ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগুনে পুড়ে হত ৪ দগ্ধ ২৫

বগুড়ায় পেট্রোল বোমার ভীতিকর আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বগুড়ায় পেট্রোল বোমার ভীতিকর আতঙ্ক

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ দিনা কয়েক কিছুটা স্বস্তি থাকার পর বগুড়ার সড়ক ও মহাসড়কে ফের রাত নামলেই পেট্রোলবোমার আতঙ্কে ভীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। গেল প্রায় দেড় মাসে বগুড়ায় অন্তত ৭২টি যানবাহনে (ট্রাক, বাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা) পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৪ জন। ইটপাটকেল নিক্ষেপে নিহত হয়েছেন একজন। দগ্ধ হয়ে এখনও হাসপাতালে ও বাড়িতে কাতরাচ্ছেন ২৫ জন। এর বাইরে যানবাহন ভাংচুর করা হয়েছে দেড় শতাধিক। রেলপথের স্প্যান্ডেল উপড়ানো হয়েছে প্রায় ৬শ’। তবে আগেভাগে রেলকর্মীরা তা দেখায় দুর্ঘটনা থকে রক্ষা পেয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন। প্রায় প্রতিদিনিই শহরে এবং আশপাশের এলাকায় সন্ধ্যার পর হতে (কখনও দিনের বেলায়) ককটেল বিস্ফোরণ ও বোমা ফুটছে। গেল দেড় মাসে বগুড়া অঞ্চলে গ্রেফতার করা হয়েছে ৬১৮ জন। এরা সকলেই বিএনপি জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মী ও ক্যাডার। বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৯টি পেট্রোলবোমাসহ অন্তত ৫০টি ককটেল। এর মধ্যে শেরপুরে শিবিরের একটি ঘাঁটি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১০টি পেট্রোলবোমা। পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতকারীরা বেশিরভাগ সময় চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। তারা পুলিশের ওপরও মাঝেমধ্যে ককটেল ছুড়ে দেয়। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে রাবার বুলেট ছুড়লে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এদিকে পরিবহন শ্রমিকরা জানায় এর মধ্যেই দিনের বেলায় দূরপাল্লার কোচ চলাচল শুরু করেছে। সকাল থেকে বেলা আড়াইটার মধ্যে এসব যাত্রীবাহী কোচ ঢাকা অভিমুখে রওনা হয়। ঢাকা থেকে কয়েকটি কোচ ছেড়ে আসে। তবে যাত্রী সংখ্যা এখনও বাড়েনি। আন্তঃজেলা কিছু বাস চলাচল শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, ঢাকাগামী বাস কোচ ও ট্রাকে পুলিশ প্রোটেকশন দেয়া হয়। পরিবহন শ্রমিকদের আরেক সূত্র জানায়, বগুড়া-ঢাকা ও বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের দক্ষিণে বগুড়ার চান্দাইকোনা সীমানা থেকে উত্তরের মোকামতলার রহবল পর্যন্ত ২০টি পয়েন্ট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে মহীপুর, নয়মাইল, ফটকিব্রিজ, লিচুতলা, বনানী, বাইপাস সড়কের মেডিক্যাল কলেজের সামনে, সিলিমপুর, নিশিন্দারা, ঝোপগাড়ি, বরোপুর, মাটিডালি, গোকুল, মহাস্থান, চ-িহারা, বেলাইল, তিনমাথা ও চারমাথাসহ কয়েক পয়েন্টে হরহামেশাই পেট্রোলবোমার হামলা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের হিসাবে এ পর্যন্ত পেট্রোলবোমায় অগ্নিদগ্ধের তালিকায় রয়েছেন ট্রাকচালক পটল মিয়া, ট্রাকচালক টিটন মিয়া, চালকের সহকারী আব্দুর রহিম, আসবাবপত্র ব্যবসায়ী সাজু মিয়া, ট্রাকচালক মাসুদ আলী, সহকারী জাহাঙ্গীর আলম, ট্রাকচালক সবুজ মিয়া, ট্রাকআরোহী সুরুজ আলী, ব্যবসায়ী রেজাউল করিম, ট্রাক সহকারী ইমরান হোসেন, পান ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ, ট্রাকচালক ওবায়দুর রহমান সহকারী মজনু মিয়া, ট্রাকচালক আব্দুল কাদের (৩৮) ও হেলপার লিটন কাজী (২৬)। দগ্ধদের মধ্যে পান ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম, আব্দুল রহিম ইমরান হোসেন ও হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল, বগুড়া ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ পর্যন্ত যে স্পটগুলোতে বেশি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে তা হলো, বারোপুর, নুনগোলা, তিনমাথা নিশিন্দারা গোকুল বেলাইল শাজাহানপুর। সর্বশেষ সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের বেতগাড়ি এলাকায় বাবলু ফিলিং স্টেশনের সামনে কয়লা বাহী একটি ট্রাকে দুর্বৃত্তরা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করলে আগুন ধরে যায়।
×