ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ------------------- বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় এখনও প্রধান উৎসব বইমেলা। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত মেলায় প্রতিদিনই আসছেন রাজধানীবাসী। বিভিন্ন বয়সী মানুষের গন্তব্য এখন বাংলা একাডেমি ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান। তবে গত কয়েক দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বৃষ্টির কবলে পড়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। শুধু কী বৃষ্টি? রীতিমতো ঝড়। বসন্তের রাত হঠাৎই বর্ষার রূপধারণ করেছিল। ফলাফল- আরও এক দফা ক্ষতি। বুধবার রাতের বৃষ্টিতে একরকম ভেসে গেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৯তম দিন। তবে দেখতে দেখতে শেষ হয়ে আসছে অভূতপূর্ব আয়োজন। ফলে পাঠকের উপস্থিতি বাড়ছে। বিক্রিও এখন ভাল। সাধারণ পাঠকের পাশাপাশি সিরিয়াস পাঠকও তালিকা ধরে বই কিনছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির জলে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ স্টল। কারও কিছু বই ভিজে নষ্ট হয়েছে। কারও গেছে প্রায় সব বই। ঘাসের উপর শুকোতে দেয়া বই দেখে মন সত্যি খারাপ হয়ে যায়। গত কয়েক দিন আগে প্রথমবারের মতো বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মেলা। সেই ক্ষতিকে ছাপিয়ে গেছে বুধবারের ক্ষতি। ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃষ্টি বেশি হওয়ায় অধিকাংশ স্টলের ওপর দিয়ে কোন না কোনভাবে পানি ঢুকেছে। স্টলের নিচে পানি জমে যাওয়ায় কাছাকাছি দূরত্বের রাখা সব বই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশনা সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাগৃতি, অক্ষর, প্রিয়মুখ, বিভাষ, অন্যপ্রকাশ, অন্বেষা, মূর্ধণ্য, অন্যধারা, ইত্যাদি, গ্রন্থপ্রকাশ, হাওলাদার পাবলিকেশন্স, শিকড়, উৎস প্রকাশন, কালি ও কলম প্রকাশন, চারুলিপি, আদি প্রকাশন, কথাপ্রকাশ, অবসর, আলপনা, সাহিত্যদেশ, চন্দ্রাবতী একাডেমি, ফেয়ার পাবলিশিং হাউস, শ্রাবণ, প্রিয়মুখ, উত্তরণ, সিদ্দিকিয়া পাবলিশিং হাউস, বিজয় প্রকাশ, টুম্পা প্রকাশনী, মিজান পাবলিশিং হাউস, অঙ্কুর, জোনাকী, গতিধারা আগুন্তুক, শিখা প্রকাশনী, মনন, আলেয়া বুক ডিপো, ধ্রুবপদ, আদর্শ ও আহমদ পাবলিশিং। ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শ্রাবণের কর্ণধার রবিন আহসান বলেন, আমাদের অনেক দামী দামী বই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। সঠিকভাবে স্টল নির্মাণ না করার কারণে এমন ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। কিন্তু বই ভিজবে কেন? সেভাবেই তো স্টল নির্মাণ করার কথা। একই কথার প্রতিধ্বনি করে আলাপন প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী এম আর কমল বলেন, আমাদের তিন শতাধিক বই ভিজে গেছে। একটিও বিক্রির উপযোগী নেই। স্টলগুলোর অবকাঠামো দুর্বল থাকায় এ ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। আহমদ পাবলিশিং হাউসের ব্যবস্থাপক শাহআলম জানান, তাঁদের প্রায় দেড় শতাধিক বই সম্পূর্ণ ভিজে গেজে। কিছু কিছু স্টলে রাখা সব বই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। অক্ষর ও প্রিয়মুখ নামের দুটি স্টলে গিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকটি বই দিয়ে কোন রকমে স্টল চালু রাখা হয়েছে। বাকি বই পাশের খোলা জায়গায় শুকোবার চেষ্টা। এ অবস্থায় প্রকাশকরা অপেক্ষা করে আছেন ২১ ফেব্রুয়ারির জন্য। তাঁদের আশা আজ শুক্রবার ভাল বিক্রি হবে। তবে সর্বোচ্চ বিক্রি