ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হোসেন মিয়াকে বাঁচানো গেল না

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হোসেন মিয়াকে বাঁচানো গেল না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধ ও হরতাল অবরোধকারীদের পেট্রোলবোমায় দগ্ধ ফেনীর লালপোলে মারাত্মক দগ্ধ কাভার্ডভ্যানের শ্রমিক হোসেন মিয়াকে (৫২) বাঁচানো গেল না। তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আটজনের গরিবের সংসারের ভরণপোষণের চাকা বন্ধ হয়ে গেছে। রীতিমতো অন্ধকার দেখছেন পরিবারটি। বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সারাহ আহমেদ জানান, সকাল দশটার দিকে তিনি হোসেন মিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হোসেন মিয়ার শ্বাসনালীসহ সারা শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যায়। তাকে বাঁচানোর সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। এ নিয়ে অবরোধের ৪৪ দিনে পেট্রোলবোমার আগুনে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারী ভাষ্য অনুযায়ী, সারাদেশে এ পর্যন্ত পেট্রোলবোমা ও ককটেল হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৫। নিহত হোসেন মিয়ার বাবার নাম ইদ্রিস মিয়া। বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার কমলগঞ্জ থানার চরমার্টিন গ্রামে। তিনি ৩ ছেলে ৪ মেয়ের জনক। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া নয়টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোল এলাকায় অবরোধকারীরা কাভার্ডভ্যান লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে চালক ও হেলপার লাফিয়ে পড়ে নিজেদের রক্ষা করেন। কিন্তু হোসেন মিয়া ভ্যানে আটকে পড়েন। মুহূর্তে ভ্যানটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভ্যানে আটকা পড়ে তিনি মারাত্মক দগ্ধ হন। খবর পেয়ে ফেনী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ওই ভ্যানের আগুন নিভিয়ে হোসেন মিয়াকে চালকের পাশের আসন থেকে মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে ওদিন রাত দুটোর দিকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। নিহতের ভাতিজি শিমু জানান, মাস পাঁচেক আগে মেঘনার ভাঙ্গনে হোসেন মিয়া ঘরবাড়ি হারান। এরপর সরকারী জমিতে ছাপড়া তুলে স্ত্রী নূরজাহান, চার মেয়ে ও তিন ছেলেকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন। শিমু জানান, চাচা ছিলেন দিনমুজুর। টানা অবরোধের গ্রামের বাড়িতে কোন কাজ না থাকায় চাচা চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন কাজের সন্ধানে। এ জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে লক্ষ্মীপুর থেকে ওই কাভার্ডভ্যানে করে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে অবরোধকারীদের পেট্রোলবোমার হামলার শিকার হন। নিহতের ছেলে নূর আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, বাবা মারা যাবার সঙ্গে সঙ্গে পুরো পরিবারই পথে বসে গেছি। বাবাই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম। নদী ভাঙ্গনে নিজের বসতবাড়ি ও ধানি জমি গ্রাস করেছে। এখন বাবার মৃত্যুর পর আটজনের এ সংসার কিভাবে চলবে। আল্লাহ যারা আমার বাবাকে মেরেছে, ওদের (অবরোধকারীরা) জন্য আমার মা বিধবা হয়েছে। আমরা এতিম হয়ে গেছি। আল্লাহ যেন তাদের এরকমই করে। ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ শাহীনুজ্জামান জানান, ঘটনার পরের দিন সোমবার ফেনী মডেল থানার এসআই আবদুল মোতালেব বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এজাহারে পৌর বিএনপির সভাপতি আলাল উদ্দিন আলাল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নঈম উল্লাহ চৌধুরী বরাত, সাধারণ সম্পাদক এসএম সালাহ উদ্দিন মামুন, জেলা যুবদল সভাপতি গাজী হাবিব উল্লাহ মানিকসহ ৩৩ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। প্রথমে নাশকতার মামলা হলেও হোসেন মিয়ার মৃত্যুতে এটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে বলে পরিদর্শক শাহীনুজ্জামান জানান। উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জোটের টানা অবরোধে প্রায় প্রতিদিনই নাশকতার ঘটনা ঘটছে। সরকারী ভাষ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত পেট্রোলবোমা ও ককটেল হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৫ জন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫৫৬ জন। মারাত্মক দগ্ধদের আর্থিক সহায়তায় ছাত্রলীগ ॥ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন পেট্রোলবোমায় দগ্ধ ছয়জনকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ছাত্রলীগ। দগ্ধ প্রত্যেককে পাঁচ হাজার করে মোট ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। পেট্রোলবোমা হামলাকারীদের ধরিয়ে দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত পুরস্কারের নগদ অর্থ থেকে এ ছয়জনকে সহায়তা দেয়া হয়।
×