ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাঘের থাবায় ক্ষত-বিক্ষত আফগানরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাঘের থাবায় ক্ষত-বিক্ষত আফগানরা

মিথুন আশরাফ ॥ কোথায় ‘আফগান-জুজু’, ‘আফগান-ভয়’ নিয়ে কথা হয়েছে, আফগানিস্তান তো বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পেল না। হারল আবার রেকর্ড ১০৫ রানের বড় ব্যবধানে। বাংলাদেশ শুধু বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জিতে শুভসূচনাই করল না, অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরাও যেন জিতে নিল। ক্যানবেরার মানুকা ওভালে হয় খেলাটি। এমনই অবস্থা দেখা গেছে, যেন বাংলাদেশেই খেলছে মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিমরা! সব দর্শক ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে প্রতিনিয়ত গর্জন করছে। বাংলাদেশের দর্শকে টইটুম্বুর থাকে স্টেডিয়াম। আফগানিস্তানের দর্শকও ছিল। তবে বাংলাদেশের দর্শকদের ভিড়ে দেখাই যায়নি তাদের। যেমনটি মাঠের খেলাতেও আফগানিস্তানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে বাংলাদেশকে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের মাটিতে হারানোর পর থেকেই উচ্চবাচ্য করেছে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে এসে সেই সব উধাও হয়ে গেছে। টস জিতে বাংলাদেশই ব্যাটিং করে আগে। ৫০ ওভারে ২৬৭ রান করে অলআউট হয়। অর্ধশতক করা দুই ব্যাটসম্যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীমের পঞ্চম উইকেটে করা ১১৪ রানের রেকর্ড জুটি (বিশ্বকাপে) দলকে বড় স্কোর গড়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। শেষপর্যন্ত দল জয় পাওয়ার মতো ভীতই গড়ে। এ রান আফগানিস্তান অতিক্রম করে জয় পাবে না, তা যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের চলনে-বলনেই বোঝা যায়। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই খেলে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। শেষপর্যন্ত তাই দেখা গেছে। মাশরাফি বিন মর্তুজা (৩/২০) ও সাকিবের (২/৪৩) বোলিংয়ের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে ৪২.৫ ওভারে ১৬২ রানেই গুটিয়ে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস। বাংলাদেশ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৭১ রান করে ম্যাচসেরা হন মুশফিকুর রহীম। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতে অবশ্য খানিকটা ভয় যুক্ত হয়। যখন ৪৭ রানে তামিম ইকবাল (১৯) আউটের পর ৫২ রানেই এনামুল হক বিজয়ের (২৯) উইকেটটিও হারাতে হয়। এরপর থেকেই দল এগিয়ে চলতে থাকে। সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। দুইজন মিলে তৃতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন। এ দুইজনই মূলত ম্যাচের গতিবিধি বাংলাদেশের দিকে নিয়ে আসেন। দলীয় ১০২ রানে গিয়ে সৌম্য (২৮) আউট হওয়ার পর কিছুক্ষণ এগিয়ে যেতেই ১১৯ রানে মাহমুদুল্লাহ’ও (২৩) সাজঘরে ফেরেন। হামিদ হাসান, শাপুর জাদরানদের মতো পেসাররাও বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভোগাতে থাকেন। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও যেন পণ করেই নেমেছিলেন, যে করেই হোক ম্যাচ হারা যাবে না। তাই তো আফগানরা যেন এরপরই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের আসল রূপ দেখতে থাকেন। সাকিব-মুশফিকই দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। আফগানিস্তান বোলাররা শুধু তাদের রুখে দিতে চেষ্টাই করে যান। সাকিব-মুশফিক মিলে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকেন। একটা সময় গিয়ে দুইজনই অর্ধশতক করে ফেলেন। মুশফিক ১৯তম অর্ধশতকটি করে ফেলেন। সাকিবও বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ২৮তম অর্ধশতকটি করে ফেলেন। শুধু কী তাই, সাকিব চার হাজার রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে চার হাজার রান করতে সাকিবের ২৩ রান দরকার ছিল। সাকিব করে ফেলেন ৬৩ রান। ৫১ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় এ রান করে ২৩৩ রানের সময় সাকিব আউট হয়ে যান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার আউট হওয়ার আগেই বিশ্বকাপে সেরা জুটিটি হয়ে যায়। যে জুটির ওপর ভর করেই বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে। সাকিব আউটের কিছুক্ষণের মধ্যে ২৪১ রানে সাব্বির রহমান রুম্মনও (৩) সাজঘরে ফেরেন। এরপর দিনের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকের (৫৬ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৭১ রান) উইকেটেরও পতন ঘটে। ততক্ষণে দল ২৪৭ রানে চলে যায়। এরপর ব্যাট হাতে নেমে মাশরাফিই (১৪) যা একটু জ্বলে উঠেন। মুমিনুল ৩ রানে রান আউট হন। তাসকিন ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। সাকিব-মুশফিক যেভাবে খেলছিলেন, মনে করা হচ্ছিল দল বোধ হয় ৩০০ রান করে ফেলবে। তা না করলেও ২৮০ রান তো হবেই। কিন্তু সাকিব, মুশফিকের পর মাশরাফি একটু ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করলেও ২৬৭ রানের বেশি করা যায়নি। এ রানই আবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। এর আগে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ২৮৩ রান ছিল সর্বোচ্চ স্কোর। এমন স্কোর হওয়ার পরই বোঝা গেছে বাংলাদেশই ম্যাচটি জিততে যাচ্ছে। যখন ৩ রানেই আফগানিস্তানের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ (জাভেদ আহমাদি, আফসার জাজাই ও আসগার স্টানিকজাই) উইকেটের পতন ঘটে গেল তখন জয় যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এরপরও চতুর্থ উইকেটে নওরোজ মঙ্গল ও সামিউল্লাহ সেনওয়ারি মিলে ৫০ ও ষষ্ঠ উইকেটে নাজিবুল্লাহ জাদরান ও মোহাম্মদ নবি মিলে ৫৮ রানের জুটি গড়ে একটু প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার পর কখনই মনে হয়নি আফগানিস্তান জিততে পারে। আফগানিস্তানের ইনিংসে শুরুতেই যে ধাক্কার দেখা মিলে, এরপর বড় জয়ই যে বাংলাদেশের পাওনা হতে যাচ্ছে তাও বোঝা যায়। শেষ পর্যন্ত তাই হয়। বিশ্বকাপে ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬৭ রানের জয়টিই রানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের বড় জয় ছিল। এবার আফগানিস্তানকে পেয়ে সেই রেকর্ড ভঙ্গ করে সর্বোচ্চ রানে জেতার নতুন রেকর্ডও গড়ে নিল বাংলাদেশ। এক এক করে (এনামুল, সৌম্য, সাব্বির, মুমিনুল, তাসকিন) পাঁচ ক্রিকেটার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলল। এ তরুণ দল নিয়েই আফগানিস্তানকে পাত্তাই দিল না বাংলাদেশ।
×