হবে আগামীকাল শনিবার। ভাষা দিবসে প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় মানুষের ঢল নামবে। বিক্রিও হবে সবচেয়ে বেশি। প্রকাশকরা এমনটিই আশা করছেন। ৭৭ নতুন বই ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ১৯তম দিন বৃহস্পতিবার নতুন বই এসেছে ৭৭টি। এ দিন নজরুল মঞ্চে ১৯টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শামসুদ্দিন আহমদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কামালউদ্দিন, ড. ফেরদৌসী বেগম এবং নূরুন্নাহার মুক্তা। সভাপতিত্ব করেন মোঃ শাহ-ই-আলম। প্রাবন্ধিক বলেন, যে বয়সে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, প্রজ্ঞা সব মিলিয়ে একজন পরিপূর্ণ বিজ্ঞানী গবেষণা নির্দেশনা দিতে শুরু করেন, সে সময়ই মাকসুদুল আলম আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি তার জন্য বরাদ্দ সবগুলো কাজই গুছিয়ে করে গিয়েছেন। তা না হলে ইউরোপের রাশিয়া, জার্মানি; আমেরিকার ওয়াশিংটন, হাওয়াই; এশিয়ার মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের গবেষণা কাজ নিজ হাতে করাই কেবল নয়, গবেষণাগার তৈরি, প্রকল্প অনুমোদন ইত্যাদি সুদক্ষভাবে পরিচালনা স্বল্প সময়ে তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হতো না। তাঁর কর্মজীবন বা বিজ্ঞানী জীবনের সম্পূর্ণটা জুড়ে ছিল ফসলের জেনোম সিকোয়েন্সিং। তিনি তাঁর স্বল্প পরিসরের কর্মজীবনে ৪টি ফসল উদ্ভিদ, ১টি অণুজীবের জেনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন। এটি বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি লবণাক্ততা বিলাসী আর্কেয়াইয়াতে সিঙ্গল ট্রান্সডাকশন নিয়ে কাজ করেছেন, যা পরিশেষে মানব মায়োগ্লোবিন সদৃশ প্রোটিন আবিষ্কার তাঁকে সফল করে তুলেছিল। আলোচকরা বলেন, বিজ্ঞানী হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে এবং একজন আদর্শবাদী-গুণী মানুষ হিসেবে মাকুসুদুল আলমের তুলনা তিনি নিজেই। বিজ্ঞান-গবেষণা ছিল তাঁর জীবনে এক সমার্থক শব্দ। তিনি শুধু তোষাপাটের জেনোম আবিষ্কারেই কৃতী নন। একই সঙ্গে আবিষ্কৃত জেনোমের মেধাস্বত্ব বাংলাদেশের অনুকূলে আনয়নের জন্য ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁরা বলেন, উত্তর প্রজন্মের বিজ্ঞান-গবেষকরা মাকসুদুল আলমের পথ ধরে বাংলাদেশকে বিশ্ব বিজ্ঞান-গবেষণার ধারায় বিশেষ মাত্রায় যুক্ত করতে পারবে। সভাপতির বক্তব্যে মোঃ শাহ-ই-আলম বলেন, মাকসুদুল আলম ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানী। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সর্বোত্তম ব্যবহারের প্রক্রিয়ায় দেশকে এগিয়ে নিতে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। সন্ধ্যায় বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে আসে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘দৃষ্টি’, সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শুভজন’, ‘আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম’ ও ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট’। আজকের আয়োজন ॥ আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আবৃত্তিজন আশরাফুল আলম, ডালিয়া আহমেদ এবং মাহিদুল ইসলাম। বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘ভাষা সংগ্রামী আবদুল মতিন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আহমাদ মাযহার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মাসুদা ভাট্টি এবং মোহাম্মদ আলী। সভাপতিত্ব করবেন লেখক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ।
×