ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জুন মাসের মাঝামাঝি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জুন মাসের মাঝামাঝি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচন আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ এ লক্ষ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে কমিশনের। মঙ্গলবার কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য প্রকাশের পর নড়েচড়ে উঠেছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহী সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকরা। কোন ধরনের জটিলতার উদ্ভব না হলে বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও স্থানীয়ভাবে নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার পাশাপাশি নিজ নিজ দলীয় হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণে তৎপর রয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১০ সালের ১৭ জুন। এতে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলম বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপর ওই বছরের ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সভা। সে অনুযায়ী আগামী জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ। নির্বাচন কমিশন থেকে এর আগেও আভাস দেয়া হয়েছিল যে, এপ্রিল-মে’র মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করার। কারণ জুন মাসে থাকবে পবিত্র রমজান। রমজান মাসে নির্বাচন এড়াতে কমিশন একটু আগেভাগেই এ কাজটি সম্পন্ন করার চিন্তাভাবনা করে। সর্বশেষ মঙ্গলবার কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম চসিক নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় বেঁধে দেয়ায় এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খোরশেদ আলম জনকণ্ঠকে জানান, সর্বশেষ হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরীতে এখন ভোটার ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৮ জন। কিন্তু চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ে এর সংখ্যা সামান্য বাড়তে বা কমতে পারে। তবে খুব বেশি হেরফের হবে না। মোট ভোটার সাড়ে ১৮ লাখের কিছু কম বা বেশির মধ্যেই থাকবে। তিনি আরও জানান, কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল প্রস্তুতি তারা সম্পন্ন করে আনছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহী নেতা ও প্রার্থীগণ বেশ আগে থেকেই মাঠপর্যায়ে তাঁদের তৎপরতা শুরু করেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে চলে তাঁদের গণসংযোগ ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে টানার চেষ্টা। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা দলীয় সমর্থন লাভের আশায় তৎপরতা চালান হাইকমান্ডের দৃষ্টিতে আসার। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় অর্ধডজন নেতা সক্রিয় রয়েছেন মাঠে এবং একই সঙ্গে উচ্চপর্যায়ে। মাঠপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ স্পষ্ট হলেও সকলেই বলছেন, শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র যাকে সমর্থন দেয় তার পক্ষেই কাজ করবেন। চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় সমর্থন পেতে তৎপর আছেন আওয়ামী লীগের তিন নেতা। তন্মধ্যে রয়েছেন আগের হ্যাট্টিক বিজয়ী মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, নগর কোষাধ্যক্ষ ও চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তবে সাবেক এমপি ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি মাঠপর্যায়ে বেশি সক্রিয় না হলেও মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ইতোপূর্বে তিনি বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তাঁর পুরোপুরি প্রস্তুতি রয়েছে। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে আলোচনা বেশি মহিউদ্দিন চৌধুরী, আ জ ম নাছির ও চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামকে ঘিরে। কেননা, তারা বিভিন্ন কর্মসূচীর আড়ালে অনেক আগে থেকেই মাঠপর্যায়ে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী বরাবরই মাঠে সক্রিয় দলের কর্মসূচীতে। তাঁর রয়েছে বিরাট সমর্থকগোষ্ঠী। মেয়র পদে না থাকলেও নিজেকে শক্ত একটি অবস্থানে ধরে রাখতে সচেষ্ট থেকেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে আ জ ম নাছিরের সক্রিয়তাও বেড়ে যায়। মাঠপর্যায়ে তাঁরও রয়েছে বিরাট কর্মী ও সমর্থকগোষ্ঠী। প্রকাশ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে না বললেও ভেতরে ভেতরে সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছেন। মিডিয়াকে বিভিন্ন সময় বলেছেন, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী দলীয় সমর্থন না পেলে তিনিই হবেন মেয়র প্রার্থী। এই পদে প্রার্থী হবেন দলের নগর কমিটির সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক। এর বাইরে অন্য কেউ গ্রহণযোগ্য হবেন না। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। গত প্রায় দু’বছর ধরে তিনি নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দলের সমর্থক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশছেন। চউক চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে নগরীতে কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে তাঁরই অধীনে। উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরার কৌশলে তিনি মতবিনিময় করে চলেছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে। জানার চেষ্টা করছেন মানুষের অভাব-অভিযোগ, সমস্যা ও চাহিদার। তাঁর সময়ে সড়ক সম্প্রসারণ, নতুন সড়ক নির্মাণসহ অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। চউকের পরিকল্পনায় আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প। এছাড়া দুর্গত ও দুস্থ মানুষের মাঝে তাঁর পারিবারিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান বাদশা মাবিয়া ফাউন্ডেশনের সেবামূলক কর্মকা- রয়েছে। তিনিই দলীয় সমর্থন লাভ করবেন বলে আশাবাদ দলের একটি অংশের। এদিকে চসিক মেয়র পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক বিএনপির একাধিক প্রার্থীর তৎপরতা গত এক বছর ধরে পরিলক্ষিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আন্দোলনের নামে নাশকতা ও সহিংসতার অভিযোগে মামলার আসামি হয়ে গা-ঢাকা দিয়ে আছেন মাঠপর্যায়ের নেতারা। নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতাদের এখন আর দেখা পাওয়া যায় না। নেতাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। এমন একটি সময়ে সিটি নির্বাচন হলে বিএনপির অবস্থা কী হবে তা নিয়ে তৃণমূলেও রয়েছে হতাশা। বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত ছিলেন এবার দল থেকে সমর্থন লাভের চেষ্টায় সবচেয়ে এগিয়ে। কিন্তু বর্তমানে তাঁর দেখা নেই। অতিসম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার একটি ফোনালাপে ডা. শাহাদাতকে নাশকতার নির্দেশনা প্রদানের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে গেলে তিনি বেশ বেকায়দায় পড়ে যান। এতটাই আত্মগোপনে যে, তাঁর অবস্থান একেবারেই অজ্ঞাত। ফলে বর্তমান মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম মনজুর আলমকেই মনে করা হচ্ছে একমাত্র ভরসা হিসেবে। বিষয়টিকে অবশ্য বিএনপির অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, অবস্থার প্রেক্ষিতে হলেও দলীয় সমর্থন পেতে পরস্পরবিরোধী অবস্থান জোরালো না হওয়ার ফল পেতে পারেন মনজুর আলম। যেহেতু নেতারা মাঠে নেই সেহেতু মনজুর আলমকে নিয়ে দলে বিভক্তিও আর থাকার কথা নয়। তবে এরপরও সবকিছু নির্ভর করছে নির্বাচনপূর্ববর্তী সময়ে পরিবেশ কেমন থাকছে তার ওপর। সরকারের আচরণ যদি নমনীয় হয় তাহলে ঠিকই মনোনয়ন প্রত্যাশী মনজুর আলমের বিরোধী নেতারাও সক্রিয় হবেন।
×