ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লিবিয়া দখল করে নৌকায় যোদ্ধা পাঠানোর ফন্দি জিহাদীদের

ইউরোপে যুদ্ধ করবে আইএস!

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ইউরোপে যুদ্ধ করবে আইএস!

ইসলামিক স্টেট জঙ্গীরা সমগ্র দক্ষিণ ইউরোপে যুদ্ধ চালানোর ‘পথ’ হিসেবে লিবিয়া দখলের পরিকল্পনা করছে। ওই দলের সমর্থকদের লেখা চিঠি থেকে এ কথা জানা যায়। জিহাদীরা লিবিয়ায় সিরিয়া ও ইরাক থেকে বিরাটসংখ্যক মিলিশিয়ার অনুপ্রবেশ ঘটানোর আশা করছে। এরপর মিলিশিয়ারা অভিবাসীদের বেশে লোক পাচারের নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পার হবে। ব্রিটেনের চরমপন্থী বিরোধী গ্রুপ কুইলিয়াম ওই পরিকল্পনা পড়ে দেখেছে। খবর টেলিগ্রাফের। যোদ্ধারা এরপর দক্ষিণ ইউরোপের শহরগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং সমুদ্রগামী জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করবে। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) এক প্রচারক ওই দলিলটি লিখেছে। সে লিবিয়ায় সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর জন্য লোক সংগ্রহের এক গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করা হয়। ২০১১ সালে এক বিপ্লবে কর্নেল গাদ্দাফী ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই লিবিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। দলটি এরই মধ্যে লিবিয়াতে সেল গঠন করেছে। সেলগুলো রবিবার ২১ মিসরীয় খ্রীস্টান শ্রমিকের একযোগে শিরñেদ করার ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওতে খাকি পোশাক পরা এক জঙ্গীকে উত্তর দিকে তার রক্তমাখা এক আঙ্গুল দেখিয়ে ‘আমরা আল্লাহর অনুমতি নিয়ে রোম জয় করব’ বলে উক্তি করতে দেখা যায়। ওই আইএস প্রচারক লিবিয়ার ‘প্রভূত সম্ভাবনা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করে। সে খুশির সঙ্গে বলে যে, দেশটিতে গৃহযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তখন বিদ্রোহীরা কর্নেল গাদ্দাফীর অস্ত্রভা-ারের বিরাট অংশ দখল করেছিল। এসব অস্ত্রের কিছু কিছু ব্রিটেন থেকে এসেছিল। দেশটি তার ক্ষমতায় থাকার শেষ বছরগুলোকে মেশিনগান, রাইফেল ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছিল। তখন তাকে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক মিত্র হিসেবে দেখা হতো। ঐ প্রচারক আবু আরহিম আল-লিবিম ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকে। লিবিম আরও উল্লেখ করে যে, লিবিয়া নিকটতম ইউরোপীয় মূল ভূখ-ের কোন কোন অংশ থেকে প্রায় ৩০০ মাইলেরও কম দূরে রয়েছে। লিবিয়ার দীর্ঘ উপকূল রয়েছে এবং সেখান থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রুসেডার (খ্রিস্ট ধর্মযুদ্ধরত) রাষ্ট্রগুলোকে দেখা যায়। এমন কি কোন দেশী নৌকা দিয়েও সেসব রাষ্ট্রে পৌঁছানো যায়। সে এ উপকূল থেকে অবৈধ অভিবাসন নামে পরিচিত যাত্রাগুলোর সংখ্যা উদ্ধৃত করে। সে বলে কিছুসংখ্যক লোক এসব যাত্রায় শামিল হয়ে থাকে। যদি এসব ঘটনাকে কৌশলের সঙ্গে কাজে লাগানো হয়, তাহলে দক্ষিণ ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোতে অরাজকতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। এমনকি ক্রুসেডারদের জাহাজ চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়া এবং তাদের জাহাজ ও ট্যাঙ্কারগুলোর ওপর হামলা চালানোও যেতে পারে। যখন পশ্চিমা জগতে লিবিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া নিয়ে ক্রমশ উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে, তখন ঐ প্রচারকের কথাবার্তা প্রকাশ পেল। যুক্তরাজ্যে বহুসংখ্যক লিবিয়ের বাস। সোমবার এমআইসিক্সের সাবেক প্রধান স্যার জন সয়ারস বলেন, ধর্মান্ধরা যাতে লিবিয়াকে কাজে লাগাতে না পারে, সেজন্য ব্রিটেনের সেখানে স্থল সৈন্য মোতায়েনের কথা বিবেচনা করা উচিত। নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও ইউরোপে গোপনে যোদ্ধা পাঠাতে লোক চালানকারী নৌকাগুলো ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে আইএসের ভাবনার অংশীদার। সাব-সাহারান আফ্রিকার সঙ্গে বিশাল, অরক্ষিত মরু-সীমান্ত থাকায় লিবিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপে নৌকায় লোক-পাচারের অন্যতম বড় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু গাদ্দাফী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর লোক পাচারের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ধারণা, অন্তত ২ লাখ শরণার্থী ও অভিবাসী লিবিয়া থেকে সাগর পেরিয়েছে ইতালির সিসিলি বা লামপেদুসা দ্বীপে পৌঁছার জন্য অপেক্ষা করছে।
×