ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকেই সঙ্কটের সমাধান করতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র নাক গলাবে না ॥ বার্নিকাট

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশকেই সঙ্কটের সমাধান করতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র নাক গলাবে না ॥ বার্নিকাট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান বাংলাদেশকেই করতে হবে। এ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে নাক গলাতে তিনি ঢাকায় আসেননি। তিন সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে আসার পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি এসব কথা বলেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও জানান, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃত করতেই তাঁর মনোযোগ থাকবে। এছাড়া চলমান সহিসংতায় নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাজধানীর আমেরিকান ক্লাবে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট জানান, বিশ্বে যারা বাংলাদেশের বন্ধু, তারা সবাই চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর বাংলাদেশ যদি কোন সহযোগিতা চায়, তাহলে তা দিতে তাঁর দেশ প্রস্তুত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের আহ্বান জানাবে কি-না সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে একের পর এক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় বার্নিকাটকে। সংলাপের কোন আহ্বান না জানিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্কটের সমাধান বাংলাদেশকেই করতে হবে। নাশকতাকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের কঠোর সমালোচনা করেন বার্নিকাট। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোন দলেরই পক্ষ নেয় না। ‘আমি খুব সরাসরি বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক শক্তি বা দলের পক্ষ নেয় না।’ পেশাদার কূটনীতিক বার্নিকাট বাংলাদেশে আসার আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মানবসম্পদ বিষয়ক ব্যুরোতে উপ-সহকারী সচিব পদে দায়িত্বে ছিলেন। ২৭ বছরের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বার্নিকাট দক্ষিণ এশিয়া নিয়েও কাজ করেছেন। গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকায় আসার পর ৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাত করে পরিচয়পত্র পেশ করেন মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। বিএনপি জোটের টানা অবরোধের মধ্যেই ঢাকায় তাঁর দায়িত্ব পালন শুরু হয়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে যে কর্মসূচীর শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালের শুরুতে বিএনপির বর্জনের মধ্যে ওই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে না হওয়ায় যত দ্রুত সম্ভব সব দলের অংশগ্রহণে আবারও নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে। রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের ছাড়পত্র পাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক সিনেট কমিটির শুনানিতে বার্নিকাটও ওই নির্বাচনকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলেছিলেন। বাংলাদেশে আরও বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নিশ্চিত করতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসারও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর এখনকার অবস্থান জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সেই নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবাই জানে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ আর এই বিশ্বাস থেকেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আমরা এগিয়ে নিতে চাই। বার্নিকাট বলেন, ওয়াশিংটনে কাউকে তিনি বলতে শুনেছিলেন যে, গণতন্ত্রের জন্য আকাক্সক্ষা বাংলাদেশের মানুষের জিনগত। আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশকে বোঝানোর জন্য এটা খুবই চমৎকার উপায়। আমার মনে হয়, আমাদের দুই দেশের মানুষেরই এটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের সমাজকে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বলে অভিহিত করে বার্নিকাট বলেন, এ দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধানে এই সুবিধা কাজে লাগাবে বলেই তাঁর বিশ্বাস, যাতে সবাই তাদের মতপ্রকাশ করতে পারে। এই সহিংসতা বন্ধ করতে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পারস্পরিক দূরত্ব কমিয়ে আনতে সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা একটি মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে দেশ হবে নিরাপদ ও সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্বকে আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সম্পর্ক তৈরি হয়েছে দুই দেশের মধ্যকার যৌথ আগ্রহ ও পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে। আমি এ দেশের সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজের সঙ্গে আমাদের যৌথ আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য মুখিয়ে আছি। সহিংসতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, মানুষ চলাফেরা করতে পারছে না, কাজ করতে পারছে না, এমনকি পণ্য পরিবহনও বিঘিœত হচ্ছে। আর এই সবকিছু এ দেশের রক্তপ্রবাহ আটকে দিচ্ছে। অস্থিতিশীলতা জঙ্গীবাদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে বলেও বার্নিকাট সতর্ক করে দেন। এছাড়া চলমান সহিংসতা ও নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বার্নিকাট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আইএসবিরোধী জোটে বাংলাদেশকে অংশ নিতে তাঁর দেশ কোন আহ্বান জানাবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একযোগে কাজ করে চলেছে। সে কারণে হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসবিরোধী সম্মেলনে অংশ নিতে সেখানে যাচ্ছেন। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গেও বৈঠক করবেন। এসবের মধ্যদিয়ে দুই দেশের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই আরও জোরদার হবে।
×