ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুয়াকাটায় পর্যটন ব্যবসায় ধস

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কুয়াকাটায় পর্যটন ব্যবসায় ধস

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৭ ফেব্রুয়ারি ॥ কুয়াকাটার আধুনিক হোটেলগুলোর মধ্যে একটি ‘বীচ হেভেন।’ ৪৩ কক্ষের হোটেলটির কাজ শেষ করতে অন্তত পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে গড়ে মাসিক আয় হয় দেড়/দুই লাখ টাকা। বর্তমানে চলছে পর্যটনের ভরা মৌসুম। অথচ শেষ ১৫ দিনে মাত্র চার হাজার ছয় শ’ টাকা। হোটেলটিতে বিদ্যুত ব্যবহার না করেই সর্বনি¤œ চার্জ গুনতে হচ্ছে মাসে সাত হাজার পাঁচ শ’ টাকা। ১৫ জন স্টাফের খাবার খরচ গুনতে হচ্ছে অন্তত ৪৫ হাজার টাকা। আর বেতন বাবদ খরচ রয়েছে ৭৯ হাজার টাকা। এভাবে জানুয়ারি মাসে লাভ তো দূরের কথা লোকসান গুনতে হয়েছে দেড় লক্ষাধিক টাকা। লোকসানের এমন তথ্য দেন ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা মিঃ রঞ্জু। আরেক আধুনিক হোটেল নীলঞ্জনা। তাদের গড়ে মাসিক লোকসান প্রায় দুই লাখ টাকা। একই দশা গ্রেভার ইন,সী-ভিউ, বিশ্বাস প্যালেস, কুয়াকাটা ইন, কুয়াকাটা গেস্ট হাউসসহ অন্তত ৪০টি আবাসিক হোটেলের। পর্যটন হলিডে হোমস এবং পর্যটন ইয়ুথ ইনের একই হাল। কোথাও কোন পর্যটক নেই। বীচ খাঁ খাঁ করছে। ব্যবসায়ীরা এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। দু’টি বছরে পর্যটনের ভরা মৌসুমেও ব্যবসা করতে পারেননি। উল্টো কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। একই দশা অন্তত ৬০টি খাবার হোটেলের। ঝিনুক, কাপড়, স্টেশনারি, শুঁটকি, মনোহর মুদি দোকানিরাও আছেন চরম বিপাকে। সৈকতে ছাতা বিছানো চার জন, অন্তত ৬০ জন বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার। শতাধিক ভাড়াটে হোন্ডা চালক। ট্যুরিস্ট বোট রয়েছে ১৬টি। সবাই বেকার। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে জঙ্গী স্টাইলে পেট্রোল বোমা হামলা আতঙ্কে পর্যটক না আসায় এখন এসব ব্যবসায়ী চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ছাড়াও এর সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই হাজার পরিবারের জীবন-জীবিকার পথ বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এসব মানুষ দু’চোখে এখন সর্ষেফুল দেখছেন। শুধু ব্যবসায়ী নয়। কুয়াকাটায় পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমন ঘটলে এর সঙ্গে জীবন-জীবিকা জড়িত রিক্সা-ভ্যান চালক, চায়ের ক্ষুদে দোকানিসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজার হাজারো মানুষের। সবাই এখন বেকার দিন গুনছেন। ধার-দেনায় এরা সবাই কাহিল হয়ে পড়েছেন। বড় বড় হোটেল মালিকরা কর্মচারীদের বেতনভাতা দিতে পারছেন না। একই দশা খাবার হোটেল মালিকদের। সবার চোখে-মুখে হতাশা ও চরম উৎকণ্ঠার ছাপ। কবে নাগাদ এ দুর্ভোগের উত্তরণ ঘটবে তাও তাদের জানা নেই। ইতোমধ্যে অন্তত শত কোটি টাকার লোকসানে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। যেখানে শত কোটি টাকা লাভ গোনার কথা। এভাবে কুয়াকাটার পর্যটন শিল্পে ধস নেমে এসেছে। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সকল রুটে সারাদিন বাসসহ সকল যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এমনকি ঢাকা পর্যন্ত দিবা সার্ভিসের বাস চলাচল করছে। হরতাল-অবরোধের কারণে কুয়াকাটায় নেই পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমন। শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে পর্যটক-দর্শনার্থী। শঙ্কা জেগেছে ব্যবসা বন্ধের। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানালেন, ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠেছে। এখন হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি। ব্যাংকঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে বসে বসে। ভবিষ্যত নিয়ে সবাই শঙ্কিত রয়েছেন।
×