ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুনতাসীর মামুন

যারা দেশের জন্য হুমকি তাদের সঙ্গে সংলাপ হবে কী ভাবে?

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যারা দেশের জন্য হুমকি তাদের সঙ্গে সংলাপ হবে কী ভাবে?

(১৭ ফেব্রুয়ারির পর) বিএনপি-জামায়াতের বর্তমান স্ট্র্র্র্যাটেজি একটিইÑ মানুষ পোড়ানো। ব্যবসাবাণিজ্য, শিক্ষা বন্ধ করে দেয়া। তাদের ধারণা, এতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। এবং তারা বলতে থাকবে সরকার সংলাপ করলেই তো পারে। শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থহানি হলে তারাও সরকারকে চাপ দেবে। সরকার সংলাপে বসবে। সংলাপের ফলাফল শূন্য হলে কিছু আসে যায় না। তারা বলতে পারবে আমরা তো বাধ্য করেছি। এবং সেই জোরেই তারা সরকারকে বাধ্য করবে তাদের সব দাবি মেনে নিতে এবং জনগণ তাদের সঙ্গে থাকবে। হতে পারে এটি ভাল স্ট্র্যাটেজি। এ দাবি বিএনপিকে আদায় করতেই হবে। এর কারণ সাদা চোখে দৃশ্যমান নয়। কারণটা হলোÑ ২০১৮ সাল পর্যন্ত যদি আওয়ামী লীগ থাকে, তাহলে বিএনপি এ রকম দল হিসেবে টিকে থাকবে না। বিএনপির নেতৃস্থানীয়দের বয়স হবে তখন ৭০-৮০। এতদিন অর্থাৎ ১৯৭৫ সাল থেকে তারা যে শ্রেণী তৈরি করে ভিত্তি গেড়েছিল যে স্বার্থের, সেটিও নড়বড়ে হয়ে যাবে। মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে তরুণরা সমর্থক। ফলে জামায়াতও সুবিধা করতে পারবে না। তরুণ যারা ক্যারিয়ারিস্ট তারাও জঙ্গী মৌলবাদ সমর্থন করবে কিনা সন্দেহ। জিয়া পরিবারের ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নও থাকবে না। বিএনপি-জামায়াত না থাকলে সুজন, সুশীল ও স্মারকিরা কোথায় [যারা স্মারকলিপি দিচ্ছেন] যাবেন? দলের একটা বড় অংশ অন্য দল করবে; যেমন করেছেন ডা. ব. দ. চৌধুরী বা লে. ক. অলি আহমদ বা ব্যা. না. হুদা। জামায়াতের একাংশ হয়ত বিএনপিতে যোগ দেবে নিষিদ্ধ হলে। এ পরিস্থিতিতে ভুল স্ট্র্যাটেজি হোক বা ঠিক স্ট্র্যাটেজি হোক, তাদের দাবি মানতে বাধ্য করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। বিকল্প ছিল, যদি রাজনৈতিক দলের মতো বিএনপি-জামায়াত কাজ করত। কিন্তু তারা তো এটাকে মস্তানদের এলাকা দখলের মতো নিয়েছেন। মস্তানরা হঠাৎ বাধাপ্রাপ্ত হলে, প্রতিরোধ হলে, নেতা বদল করে বা নতুন মস্তানের উত্থান ঘটে। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটতে পারে। সুতরাং পেট্রোলবোমা শুধু নয়, দরকার হলে তারা টার্গেট কিলিং করবে, ১৯৭১ সালের মতো জ্বালাও-পোড়াও নীতি অনুসরণ করবে। আরেকটু বিষয়ের কথা বললে বলবেন, আমরা বাড়াবাড়ি করছি। না বাড়াবাড়ি করছি না। জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল পাকিস্তানী মানস সৃষ্টি করার জন্য। জিয়া-খালেদা-নিজামী তাই করেছেন। এখন আওয়ামী লীগ যদি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকে তা হলে সেটিও হুমকির সম্মুখীন হবে। