ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে তীব্র ক্ষোভ, অসন্তোষ

খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি

সংসদ রিপোর্টার ॥ অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে তাঁরা বলেন, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রেসক্রিপশনে লাদেন-তালেবানী স্টাইলে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছেন খালেদা জিয়া। তাঁর ডাকা হরতাল আজ ‘ভোঁতা হরতাল ও প্রহসনে’ পরিণত হয়েছে। দেশের সবকিছু আজ স্বাভাবিক, বিএনপির নেতাকর্মীরাও তাঁর কথা শুনে না। তাই মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে খালেদা জিয়া কোনদিন ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। নাশকতা-সন্ত্রাস চালিয়ে জোর করে নির্বাচনও আদায় করতে পারবেন না। বরং গোটা জাতি যেভাবে ফুঁসে উঠছে অচিরেই জনগণের রুদ্ধরোষে বিএনপি নেত্রী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবেন। মঙ্গলবার রাতে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন সরকারী দলের গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, একেএমএ আওয়াল, ফরিদুল হক খান, সামসুল হক চৌধুরী, আবদুল মজিদ খান, আবদুল মালেক, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, রোকসানা ইয়াসমীন সুইটি ও জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধা, এম এ হান্নান প্রমুখ। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিগত ছয় বছরে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কিত খালেদা জিয়া বুঝতে পেরেছেন যেভাবে দেশ সমৃদ্ধির পথে যাচ্ছে তাতে আগামী ৩ বছরে দেশের মানুষ তাঁর নাম ভুলে যাবে, বিএনপিও হারিয়ে যাবে। এ কারণেই উনি হরতাল-অবরোধের নামে দেশ ধ্বংস করতে চাইছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার হরতাল ‘ভোঁতা হরতাল ও প্রহসনে’ পরিণত হয়েছে। তাঁর হরতাল কেউ মানে না। হরতাল চলছে মাঠে বিএনপির নেতাকর্মীর দেখা নেই, শুধু মাঝেমধ্যে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে। সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গীবাদের সঙ্গে গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। খালেদা জিয়া শত ষড়যন্ত্র করেও এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না। সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংসের খেলায় মেতেছে। গোটা জাতি যেভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রুখে দাঁড়িয়েছে খুব শীঘ্রই খালেদা জিয়ারা পরাজিত হবেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই- কোন অপশক্তিই তা রুখতে পারবে না। জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধা বলেন, দেশের গণতন্ত্রই আজ হুমকির মুখে। পৃথিবীর কোন দেশ আন্দোলনের এমন ভয়াল রূপ দেখেনি। নাগিনীরা বিষ ছড়িয়ে গোটা দেশকেই বিষাক্ত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশকে মৃত্যুর উপত্যাকায় পরিণত করার চেষ্টা চলছে। পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশকেও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় বিএনপি-জামায়াত জোট। এসব সন্ত্রাস-সহিংসতা বন্ধ করতে উপায় বের করতে হবে। হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হলেই সংলাপ বা আলোচনার সুযোগ আসবে। কিন্তু জোর করে নির্বাচন আদায় করা যাবে না। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বিএনপি নির্যাতনের কথা বলে, আর তারা ক্ষমতায় থাকতে আমার বিরুদ্ধে ১৩৭টি মামলা দিয়েছে। পাঁচ বছর একটি রাত আমি বাড়ি থাকতে পারিনি। হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ক্লিনহার্টের সেনাবাহিনী নামিয়েও নির্যাতন চালিয়েছে। আজ সব পদ হারিয়েও খালেদা জিয়া এখন পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করছেন। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, মানুষ হত্যা করে খালেদা জিয়া কোনদিন আসতে পারবেন না। সরকারী দলের একেএমএ আওয়াল বলেন, খালেদা জিয়ার অতীতের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে, এবারও হবেন। ঘাতক জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যতই চক্রান্ত করুক খালেদা জিয়াকে দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। আর কোনদিন গ্রহণ করবে না। জাতীয় পার্টির এমএ হান্নান আগামী ৫ বছর আইন করে হরতাল-অবরোধ বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, জনগণের কাছে না গিয়ে বিএনপি বিদেশীদের প্রভুদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। তারা দেশের জনগণ ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না বলেই তারা আজ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফরিদুল হক খান বলেন, হরতাল-অবরোধ ডেকে মাঠে না থেকে বিএনপি-জামায়াত লাদেন-তালেবান স্টাইলে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে। কিন্তু এসব করে তারা কোন দাবিই আদায় করতে পারবে না। বরং জনগণের ক্ষোভে আগুনে তারা ছারখার হয়ে যাবে। সামসুল হক চৌধুরী অবিলম্বে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার প্রেসক্রিপশনে লন্ডনে বসে তারেক জিয়া নির্দেশ দিচ্ছেন, আর বিএনপি-জামায়াত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে। শুধু সন্ত্রাস-নাশকতা দমন করলেই হবে না, ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনাসহ যেসব জামায়াতি প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের যোগান দেয়া হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করতে হবে।
×