ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষকদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা না করার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কৃষকদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা না করার নির্দেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কৃষি ঋণ পরিশোধ করতে না পারা কৃষকদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা না করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ইতোমধ্যে যেসব মামলা হয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করে মামলা থেকে রেহাই দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠক করে এ নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠক শেষে ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা জানান। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা এবং কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৭ হাজার ৩৭২ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলোÑ সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। কৃষকের কাছে এসব ব্যাংকের বকেয়া অর্থের পরিমাণ মাত্র ৫৭০ কোটি টাকা। গড়ে প্রতি কৃষকের কাছে পাওনা সাড়ে ২৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৫৪৫ জন কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত। সংবাদ সম্মেলনে এস কে সুর চৌধুরী বলেন, সামান্য ঋণের জন্য ২ লাখের মতো কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এ সব কৃষকরা ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাই এ সব কৃষকদের ঋণ পুনঃতফসিল করে তাদের মামলা নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ডেপুটি গভর্নর জানান, ইতোমধ্যে যে সব মামলা হয়েছে এবং যে সব কৃষকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করে মামলা থেকে রেহাই দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যে সব মামলা হয়েছে তা সমঝোতার ভিত্তিতে প্রত্যাহার করে কৃষকদের হয়রানি বন্ধের নির্দেশনাসহ সামনের দিনে কৃষকদের ঋণ পেতে যাতে কোন সমস্যা না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছে। সুর চৌধুরী আরও বলেন, ভবিষ্যতে যাতে কৃষি ঋণ খেলাপি না হয় সে জন্য নজরদারির পাশাপাশি কৃষকদের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধিতে কাজ করতে বলা হয়েছে। আর যারা ভাল করবে তাদেরকে পুরস্কার দেয়ার মতো পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কৃষকরা যে ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোন ধরনের সহায়তা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কৃষকের কাছে সবচেয়ে বেশি বকেয়া আছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। এ পর্যন্ত ব্যাংকটির কৃষি ঋণ খেলাপির পরিমাণ ২৬৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ জন্য ব্যাংকটি মামলা করেছে ৯১ হাজার ৮৭২ জন কৃষকের বিরুদ্ধে। গড়ে প্রতি কৃষকের কাছে ব্যাংকটির পাওনার পরিমাণ ২৯ হাজার ৩৩৭ টাকা। কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এ পর্যন্ত ব্যাংকটি ৫৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার জন্য মামলা করেছে সাড়ে ৩৪ হাজার কৃষকের বিরুদ্ধে। প্রতি কৃষকের কাছে গড়ে ব্যাংকটির পাওনা ১৫ হাজার ৫৭১ টাকা। ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাওনা আদায়ে ২১ হাজার ৭০৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সোনালী ব্যাংক। গড়ে একজন কৃষকের কাছে তাদের পাওনা ২৪ হাজার ৬৫১ টাকা। ৪৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা আদায়ের জন্য জনতা ব্যাংক মামলা করেছে ২০ হাজার ৪৮৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে। কৃষক প্রতি ব্যাংকটির পাওনা ২৩ হাজার ৩৪ টাকা। আঞ্চলিক ব্যাংক রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মামলা করেছে ৪৫ হাজার ১৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে। তাদের কাছে পাওনা ১৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা। গড়ে পাওনা ৪৫ হাজার ১৩৭ টাকা। কৃষকের কাছে রূপালী ব্যাংকের পাওনা ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ব্যাংকের পক্ষ থেকে ৩ হাজার ১৯৫টি মামলা করা হয়েছে। গড়ে ১১ হাজার ৯৫৬ টাকার জন্য মামলা করেছে ব্যাংকটি।
×