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির বিপরীতে এরা পাকিস্তানী মানসের রাজনীতিকে সম্বল করেছিল, সেজন্য হেজাবি গোষ্ঠী সৃষ্টি করতে পেরেছিল। ঐ রাজনীতি না থাকলে তো আওয়ামী লীগের বিপরীতে কি নিয়ে তারা দাঁড়াবে? আমি মনে করি, আগেও বলছি আবার বলছিÑ বর্তমান সংঘাত নির্বাচন নিয়ে কোন সংঘাত নয়। এটি পাকিস্তান বাংলাদেশের সংঘাত। এটি এড়িয়ে গিয়ে শুধু নির্বাচনই সব সঙ্কটের সমাধান; এ তত্ত্ব সত্যকে আড়াল করার তত্ত্ব। প্রশ্ন হচ্ছে, কতদিন অবরোধ চালানো যাবে? এতে কি জীবনযাত্রা একেবারে থেমে যাবে? ১৯৭১ সালে জুলাই-আগস্ট মাসেও বাঙালী অধীর হয়ে প্রশ্ন করেছিলÑ কবে ভারতীয়রা সাহায্য করবে, মুক্তিযোদ্ধারা কি করছে, বাংলাদেশ সরকার কেন সমঝোতা করছে না? বাঙালীর স্বভাবই এ রকমÑ সব নগদ পেতে চায় এবং এর জন্য ধৈর্য ধরতে সে আগ্রহী নয়। শুধু তাই নয়, সে চায়, সবাই তার জন্য সব করে দেবে সে শুধু মালাইটা একটু চেখে দেখবে। কিন্তু এটিও সত্য, অনেক বাঙালী ধৈর্য ধরেছিল, প্রতিরোধে অংশ নিয়েছিল। এবং বিজয় এসেছিল। সেই কঠিন সময়েও কিন্তু জীবনযাত্রা একেবারে থামানো যায়নি। কতদিন বিএনপি-জামায়াত অবরোধ রাখবে? আরও একমাস? হরতাল প্রতিদিন দেয়া হচ্ছে। মানছে কেউ? অবরোধে কি কেউ কোথাও যাচ্ছে না? মাঠপর্যায়ে যেসব নেতা কাজ করেন, তারা বলছেন, বিবৃতির মাধ্যমে আমরা নির্দেশ পাচ্ছি কিন্তু বিবৃতিওয়ালারা জানে না আমরা কি অসুবিধায় আছি। পরীক্ষা কি খালি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিবারের সন্তানরাই দিতে পারছে না? তা তো নয়, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সন্তানদেরও একবছর নষ্ট হবে বা হচ্ছে। ব্যবসা খালি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষীয়দেরই মার খাচ্ছে? পাকিস্তানপন্থীদের বিএনপি সমর্থক বলে কি সে তার ব্যবসা-সম্পদ, পরিবার, খোয়াবে খালেদা জিয়া ও তার পুত্রের স্বার্থ দেখার জন্য? পুড়ে যে সব মানুষ মারা যাচ্ছে তারা কি সব সরকারপন্থী? সাধারণ মানুষ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা পুড়ে যাওয়া মানুষগুলোর পরিবার কি শেখ হাসিনাকে দোষ দিচ্ছে না, খালেদাকে? পত্রিকায় দেখলাম, এক গাড়িশ্রমিক বলেছেন, বাচ্চার খাবার কেনার জন্য মোবাইলটা বিক্রি করে দিয়েছেন। এটি তার শেষ সম্বল। এরপর হয়ত বেঁচে থাকার জন্য তার স্ত্রীকে পতিতালয়ে পাঠাতে হবে? যদি এ রকম মানুষ তার মোবাইল ফোনটি কিনতে না পারে এবং স্ত্রী-কন্যাকে দেহ বিক্রি করতে হয় তাহলে তারা খালেদা জিয়াকে মাফ করবেন? (চলবে)
×