ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘুরে দাঁড়াতে আত্মবিশ্বাসী ওয়াকার

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ঘুরে দাঁড়াতে আত্মবিশ্বাসী ওয়াকার

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপে শুরুটা ভাল হয়নি পাকিস্তানের। প্রথম ম্যাচেই চিরশত্রু ভারতের কাছে ৭৬ রানের বড় ব্যবধানে হার মিসবাহ-উল হকদের। অথচ সম্প্রতি নৈপুণ্যের সমীকরণে আশাবাদী ছিল তারাই। শনিবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিদের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওই ম্যাচ দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া পাকিস্তান কোচ ওয়াকার ইউনুস। এ জন্য ব্যাটসম্যানদের আরও ভাল করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। ‘আমি আমার অবস্থান বদলাইনি। আগেও বলেছি, টুর্নামেন্টে পাকিস্তান ফেবারিট নয়, তবে ভারতের বিপক্ষে ভাল করার সুযোগ ছিল। উইন্ডিজ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে চাই, এ জন্য প্রথমে ব্যাটসম্যানদেরই দায়িত্বশীল হতে হবে।’ এএফপিকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন ওয়াকার। এ্যাডিলেড ওভালে উন্মাদনার ম্যাচে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩০০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত। দুরন্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তাতে নেতৃত্ব দেন বিরাট কোহলি। জবাবে ৪৭ ওভারে ২২৪ রানে অলআউট হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। অধিনায়ক মিসবাহর ৭৬ ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যান হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারেননি। সামনের দিকে তাকাতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওই ম্যাচের প্রসঙ্গে ফিরে যান কোচ। ওয়াকার বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে তিন শ’ রান টপকে জেতা সম্ভব। এটা মোটেই কঠিন কাজ নয়। একদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে আয়ারল্যান্ডও তা করে দেখিয়েছে! সমস্যাটা আমাদের ব্যাটসম্যানদেরই। টার্গেট সাড়ে তিন শ’ হলেও এখানে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলতে হবে। মূল দায়িত্বটা ব্যাটসম্যানদের।’ ভারতের বিপক্ষে নাসির জামসেদকে বাইরে রেখে একাদশ সাজানো হয়। আহমেদ শেহজাদের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে অভিজ্ঞ ইউনুস খান সাজঘরে ফেরেন মাত্র ৬ রান করে। দল গঠন প্রক্রিয়ার কঠোর সমালোচনা করেছেন গ্রেট জাভেদ মিয়াঁদাদ। এ নিয়ে কোচের বক্তব্য, ‘একপ্রান্ত ধরে খেলার জন্য ইউনুসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চেয়েছি। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়েছে। আগামী ম্যাচে আমাদের বিকল্প ভাবতে হবে।’ পাকিস্তানের যা অবস্থা, তাতে বিকল্প ভাবাটা সহজ নয়। কারণ ইনজুরির জন্য শেষ মুহূর্তে তারকা ওপেনার মোহাম্মদ হাফিজ ছিটকে গেলে দলে ডাকা হয় শেহজাদকে, যিনি গত প্রায় দেড় বছর দলেই ছিলেন না। তাই হুট করে ভারতের মতো স্নায়ু যুদ্ধে তাকে নামানোর সাহস পায়নি পাকিস্তানী নির্বাচকরা।’ শুরুতেই বিশ্বকাপে নিজেদের অবস্থান নিয়ে যে মনোভাবের কথা বলছিলেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ওয়াকার আরও যোগ করেন, ‘ফেবারিট হওয়ার চাপ অনেক। গতবারও (২০১১) আমরা ফেবারিট ছিলাম না, কিন্তু দারুণ ক্রিকেট খেলে সেমিফাইনালে উঠেছিলাম। এবারও তাই, তবে বড় পার্থক্য কন্ডিশন। অস্ট্রেলিয়ার দ্রুতগতির বাউন্সি উইকেটে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় এবার বিশ্বকাপ জয় করতে পারে অস্ট্রেলিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা!’ নিজেদের ফেবারিট না ভেবে নির্ভার থাকতে চান ৪৩ বছর বয়সী এই তারকা। ‘নিজেদের ফেবারিট ভেবে খেলোয়াড়দের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। এতে তারা স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারবে। আমার স্কোয়াডে বিশ্বমানের পাঁচ পেসার রয়েছে। আশা করছি বিশ্বকাপের বাকি সময়টা দারুণ কাটবে!’ ইমরান খানের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে এ পর্যন্ত একবারই বিশ্বকাপ জয় করে, সেটি এই অস্ট্রেলিয়ার-নিউজিল্যান্ডেরই মাটিতে। সেবারও ফেবারিট ছিল না তারা। সুতরাং কোচ যতই বলুন, আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান যে কোন কিছুই করে বসতে পারে। মিসবাহ-উল হকের নেৃতৃত্বাধীন দলে আছেন শহীদ আফ্রিদির মতো অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। গতবার ভারত-বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে অধিনায়ক ছিলেন আফ্রিদি। আর কোচ ছিলেন এই ওয়াকারই। মাঝে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। অনেক নাটকীয়তার পর আরেকটি বিশ্বকাপ সামনে রেখে ফের পরিচর্যার দায়িত্বে ওয়াকার। গ্রুপ ‘বি’ এ এবার চ্যাম্পিয়ন ভারত ছাড়া আছে হট ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড ও জায়ান্ট-কিলার আয়ারল্যান্ড। টেস্ট খেলুড়ে জিম্বাবুইয়ে এবং সহাযেগী সদস্য আরব আমিরাত। সুতরাং খুব বেশি অঘটনা না ঘটলে জিম্বাবুইয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড ও আরব আমিরাতের বিপক্ষে জয় নিয়ে অনায়াসে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ থাকছে পাকিস্তানের। ওয়াকার বলেন, ‘প্রতিপক্ষ ভারত বলেই প্রথম ম্যাচ নিয়ে এত কথা হচ্ছে। টুর্নামেন্টে আমরা একটি ম্যাচই খেলেছি। সুতরাং ওই ম্যাচ নিয়ে খুব ভাবছি না। আমাদের লক্ষ্য পরবর্তী ম্যাচগুলোতে ভাল খেলা। নিজেদের সামর্থ্য মেলে ধরে সেরাটা বের করে আনা। লক্ষ্য পূরণের সামর্থ্য রয়েছে, আবারও বলছি ব্যাটস্যানদেরই প্রথম দায়িত্বটা নিতে হবে।’
×