ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাশরাফিদের মর্যাদার বিশ্বকাপ শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মাশরাফিদের মর্যাদার বিশ্বকাপ শুরু আজ

মিথুন আশরাফ ॥ এশিয়া কাপের দুঃসহ স্মৃতি বাংলাদেশকে এতটাই কম্পিত করেছে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা হলে কোন ক্রিকেটারের মুখ দিয়েই ‘জয়’ কথাটি বের হতে চায় না। যেমনটি বের হয়নি মঙ্গলবার বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার মুখ দিয়েও। আজ আবারও বাংলাদেশের সামনে আরেকটি ‘আফগান-জুজু’-‘আফগান-ভয়’। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচেই ক্যানবেরার মানুকা ওভালে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায় প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। এ ভয় এখন বাংলাদেশ জয় করতে পারলেই হয়। তাহলেই তো ম্যাচেও জয় আসবে। বাংলাদেশও বিশ্বকাপে শুভসূচনা করবে। ম্যাচের আগে অবশ্য আফগানিস্তান যেন বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে চাচ্ছে। তাই তো আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবির কণ্ঠে বিশ্বাসী সুর, ‘বাংলাদেশ দল চাপে থাকবে। আমরা তাদের (বাংলাদেশে) দেশেই সর্বশেষ (এশিয়া কাপে) হারিয়েছি। আমরা আবারও হারাব। আমাদের আছে ভাল পেস আক্রমণ।’ নবি যেখানে বাংলাদেশকে হারাব বলতে পারছে, সখানে মাশরাফি কিন্তু ‘জয় পাব’ সেই কথাটি বলতে পারছেন না। বলেছেন, ‘আমরা টি২০ ক্রিকেটে আফগানিস্তানকে হারিয়েছি। কিন্তু ৫০ ওভারের একটি ম্যাচই খেলেছি। এবারও ৫০ ওভারের ম্যাচ। তবে খেলাটি বিশ্বকাপ। আমরা সর্বশেষ এশিয়া কাপে হারাতে (আফগানিস্তানকে) পারিনি। মনে হয় না সেটার কোন প্রভাব পড়বে। আশা করছি সেরা খেলাটাই খেলতে পারব।’ জয় পাওয়ার কোন ইঙ্গিতই নেই। এতেই বোঝা যাচ্ছে নবি যে চাপের কথা বলছেন, তা সত্যি। এ চাপ বাংলাদেশ নিজেরাই তৈরি করেছে। বিশ্বকাপের মিশনে আগে ভাগে গিয়ে যে এখন পর্যন্ত কিছুই নিজেদের করে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। দুটিতেই হেরেছে। আইসিসির নির্ধারিত প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিতেও হার হয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াকু হারের পর যেখানে আশা তৈরি হয়েছে। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। সেখানে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে হেরে সেই আত্মবিশ্বাস আবারও কমে গেছে। এখন যেন ক্রিকেটারদের ভেতর একটা ভয় ধরে গেছে। যদি হেরে যাই। সেই ভয়ই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের কুড়িয়ে কুড়িয়ে মারছে। অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে পেস আক্রমণ সবসময়ই যে কোন দলের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। সেখানে শাপুর জাদরান, দাওলাত জাদরান, মিরওয়াইজ আশরাফ, হামিদ হাসান, গুলবাদিন নাইবরা আছেন। যাদের নিয়েই আফগানিস্তান ভরসা করে আছে। এশিয়া কাপে যে বাংলাদেশকে প্রথম ম্যাচেই ৩২ রানে হারিয়ে দিয়েছিল আফগানিস্তান, বাংলাদেশের কন্ডিশনে সেই ম্যাচে শাপুর, হামিদদের বলেই কাবু হয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। সঙ্গে ৩ উইকেট নেয়া নবির অসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচই জিতে যায় আফগানিস্তান। সেবার অবশ্য এমন একজন বাংলাদেশ দলে ছিলেন না, যে একাই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এশিয়া কাপের আগে উচ্ছৃঙ্খল অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে নিষিদ্ধ ছিলেন সাকিব। তাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে পারেননি। সেই সুযোগে আফগানরাও হারিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। সাকিব থাকায় সেই কাজটি টি২০ বিশ্বকাপে আর করতে পারেনি। আফগানিস্তান তখন সাকিবের (৩/৮) ঘূর্ণিতে এমনই কুপোকাত হয়েছে, ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানেই হেরেছে। পাত্তাই পায়নি। এবারও আছেন সাকিব। খেলাও বিশ্বকাপ। সঙ্গে জয় পাওয়ার মতো সব ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্রিকেটারও আছেন দলে। যে পেস আক্রমণ নিয়ে এত গর্ব আফগানিস্তানের, বাংলাদেশেও সেই আক্রমণ আরও ভয়ঙ্কর। মাশরাফি এশিয়া কাপের ম্যাচে ছিলেন না। এবার আছেন। আছেন তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, আল আমিন হোসেন। ব্যাটিংয়ে একের পর এক সেরা ক্রিকেটার আছেন। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, এনামুল হক বিজয়, মুমিনুল হক, সৌম্য সরকার আছেন। আছেন এবার সাকিবও। যিনি ব্যাট ও বল দুই বিভাগেই এমন পারদর্শী, যে কোন দলের জন্যই ভয়ের কারণ। আফগানিস্তানের জন্যও নিশ্চয়ই তাই। বাংলাদেশকে মুখের কথায় যতই চাপে ফেলার চেষ্টা করুক, আফগানরাও জানে দলটি বাংলাদেশ। এবং এবার খেলবেন সাকিব ও মাশরাফিও। সাকিবকে নিয়ে তো বাংলাদেশ কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে বলেই দিয়েছেন, ‘আমাদের আছে যে কোন ফরমেটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আমাদের দলের জন্য যে মূল ক্রিকেটার। সে প্রধান চরিত্রে থাকবে এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে, আমি তার কাছ থেকে সেই আশাই করছি। সে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে জানে।’ সাকিবের প্রতি অগাধ বিশ্বাস হাতুরাসিংহের। যদিও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি সাকিব। মনে করা হচ্ছে, আসল পর্বে গিয়েই জ্বলে উঠবেন সাকিব। তাই যদি হয়, তাহলে আফগানিস্তান লুকাবে কোথায়? আবার ইন্টারনেট মারফতে জানা গেছে, শাপুর জাদরান খানিক ইনজুরিতে আছেন। এ দিকটিতেও তো আফগানিস্তান পিছিয়ে পড়ল। যে দিকটি নিয়ে আফগানদের এত গর্ব, সেই দিকই যদি খর্ব হয়ে যায়; তাহলে জয় আসবে কিভাবে? বাংলাদেশ অবশ্য আফগানিস্তানকে নিয়ে যত না ভাবছে, কিভাবে জয় নিজেদের করে নিয়ে বিশ্বকাপ ভালভাবে শুরু করা যায়, তা নিয়ে ভাবছে। তাই তো মাশরাফি বলেই দিয়েছেন, ‘আমাদের আছে অনেক ভাল পেস আক্রমণ। যদিও তারা বয়সে তরুণ, কিন্তু সামর্থ্য আছে ভাল করার। আর আমি মনে করি আমাদের বিশ্বসেরা স্পিন আক্রমণ আছে। যে কোন উইকেটেই তারা ভাল করতে পারে। আমাদের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। যেমন মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও নাসির হোসেন। যদি অভিজ্ঞরা অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে আর তরুণরা তাদের সহযোগিতা করে যেতে পারে, বিশ্বকাপে আমাদের ভাল সুযোগ আছে। আমরা কোন দলকে হারানোর টার্গেট নিয়ে এগিয়ে যাব না। এতে করে আমাদের চাপ তৈরি হয়ে যেতে পারে। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগিয়ে যেতে চাই। আশা করছি ভালই করব।’ সেই ভালর শুরু আজ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মাটিতে খেলতে নামা আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়েই হোক। ‘আফগান-জুজু’ জয় করার মধ্য দিয়েই হোক। সেটিই এখন সবার চাওয়া।
×