হিসেবে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। কিন্তু কোন নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি প্রকাশ্যে। দলের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ১৮ জায়গায় ঝটিকা মিছিল হয়েছে। বাস্তবে ঝটিকা মিছিলেরও কোন অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতা চালিয়েও টানা অবরোধ-হরতালে প্রাণসঞ্চার করতে পারেনি তারা। টানা অবরোধের সঙ্গে প্রায় ৯ দফায় হরতাল ডেকে আগুনে পুড়িয়ে মারাসহ শতাধিক মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এখন আর হত্যাযজ্ঞের অবরোধ-হরতালের পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতায় হালে পানি না পাওয়ায় চোরাগোপ্তা অবস্থা থেকে প্রকাশ্যে এসে বড় ধরনের ছক কষতে চাইছে বিএনপি-জামায়াত জোট। গত ১৪ ফেব্রুয়ারির বিক্ষোভ মিছিলের টেস্ট কেসটি ব্যর্থ হওয়ার পর এখন আবার আত্মগোপনে থেকেই প্রেস রিলিজ দিয়ে সভা-সমাবেশ ডাকার পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট যতদিন অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতা বন্ধ না করবে ততদিন তাদের প্রকাশ্যে কোথাও বড় ধরনের কোন সভা-সমাবেশের নামে শোডাউন করতে দেয়া হবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতায় জড়িত সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত ও তাদের অর্থদাতা, হুকুমদাতাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা ধরে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতাকারী এই চক্রকে কঠোরহস্তে দমন করা হচ্ছে। যে পর্যন্ত এই চক্রকে দমন করা শেষ না হবে সে পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অভিযান অব্যাহত রাখা অবস্থায় দিন দিনই আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×