ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪৬ দিনে ক্ষতি ১৬শ’ কোটি টাকা

আবাসন খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হুমকিতে

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আবাসন খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হুমকিতে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিএনপি’র ডাকা টানা অবরোধ-হরতালের ৪৬ দিনে আবাসন খাতে এক হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। লাগাতার অবরোধের মধ্যে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবসহ লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েশনের নেতারা এই হিসাব তুলে ধরেন। রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ খাতের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার অধিক বিনিয়োগ আজ হুমকির মুখে। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রায় ২শ’র বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে পড়বেন। তাই জীবন ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী পরিহারের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে এ খাতে শ্রমিকদের জীবন-জীবীকার পাশাপাশি বিনিয়োগ এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। ক্রেতারা এখন আর আবাসন খাতে কোনো বিনিয়োগ করছে না। ফলে নতুন করে আবাসন খাত গভীর সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের সভাপতি বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে আবাসন ব্যবসায়ীদের ক্রয়-বিক্রয়, মূল্য আদায় বা আর্থিক লেনদেন এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের ভাগ্য। কেবল শ্রমিকরাই নয়, এ খাতে কর্মরত রয়েছে বিশাল জনগোষ্ঠী। সংগঠনের সভাপতি বলেন, হরতাল-অবরোধ বন্ধ করা না হলে এ খাতের সঙ্কট আরও গভীর হবে। এর বিরূপ প্রভাবে একদিকে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে শ্রমিক ছাঁটাই বৃদ্ধি পাবে। সংবাদ সম্মেলনে শামসুল আলামিন বলেন, রাজনৈতিক এই অস্থিরতায় ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। অন্য সকল ব্যবসায়ীদের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতায় আবাসন খাত ও আবাসন খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় ২শ’র বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান চরম সঙ্কটে পড়েছে। বিশেষভাবে ইট, বালু, পাথর, সিমেন্ট, রড, রং, বৈদ্যুতিক তার ও টাইলস ইত্যাদি ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। অনেক ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানসহ অনেক লিংকেজ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অনেক প্রতিষ্ঠান খুবই নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। রিহ্যাব সভাপতি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, আবাসন খাতে এই হরতাল-অবরোধের ৪৬ দিনের ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬৫৬ কোটি টাকা। তবে লিংকেজ শিল্পসহ ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)’র তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, উৎপাদনশীল খাতে মোট ৪২ হাজার ৫৯২ শিল্প-কারখানা এবং গৃহ-নির্মাণ খাতের স্থবিরতার কারণে বিপাকে পড়েছে ১২ হাজারের মধ্যে ২৮ শতাংশ শিল্প-কারখানা। অর্থনৈতিক বিধ্বংসী এই রাজনৈতিক সহিংসতা বিদ্যমান থাকলে তা আরও বাড়বে এবং ধীরে ধীরে নিঃস্ব হয়ে পড়বে আবাসন খাত। তিনি বলেন, চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তারা পরিশোধ করতে পারছে না। কেবল আবাসন ব্যবসায়ীরাই নয়, তাদের ক্রেতারাও উচ্চসূদে ঋণ নিয়ে এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকগুলো ডেভেলপারদের ঋণ খেলাপি হিসেবে ঘোষণা করছে। রিহ্যাব সভাপতি জানান, পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে কেউই এসব ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। ঋণের পরিমাণের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বর্তমানে এই খাতে ২৪শ’ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় এর একটি বড় অংশ পুনঃতফসিলিকরণ জরুরী। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে অবাসন খাতের ঋণের সুদ মওকুফসহ দুই বৎসরের জন্য পুনঃতফসিলিকরণের সুযোগ দেয়ার দাবি জানান রিহ্যাব সভাপতি। একই সঙ্গে বর্তমান অস্থিরতা বিবেচনায় নিয়ে আবাসন খাতে ব্যাংক ঋণের সুদের সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব ছাড়াও লিংকেজ প্রতিষ্ঠানের নেতারাও হরতাল-অবরোধের ক্ষতি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস্ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ব্যাংক ঋণ নিয়ে আমাদের মিল চালাতে হচ্ছে। কিন্তু টানা অবরোধ ও হরতালে না পারছি মিল বন্ধ রাখতে না পারছি চালু রাখতে। তিনি বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলেও সব মিল মালিকরাই দেউলিয়া হয়ে যাবেন। ল্যান্ড ডেভেলপারস এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন বলেন, বর্তমান টানা হরতাল-অবরোধের কারণে এই খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কমপক্ষে ২০ বছর সময় লাগবে। বাংলাদেশ পেইন্টার্স ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন, এখন রাজনীতির বলি হচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। হরতাল-অবরোধে বর্তমানে আবাসনসহ লিংকেজ প্রতিষ্ঠানে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে কমপক্ষে ২ বছর সময় লাগবে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মোঃ আলমগীর কবির বলেন, টানা অবরোধ ও হরতালে ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে নয়, এখন দেয়াল ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাংলাদেশ পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মতিন খান বলেন, সারাদেশে ৪০৫টি পাথর কারখানায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক শ্রমিক নিয়োজিত। হরতাল-অবরোধে পাথর সরবরাহ করতে না পারায় আমরা ঠিকভাবে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছি না।
×